আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক অভিযান
ইসরায়েলের নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় গাজার উদ্দেশ্যে যাওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ (GSF) এর কয়েকটি জাহাজ আটক করেছে। বুধবার রাতে স্থানীয় সময় এই অভিযান চালানো হয়। সংগঠকদের দাবি, ‘আলমা’, ‘সিরিয়াস’, ও ‘আদারা’ নামের জাহাজগুলোকে অবৈধভাবে আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী।
এই বহর ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বেসামরিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য ছিল গাজার ওপর ইসরায়েলের নৌ অবরোধ চ্যালেঞ্জ করা। বহরে ছিল মানবিক সহায়তা ও প্রায় ৫০০ জন প্রভাবশালী কর্মী—যাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক, অধ্যাপক ও মানবাধিকারকর্মীরা ছিলেন, ৪০টিরও বেশি দেশ থেকে।
ইউরোপজুড়ে ক্ষোভ ও বিক্ষোভ
ইসরায়েলের এই অভিযানের পর ইউরোপের নানা শহরে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়।
- ইতালির নেপলসে বিক্ষোভকারীরা কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনে ঢুকে লাইন অবরোধ করে। রোম ও তুরিন শহরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কয়েকটি শ্রমিক ইউনিয়ন।
- স্পেনের বার্সেলোনায় কয়েকশ মানুষ ইসরায়েলি কনসুলেটের সামনে জড়ো হয়ে নিন্দা জানায় এবং গাজার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
- বার্লিন, ব্রাসেলস ও লন্ডনেও একই ধরনের আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় সরকারগুলোর প্রতিক্রিয়া
বুধবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানায়।
- পর্তুগাল জানায়, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে তাদের সংসদের একজন সদস্যও আছেন।
- ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রোসেত্তো এটিকে কঠোরভাবে নিন্দা করেন, কারণ জাহাজে ইতালির নাগরিকরাও ছিলেন।
- ফ্রান্স ও স্পেনও উদ্বেগ জানিয়ে ইসরায়েলের কাছে তাদের নাগরিকদের কনসুলার সুরক্ষা ও দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
ইউরোপের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
চীনা একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের গবেষক হে ঝিগাও বলেন, ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে নমনীয় অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তার কারণে এখন সরাসরি ইসরায়েলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইউরোপ কীভাবে অবস্থান নেবে, তা শুধু মহাদেশের স্থিতিশীলতাকেই নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও ইউরোপের ভূমিকা নির্ধারণ করবে।
বহরের বার্তা
প্রগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনালের সমন্বয়ক ডেভিড অ্যাডলার, যিনি এই বহরে আছেন, জানান—তাদের বহর ইসরায়েলি নৌবাহিনীর দ্বারা বারবার হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা প্রতিরোধ করবে না, শান্তিপূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার করিডর চালু রাখাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
অ্যাডলারের মতে, তারা শুধু গাজায় একবার সাহায্য পৌঁছে দিয়ে ফিরতে চান না। বরং স্থায়ী সমুদ্রপথ তৈরি করতে চান, যেখানে রাষ্ট্রগুলো একযোগে মানবিক সহায়তা পাঠাতে পারবে এবং গাজার প্রকৃত চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
জাতিসংঘে চীনের আহ্বান
জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং বুধবার সাধারণ পরিষদের বৈঠকে গাজায় মানবিক বিপর্যয় বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চীন সব ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জরুরি ভিত্তিতে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে।