স্কারলেট জোহানসনের নতুন পথচলা
হলিউড তারকা স্কারলেট জোহানসন এবার ক্যামেরার পেছনে। তাঁর পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘এলেনর দ্য গ্রেট’। ছবিটি তৈরির পেছনে অনুপ্রেরণা এসেছে তাঁর দাদীর স্মৃতি ও নিজস্ব ইহুদি শেকড় থেকে।
ছবির কাহিনি
এই গল্পের কেন্দ্রবিন্দু ননেজেনেরিয়ান (৯০ বছরের ঊর্ধ্বে) নারী এলেনর। নিউ ইয়র্কে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এলেনর (অভিনয়ে জুন স্কুইব, বয়স ৯৫) ফ্লোরিডায় বহু বছর কাটিয়ে আবার মেয়ের কাছে নিউ ইয়র্কে ফিরে আসেন। একদিন তিনি ভুল করে একটি হলোকাস্ট বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের গ্রুপে ঢুকে পড়েন এবং নিজেকে তাদের একজন বলে গল্প বানিয়ে বসেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী নিনার (এরিন কেলিম্যান, বয়স ২৬)। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে আন্তঃপ্রজন্ম বন্ধুত্ব।
অভিনয়শিল্পী ও চরিত্র
- জুন স্কুইব: অস্কার মনোনীত এই অভিনেত্রী ২০১৪ সালে ‘নেব্রাস্কা’ ছবির জন্য খ্যাতি পান। সাম্প্রতিক ছবিগুলোর সাফল্য তাঁকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।
- এরিন কেলিম্যান: ব্রিটিশ নবাগত এই অভিনেত্রী নিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
- রিটা জোহর: ইসরায়েলি অভিনেত্রী ও হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, এলেনরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বেসির ভূমিকায়।
ব্যক্তিগত স্মৃতি ও নির্মাণ প্রক্রিয়া
জোহানসন নিউ ইয়র্কের সন্তান। ২০১৭ সালে তিনি জানতে পারেন তাঁর এক আত্মীয় ও তাঁর সন্তানরা ওয়ারশ গেটোতে নিহত হয়েছিলেন। এরপর তিনি ইউএসসি শোয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বাস্তব জীবনের কিছু হলোকাস্ট বেঁচে থাকা মানুষকে চলচ্চিত্রে যুক্ত করেন। তাঁদের মুখ, গল্প ও অভিজ্ঞতা ছবিতে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।
এই চলচ্চিত্রটি তিনি উৎসর্গ করেছেন তাঁর মাতামহীকে।
ছবির অন্তর্নিহিত ভাবনা
‘এলেনর দ্য গ্রেট’-এ বারবার উঠে এসেছে শোক, ক্ষতি এবং প্রিয়জন হারানোর অভিজ্ঞতা। স্কারলেট জোহানসনের ভাষায়, মৃত্যুশোক এমন এক অভিজ্ঞতা যা সবাই পায়, কিন্তু সমাজে এ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হয় না। ছবিটি সেই নীরবতাকে ভাঙার চেষ্টা করেছে।
জুন স্কুইব শুটিংয়ে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যুক্ত করেছেন। স্বামীর মৃত্যুর সময় নিজের চেয়ে ছেলের শোক সামলাতে বেশি ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
নিউ ইয়র্কের প্রেক্ষাপট
ছবির শুটিং হয়েছে শীতকালে। জোহানসনের মতে, নিউ ইয়র্কের সেই মলিন, ছুটির পরের নিরানন্দ চেহারা গল্পের বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই। শহরের ভিড়, আকস্মিক সাক্ষাৎ আর সম্পর্কের উত্থান-পতন এখানে গল্পের গতি তৈরি করেছে।
দাদী ও স্মৃতির শক্তি
জোহানসন তাঁর দাদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। কৈশোরে দাদীর বাসাই ছিল তাঁর নিরাপদ আশ্রয়। তাঁরা একসঙ্গে শহরের নানা জায়গা ঘুরে দেখতেন, শিল্পকলা উপভোগ করতেন, সবকিছু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতেন। সেই স্মৃতি থেকেই ছবির অনেক কথোপকথন অনুপ্রাণিত।
আড্ডা, গসিপ আর বন্ধুত্ব
শুটিংয়ের সময় গসিপও ছিল দলের অংশ। জুন স্কুইব বলেন, তাঁর নিজের দাদী এখনও গসিপে বেঁচে আছেন। কেলিম্যান হাসতে হাসতে জানান, তিনিও আর জুনও বেশ আড্ডাবাজ।
হলোকাস্ট বেঁচে থাকা মানুষদের উপস্থিতি
ছবিতে বাস্তব হলোকাস্ট বেঁচে থাকা মানুষদের অংশগ্রহণে আলাদা আবহ তৈরি হয়েছে। তাঁদের মুখের ছবি, অভিব্যক্তি ও অভিজ্ঞতা চলচ্চিত্রকে বিশেষ আবেগ দিয়েছে।
সত্য বনাম কল্পনার গল্প
এলেনর মিথ্যা গল্প বানালেও তা কারও ক্ষতি করে না। বরং তা তাঁর নিজের শক্তি ও অন্যদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। স্কুইব বলেন, ছোটবেলায় তিনিও প্রায়ই কাজ পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলতেন। কেলিম্যান স্বীকার করেন, মজা করার জন্য মিথ্যা বলতেন তিনিও।
প্রজন্মের ভেতর বন্ধুত্ব
জোহানসনের মতে, প্রজন্মের পার্থক্যের মধ্যেও বন্ধুত্ব অমূল্য। ছোটরা শেখে বড়দের কাছ থেকে, আর বড়রা অনুপ্রেরণা পান নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। কেলিম্যান বলেন, দাদা-ই তাঁর সেরা বন্ধুদের একজন।
টিকে থাকার শক্তি
শিল্পে দীর্ঘ সময় কাজ করতে চাইলে শারীরিক ও মানসিক সহনশীলতা জরুরি। স্কুইব বলেন, “শিল্প সবসময়ই আপনার সর্বোচ্চ শক্তি দাবি করে।” জোহানসনের মতে, অভিনয়ে সহনশীলতা মানে যেকোনো পরিস্থিতিতে হঠাৎ প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা।
কেলিম্যান বলেন, ৯৫ বছর বয়সেও জুন স্কুইব যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তা নতুনদের জন্য বিশাল প্রেরণা।