০৩:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

হামাস-ইসরায়েল গাজা আলোচনা শুরু, যুদ্ধবিরতির আশায় ট্রাম্প

যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নতুন গতি

গাজায় হামাসের কর্মকর্তারা রবিবার মিশরে পৌঁছেছেন, যেখানে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় বিষয়ে আলোচনা করবেন। এই বৈঠক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কূটনীতিকরা আশাবাদী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, আগামী কয়েক দিন গাজা শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা, যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার, সোমবার মিশরে যোগ দেবেন এই আলোচনায়। এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতাপ্রচেষ্টার একটি অংশ, যার লক্ষ্য প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানো।

বন্দি বিনিময় ও শান্তির ইঙ্গিত

ট্রাম্প রবিবার জানিয়েছেন, আলোচনায় দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি এক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘প্রথম ধাপ এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হতে চলেছে, এবং আমি সবাইকে দ্রুত এগোতে বলছি।’ প্রথম ধাপে বন্দিদের মুক্তি পাবে এবং পাল্টা হিসেবে কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিদেরও মুক্তি দেওয়া হবে।

এটি হামাসের প্রথম মিশর সফর, যেখানে দলটির নেতা খালিল আল-হাইয়া অংশ নিচ্ছেন। হামাস শুক্রবার বন্দি বিনিময়ের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে, যদিও অস্ত্র ত্যাগের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ট্রাম্প বলেছেন, হামাস এখন ‘স্থায়ী শান্তির’ জন্য প্রস্তুত।

আলোচনার নতুন ধাপ ও বাস্তবতা

মিশরে আলোচনা চলবে একটি বিস্তৃত চুক্তির খসড়া তৈরির জন্য, যা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগেই শেষ করতে হবে। এটি আগের ধাপভিত্তিক আলোচনার তুলনায় একটি পূর্ণাঙ্গ সমঝোতার প্রচেষ্টা।

তবে গাজায় সহিংসতা এখনো থামেনি। রবিবার ইসরায়েলি বিমান ও ট্যাংকের হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চল ও গাজা সিটির বিভিন্ন স্থানে হামলা অব্যাহত রয়েছে।

আহমেদ আসাদ নামের এক উদ্বাস্তু বলেন, ‘ট্রাম্পের পরিকল্পনার কথা শুনে কিছুটা আশাবাদী হয়েছিলাম, কিন্তু মাটিতে বাস্তব পরিবর্তন এখনো হয়নি।’

ইসরায়েলে অর্থনৈতিক আশাবাদ

ইসরায়েলে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা ঘিরে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। ইসরায়েলি মুদ্রা শেকেল তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মানে পৌঁছেছে এবং তেল আবিবের শেয়ারবাজার নতুন উচ্চতায় উঠেছে। অনেক নাগরিকের মতে, দীর্ঘদিন পর প্রথমবারের মতো তারা সত্যিই শান্তির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন।

রাজনৈতিক চাপ ও চ্যালেঞ্জ

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে যুদ্ধ শেষ করার অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছেন। তার জোট সরকারের ডানপন্থী মন্ত্রীরা, যেমন বেজালেল স্মোট্রিচ ও ইতামার বেন-গভির, যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করছেন। তবে বিরোধী নেতা ইয়ায়ির ল্যাপিড জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের উদ্যোগ সফল করতে রাজনৈতিক সমর্থন দেবেন, যাতে কোনো পক্ষই চুক্তি বাধাগ্রস্ত করতে না পারে।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

ইসরায়েল ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন বন্দি হন। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৭,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক।

#গাজা_আলোচনা #হামাস #ইসরায়েল #যুদ্ধবিরতি #ট্রাম্প #শান্তিচুক্তি

জনপ্রিয় সংবাদ

হামাস-ইসরায়েল গাজা আলোচনা শুরু, যুদ্ধবিরতির আশায় ট্রাম্প

০১:০৪:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নতুন গতি

গাজায় হামাসের কর্মকর্তারা রবিবার মিশরে পৌঁছেছেন, যেখানে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় বিষয়ে আলোচনা করবেন। এই বৈঠক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কূটনীতিকরা আশাবাদী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, আগামী কয়েক দিন গাজা শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা, যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার, সোমবার মিশরে যোগ দেবেন এই আলোচনায়। এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতাপ্রচেষ্টার একটি অংশ, যার লক্ষ্য প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানো।

বন্দি বিনিময় ও শান্তির ইঙ্গিত

ট্রাম্প রবিবার জানিয়েছেন, আলোচনায় দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি এক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘প্রথম ধাপ এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হতে চলেছে, এবং আমি সবাইকে দ্রুত এগোতে বলছি।’ প্রথম ধাপে বন্দিদের মুক্তি পাবে এবং পাল্টা হিসেবে কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিদেরও মুক্তি দেওয়া হবে।

এটি হামাসের প্রথম মিশর সফর, যেখানে দলটির নেতা খালিল আল-হাইয়া অংশ নিচ্ছেন। হামাস শুক্রবার বন্দি বিনিময়ের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে, যদিও অস্ত্র ত্যাগের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ট্রাম্প বলেছেন, হামাস এখন ‘স্থায়ী শান্তির’ জন্য প্রস্তুত।

আলোচনার নতুন ধাপ ও বাস্তবতা

মিশরে আলোচনা চলবে একটি বিস্তৃত চুক্তির খসড়া তৈরির জন্য, যা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগেই শেষ করতে হবে। এটি আগের ধাপভিত্তিক আলোচনার তুলনায় একটি পূর্ণাঙ্গ সমঝোতার প্রচেষ্টা।

তবে গাজায় সহিংসতা এখনো থামেনি। রবিবার ইসরায়েলি বিমান ও ট্যাংকের হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চল ও গাজা সিটির বিভিন্ন স্থানে হামলা অব্যাহত রয়েছে।

আহমেদ আসাদ নামের এক উদ্বাস্তু বলেন, ‘ট্রাম্পের পরিকল্পনার কথা শুনে কিছুটা আশাবাদী হয়েছিলাম, কিন্তু মাটিতে বাস্তব পরিবর্তন এখনো হয়নি।’

ইসরায়েলে অর্থনৈতিক আশাবাদ

ইসরায়েলে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা ঘিরে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। ইসরায়েলি মুদ্রা শেকেল তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মানে পৌঁছেছে এবং তেল আবিবের শেয়ারবাজার নতুন উচ্চতায় উঠেছে। অনেক নাগরিকের মতে, দীর্ঘদিন পর প্রথমবারের মতো তারা সত্যিই শান্তির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন।

রাজনৈতিক চাপ ও চ্যালেঞ্জ

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে যুদ্ধ শেষ করার অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছেন। তার জোট সরকারের ডানপন্থী মন্ত্রীরা, যেমন বেজালেল স্মোট্রিচ ও ইতামার বেন-গভির, যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করছেন। তবে বিরোধী নেতা ইয়ায়ির ল্যাপিড জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের উদ্যোগ সফল করতে রাজনৈতিক সমর্থন দেবেন, যাতে কোনো পক্ষই চুক্তি বাধাগ্রস্ত করতে না পারে।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

ইসরায়েল ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন বন্দি হন। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৭,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক।

#গাজা_আলোচনা #হামাস #ইসরায়েল #যুদ্ধবিরতি #ট্রাম্প #শান্তিচুক্তি