পাঞ্জাব সরকারের ঐতিহ্য ও পর্যটন পুনরুদ্ধার উদ্যোগ
পাঞ্জাব সরকার ১.৫ বিলিয়ন রুপি ব্যয়ে একটি ঐতিহ্য এবং পর্যটন পুনরুদ্ধার প্রকল্প শুরু করেছে, যা প্রদেশের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যকে আধুনিক উন্নয়নের সঙ্গে সংযুক্ত করার লক্ষ্য রাখে। টুরিজম ডিপার্টমেন্ট এবং আর্কিওলজি ডিরেক্টরেট জেনারেল এর যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্পটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর অন্যতম বৃহত্তম ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার কর্মসূচি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে জাদুঘর সংস্কার, প্রত্নতাত্ত্বিক সম্প্রসারণ এবং নতুন সাংস্কৃতিক গন্তব্য তৈরি করা হবে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল সমাজের অগ্রগতির প্রকৃত সূচক হিসেবে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সংরক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া, এবং পাঞ্জাবের বহুস্তরীণ অতীতের সঙ্গে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা পুনরুদ্ধার করা। এছাড়াও, এটি পাঞ্জাবের বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক কূটনীতি শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।
নতুন জাদুঘরের নির্মাণ ও সংস্কার
প্রকল্পের অধীনে পাঞ্জাবের বিভিন্ন জেলার মধ্যে নতুন জাদুঘর তৈরি করা হচ্ছে, যাতে পাঞ্জাবের বিভিন্ন ইতিহাস তুলে ধরা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে সিয়ালকোট জাদুঘর, যা বর্তমানে প্রাক্কলন পর্যায়ে রয়েছে এবং অক্টোবর ৩, ২০২৫ থেকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। মুলতান জাদুঘর, যার ব্যয় ১১১.৭ মিলিয়ন রুপি, জুলাই ২০২১-এ উদ্বোধন করা হয়েছিল এবং জুন ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। হাফিজাবাদ জাদুঘর, যা ৯৬ মিলিয়ন রুপি ব্যয়ে আগস্ট ২০২২ থেকে শুরু হয়েছে, ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে শেষ হবে। তাছাড়া, ট্যাক্সিলা জাদুঘরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প, যার বাজেট ৫১১.৯ মিলিয়ন রুপি, ২০২৫ থেকে ২০২৭ এর মধ্যে শেষ হবে। কাসুর জাদুঘরের উন্নয়ন কাজ অক্টোবর ২০২৫ থেকে শুরু হবে, এবং রোথাস ফোর্ট জাদুঘরের সম্প্রসারণ, যার বাজেট ৩৮.৮৬ মিলিয়ন রুপি, নভেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত চলবে। এছাড়াও, জাভেদ মঞ্জিল জাদুঘরের পুনর্বাসন, যার জন্য ২০০ মিলিয়ন রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে, ও সামিট মিনার লাইব্রেরি এবং জাদুঘরের সংস্কার কাজের জন্য ৫২৪.৯৫ মিলিয়ন রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে।
শেখুপুরা হিরণ মিনারের উন্নয়ন
এছাড়া, শেখুপুরা শহরের হিরণ মিনারকে একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে। পরিবেশগত স্থিতিশীলতা এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের সঙ্গে এটি পর্যটনকে উন্নত করবে। চাঙ্গা মঙ্গা থেকে স্থানান্তরিত ৪০টি হরিণ ও নীল বাইল সহ একটি মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হবে। তাছাড়া, ৩ কিলোমিটার জঙ্গলের রাইড এবং নতুন নৌকা ও ভাসমান রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে পর্যটকদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করা হবে। এছাড়াও, ডারবার ওয়ারিস শাহ এবং হিরণ মিনারের মধ্যে একটি দ্বৈত স্তরের সাইটসিং রুট তৈরি করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে জান্দিয়ালা শের খান বাওলি এবং শেখুপুরা ফোর্ট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন
শেখুপুরা আর্টস কাউন্সিলের সহযোগিতায়, ডারবার ওয়ারিস শাহে হীর গাওয়ার এবং হিরণ মিনারে লোকগীতির সন্ধ্যা আয়োজন করা হবে, যা পাঞ্জাবের মৌখিক ঐতিহ্যকে উদযাপন করবে। একটি BBQ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে, যা দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করবে। এই বহুমুখী কর্মসূচি পাঞ্জাব সরকারের সাংস্কৃতিক, পর্যটন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ক্ষেত্রে একীভূত উন্নয়নের একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য
এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধুমাত্র ঐতিহাসিক সম্পদ সংরক্ষণ করা হবে না, বরং নতুন পর্যটন করিডোর তৈরি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং যুবকদের জন্য শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগও বৃদ্ধি পাবে। পাঞ্জাব সরকারের টুরিজম সেক্রেটারি ড. এহসান ভূট্টা জানান, “পাঞ্জাবের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমাদের জীবন্ত পরিচয়। জাদুঘর সংস্কার ও পর্যটন করিডোর উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ করছি না, আমরা সম্প্রদায়গুলিকে তাদের ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত করছি, জীবনযাপন সৃষ্টি করছি এবং পাকিস্তানের আধুনিক ও আত্মবিশ্বাসী চিত্র বিশ্বে উপস্থাপন করছি