পশ্চিম সুদানে যুদ্ধের ভয়াবহতা: ডা. ওমর সেলিকের শেষ দিন
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সুদানের গৃহযুদ্ধের পর, পশ্চিম সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল ফাশের শহরে যুদ্ধ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেখানে কাজ করা একমাত্র স্বাস্থ্যকর্মী ডা. ওমর সেলিক তাদের সংগ্রাম এবং সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
এল ফাশের শহরের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে ডা. সেলিক মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শহরটি দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ ছিল, এবং সেখানে প্রায় এক কোটি মানুষের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। ডা. সেলিকের এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন যে, এক গর্ভবতী নারী চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন এবং তা ছিল তার কাছে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক মুহূর্ত। একসময় তিনি তার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাথে কথা বলছিলেন, কিন্তু তারপর তিনি তার ক্যামেরা চালু করেন এবং খুশির সাথে বলেছিলেন, “এটা আমার জন্য একটি ভাল দিন,” যেন একটু শান্তি পেয়েছিলেন।
খাদ্যাভাব এবং অসহায় জীবন
যুদ্ধের কারণে, শহরের অধিকাংশ বাসিন্দারা খাবার এবং অন্যান্য মৌলিক জিনিসের অভাবে জীবনযাপন করছে। ডা. সেলিক একটি প্লেটে ক্ষুদ্র মাংসের টুকরা নিয়ে তাকে দেখানোর পর তিনি বলেন, এটি সাধারণত গবাদি পশুর খাবার, কিন্তু এখন এটি এল ফাশেরের মানুষের প্রধান খাদ্য। শহরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, একদিকে যুদ্ধের ধ্বংস, অন্যদিকে ভুখা মানুষের কষ্ট।
ডা. সেলিকের মৃত্যু
কিছুদিন পরে, ডা. সেলিক তার প্রার্থনা করতে মসজিদে যান। সেখানে একটি মিসাইল আছড়ে পড়লে প্রায় ৭৫ জন মানুষ প্রাণ হারান। ডা. সেলিকও তাদের মধ্যে ছিলেন। এই আক্রমণটি বিশেষভাবে ভয়াবহ ছিল, যেখানে ড্রোনের মাধ্যমে মিসাইল ছোঁড়া হয়েছিল, যা আরব আমিরাতের সহায়তায় আরএসএফ (র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স) বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সাহায্যের আশা
এল ফাশেরের অবস্থা এতটাই সংকটজনক যে, শহরটির বাসিন্দারা মনে করেন বাইরের পৃথিবী তাদেরকে পরিত্যাগ করেছে। তবে, কিছু সাহায্য আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফ্রিকা বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা মাসাদ বুলোস আরএসএফের সাথে আলোচনা করছেন যাতে আন্তর্জাতিক সাহায্য এল ফাশের পৌঁছাতে পারে।
বিশ্বের অনেক সরকার এবং সাহায্য সংস্থা এই সংকটের সমাধানে পদক্ষেপ নিতে চায়, তবে এখনও পরিষ্কার নয় কিভাবে এই সাহায্য পৌছানো এবং বিতরণ করা হবে।
শহরের অবস্থা
ডা. সেলিকের সহকর্মীরা এবং সাহায্যকর্মীরা জানাচ্ছেন যে, এল ফাশের খুব শিগগিরই আরএসএফ বাহিনীর দখলে চলে যেতে পারে, এবং এর ফলে একটি নতুন গণহত্যা হতে পারে। ২০২৩ সালের শেষদিকে পশ্চিম দারফুরের এল জেনিনায় আরএসএফের হামলায় ১৫,০০০人的 প্রাণহানি ঘটে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি বড় শঙ্কা।
এদিকে, আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিকও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে, এই মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ কোনোভাবেই চলতে দেওয়া উচিত নয়।