ভারতের নির্বাচন কমিশন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে একযোগে ১৭টি নতুন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে—যা শুধু বিহারে নয়, ভবিষ্যতে সারাদেশে বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্যানেশ কুমার। এই উদ্যোগগুলির লক্ষ্য ভোট প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, নিরাপদ ও সহজলভ্য করা।
ইভিএমে রঙিন ছবি, বড় ফন্টে প্রার্থী পরিচয়
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে ভোটযন্ত্রে—বিহার হবে ভারতের প্রথম রাজ্য, যেখানে ইভিএম ব্যালটে প্রার্থীর রঙিন ছবি থাকবে। এতদিন সাদা-কালো ছবির কারণে প্রার্থী শনাক্তে অনেক সময় অসুবিধা হতো। এখন থেকে বড় ফন্টে সিরিয়াল নম্বর ও রঙিন ছবি দিয়ে প্রার্থীর নাম স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “বিহার থেকেই শুরু হচ্ছে এই পরিবর্তন। পরবর্তী সময়ে এটি সারাদেশের ইভিএম ব্যালটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
১২০০ ভোটার প্রতি কেন্দ্রে, নতুন বুথ ১২,৮১৭টি
ভোটারদের জন্য লাইনের দৈর্ঘ্য কমাতে ও প্রবেশাধিকারে সহজতা আনতে প্রতি বুথে ভোটারের সর্বোচ্চ সংখ্যা ১৫০০ থেকে কমিয়ে ১২০০ জন নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বিহারে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১২,৮১৭টি বুথ, মোট বুথসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০,৭১২।
আইডি কার্ড ও মোবাইল জমা ব্যবস্থা
বুথ-স্তরের কর্মকর্তারা এখন থেকে বহন করবেন সরকারি পরিচয়পত্র, যাতে ভোটাররা সহজে তাদের চিনতে পারেন। ভোটারদের মোবাইল ফোন বুথের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে জমা রাখতে হবে, যাতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
ওয়েবকাস্টিং ও গণনার স্বচ্ছতা
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে থাকবে শতভাগ ওয়েবকাস্টিং ব্যবস্থা—যাতে প্রতিটি ভোট পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং ভোটদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি গণনার নিয়মেও এসেছে পরিবর্তন—এখন ডাক ভোট গণনা শেষ দুই রাউন্ডের আগে সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক হবে। ফর্ম ১৭সি ও ইভিএমের সংখ্যায় অমিল থাকলে সংশ্লিষ্ট সব ভিভিপ্যাট পুনরায় গণনা করা হবে।
বিহার নির্বাচন ২২ নভেম্বরের আগে সম্পন্ন হবে
গ্যানেশ কুমার জানিয়েছেন, ২৪ জুন শুরু হওয়া ভোটার তালিকার বিশেষ পুনর্বিবেচনা (SIR) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে ২২ নভেম্বর ২০২৫, তার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।
তিনি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান—“গণতন্ত্রের এই উৎসবকে ছট পূজার মতো উৎসাহে উদ্যাপন করুন। সকলে ভোট দিন এবং নিজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন।”
এই ঘোষণার একদিন আগেই বিহারের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে জানায়, তারা চায় ছট উৎসবের পরপরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
চলতি সংস্কারগুলোর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন শুধু বিহার নয়, ভারতের সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও নাগরিকবান্ধব করার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।