০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি: “রেড লাইন” রেখেছে জয়শঙ্কর, বললেন ‘অন্তত এক সমঝোতার জায়গা’ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চলছে

বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর শুক্রবার কৌটিল্য ইকোনমিক কনক্লেভ ২০২৫ এ ভাষণ দেন। সেখানে তিনি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় ‘রেড লাইন’ (নির্ধারিত সীমা) রক্ষা করতে হবে বলে জানান। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনা এখনো এমন এক সমঝোতার সঙ্গে পৌঁছায়নি যাকে “ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড” বলা যায়। জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, এ পর্যন্ত ভারতের পক্ষে ধার্য করা শুল্ক “অন্যায়” এবং রাশিয়ার তেল ক্রয়ে আমদানিতে যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেতিও অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি।

নিচে বিষয়গুলো সারমর্ম ও বিশ্লেষণসহ তুলে ধরা হলো —


আলোচনা ও অগ্রগতি: ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের সন্ধান

  • জয়শঙ্কর স্পষ্ট করেন, “আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমস্যা রয়েছে — মূলত যে আমরা এখনো বাণিজ্য আলোচনায় একটি ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডে পৌঁছাতে পারিনি। এর ফলে আমাদের ওপর কিছু শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা আমরা জনসমক্ষে বলেছি — ‘অন্যায়’।”
  • তিনি আরও বলেন, একটি দ্বিতীয় শুল্ক রাশিয়া থেকে শক্তি উৎস সংগ্রহকে কেন্দ্র করে আরোপ হয়েছে। অথচ এমনকি রাশিয়ার সঙ্গে বেশি শত্রুসম্পর্ক থাকা দেশগুলোর ক্ষেত্রেও এ ধরনের শুল্ক আরোপ হয়নি।
  • এসব বিষয় সমাধান করতে হবে, এবং ভারত সেগুলো “সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে” — এমন বার্তাও দেন জয়শঙ্কর।

গ্লোবাল ভবিষ্যত: শাস্তি, অস্ত্রীকরণ ও প্রতিযোগিতা

  • তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ধরণ পুরোপুরি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে; সার্বভৌম সম্পদ জব্দের ঘটনা ঘটেছে।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থান, বিরল মাটির অন্বেষণ ও যে গ্রহাণু খনিজ (critical minerals) সেসব বড় ভূমিকা নিচ্ছে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে — সবকিছুকে “অস্ত্রীকরণ” করার প্রবণতা বেড়েছে।
  • জয়শঙ্কর আরও উল্লেখ করেন, শক্তি ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে কিছু প্রধান শক্তি দেশগুলোর বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারা মনে করে হয়তো তারা এখন আগের চেয়ে বিশ্বকে কম প্রয়োজন মনে করে — ফলে তারা তাদের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে নির্দ্বিধায় শক্তি প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।
  • তিনি বারবার বলেন, “বিশ্বব্যাপী সুতোটি এখন অনেক বেশি প্রতিযোগিতার দিকে যাচ্ছে।” এবং এ কারণেই অনেক কিছুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে বাধা কম।

শক্তি কৌশল ও পথ পরিবর্তন

  • জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকালের জন্য বাইরের শক্তি আমদানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। কিন্তু এখন তারা নিজে পর্যাপ্ত ক্ষমতা অর্জন করেছে, তেল ও গ্যাস রপ্তানিতেও সক্রিয়। এবং এটি তাদের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
  • ঠিক একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্র জীবাশ্ম জ্বালানির পক্ষে ঘাঁটি গড়ে নিয়েছে; অন্যদিকে চীন নবায়নযোগ্য শক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফলে যে পথই নেয়া হোক — নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে সব শেষ পর্যন্ত পৌঁছাবে।

চ্যালেঞ্জ ও রাস্তা সামনে

  • আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের “নিম্নরেখা” বা রেড লাইন সম্মান করার আহ্বান জানাচ্ছেন জয়শঙ্কর।
  • ভারত–যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা চলমান, এবং নির্দিষ্ট চাপে সীমাবদ্ধতা অতিক্রম না করে একটি যুক্তিসমত সমঝোতার দিকে এগোতে হবে।
  • শক্তি নিরাপত্তা, শিল্প খাত তথা কৃষি খাতের স্বার্থ রক্ষা — এসব বিবেচনায় নিয়েই ভারত তার অবস্থান স্থির রাখছে।

যদিও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনায় এখনো স্থায়ী সমঝোতা হয়নি, জয়শঙ্করের বক্তব্য স্পষ্ট — কোনও চুক্তি হলে সেটি ভারতের নির্ধারিত সীমা (রেড লাইন) ছেদ করতে পারবে না। আলোচনায় শক্তি, বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রসঙ্গ মিলিয়ে ভারত সক্রিয়ভাবেই সমাধানের পথ খুঁজছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি: “রেড লাইন” রেখেছে জয়শঙ্কর, বললেন ‘অন্তত এক সমঝোতার জায়গা’ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চলছে

০১:০৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর শুক্রবার কৌটিল্য ইকোনমিক কনক্লেভ ২০২৫ এ ভাষণ দেন। সেখানে তিনি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় ‘রেড লাইন’ (নির্ধারিত সীমা) রক্ষা করতে হবে বলে জানান। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনা এখনো এমন এক সমঝোতার সঙ্গে পৌঁছায়নি যাকে “ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড” বলা যায়। জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, এ পর্যন্ত ভারতের পক্ষে ধার্য করা শুল্ক “অন্যায়” এবং রাশিয়ার তেল ক্রয়ে আমদানিতে যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেতিও অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি।

নিচে বিষয়গুলো সারমর্ম ও বিশ্লেষণসহ তুলে ধরা হলো —


আলোচনা ও অগ্রগতি: ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের সন্ধান

  • জয়শঙ্কর স্পষ্ট করেন, “আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমস্যা রয়েছে — মূলত যে আমরা এখনো বাণিজ্য আলোচনায় একটি ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডে পৌঁছাতে পারিনি। এর ফলে আমাদের ওপর কিছু শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা আমরা জনসমক্ষে বলেছি — ‘অন্যায়’।”
  • তিনি আরও বলেন, একটি দ্বিতীয় শুল্ক রাশিয়া থেকে শক্তি উৎস সংগ্রহকে কেন্দ্র করে আরোপ হয়েছে। অথচ এমনকি রাশিয়ার সঙ্গে বেশি শত্রুসম্পর্ক থাকা দেশগুলোর ক্ষেত্রেও এ ধরনের শুল্ক আরোপ হয়নি।
  • এসব বিষয় সমাধান করতে হবে, এবং ভারত সেগুলো “সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে” — এমন বার্তাও দেন জয়শঙ্কর।

গ্লোবাল ভবিষ্যত: শাস্তি, অস্ত্রীকরণ ও প্রতিযোগিতা

  • তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ধরণ পুরোপুরি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে; সার্বভৌম সম্পদ জব্দের ঘটনা ঘটেছে।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থান, বিরল মাটির অন্বেষণ ও যে গ্রহাণু খনিজ (critical minerals) সেসব বড় ভূমিকা নিচ্ছে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে — সবকিছুকে “অস্ত্রীকরণ” করার প্রবণতা বেড়েছে।
  • জয়শঙ্কর আরও উল্লেখ করেন, শক্তি ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে কিছু প্রধান শক্তি দেশগুলোর বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারা মনে করে হয়তো তারা এখন আগের চেয়ে বিশ্বকে কম প্রয়োজন মনে করে — ফলে তারা তাদের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে নির্দ্বিধায় শক্তি প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।
  • তিনি বারবার বলেন, “বিশ্বব্যাপী সুতোটি এখন অনেক বেশি প্রতিযোগিতার দিকে যাচ্ছে।” এবং এ কারণেই অনেক কিছুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে বাধা কম।

শক্তি কৌশল ও পথ পরিবর্তন

  • জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকালের জন্য বাইরের শক্তি আমদানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। কিন্তু এখন তারা নিজে পর্যাপ্ত ক্ষমতা অর্জন করেছে, তেল ও গ্যাস রপ্তানিতেও সক্রিয়। এবং এটি তাদের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
  • ঠিক একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্র জীবাশ্ম জ্বালানির পক্ষে ঘাঁটি গড়ে নিয়েছে; অন্যদিকে চীন নবায়নযোগ্য শক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফলে যে পথই নেয়া হোক — নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে সব শেষ পর্যন্ত পৌঁছাবে।

চ্যালেঞ্জ ও রাস্তা সামনে

  • আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের “নিম্নরেখা” বা রেড লাইন সম্মান করার আহ্বান জানাচ্ছেন জয়শঙ্কর।
  • ভারত–যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা চলমান, এবং নির্দিষ্ট চাপে সীমাবদ্ধতা অতিক্রম না করে একটি যুক্তিসমত সমঝোতার দিকে এগোতে হবে।
  • শক্তি নিরাপত্তা, শিল্প খাত তথা কৃষি খাতের স্বার্থ রক্ষা — এসব বিবেচনায় নিয়েই ভারত তার অবস্থান স্থির রাখছে।

যদিও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনায় এখনো স্থায়ী সমঝোতা হয়নি, জয়শঙ্করের বক্তব্য স্পষ্ট — কোনও চুক্তি হলে সেটি ভারতের নির্ধারিত সীমা (রেড লাইন) ছেদ করতে পারবে না। আলোচনায় শক্তি, বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রসঙ্গ মিলিয়ে ভারত সক্রিয়ভাবেই সমাধানের পথ খুঁজছে।