০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
মার্কিন বাজারে রপ্তানিতে ছাড় পাওয়ার আশায় সিঙ্গাপুরের ওষুধ শিল্প, আলোচনায় দুই দেশের প্রশাসন ভারতের দক্ষিণে গুগলের ১৫ বিলিয়ন ডলারের এআই বিনিয়োগ ইন্ডিজেনাস পিপলস ডে: উৎসবের পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩০৭) জাপানে ভালুক-দেখা রেকর্ড, দেশজুড়ে নিরাপত্তা উদ্যোগ নেটফ্লিক্সে ‘স্প্লিন্টার সেল: ডেথওয়াচ’—গেমিং আইপি এখন অ্যানিমেশনে ডিডব্লিউটিএস’-এ ‘বয় মিটস ওয়ার্ল্ড’ রিইউনিয়ন উইন্ডোজ ১০ শেষ—কোন ল্যাপটপে আপগ্রেড করবেন, আজকের গাইড বাণিজ্য-উদ্বেগে তেলদাম নিম্নমুখী—সরবরাহ এখনো স্বচ্ছন্দ রকেট’ ভঙ্গির ড্রোনে এক সেন্ট ডেলিভারি—এয়ারবাউন্ডের তহবিল ৮.৬৫ মিলিয়ন

ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি আনা সম্ভব — তাহলে কেন হচ্ছে না

ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি। বিশাল বাজার, তরুণ কর্মশক্তি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দেশটি এখনও প্রত্যাশিত মাত্রায় বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) আকর্ষণ করতে পারছে না। কেন এমন হচ্ছে? এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্লেষণ করেছি বিনিয়োগ প্রবাহের বাস্তবতা, প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাবনার দিকগুলো।

বর্তমান বিনিয়োগ প্রবণতা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে মোট বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলেও “নেট” FDI প্রবাহে ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালে গ্রীনফিল্ড প্রকল্পে প্রায় ৭৭ বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ ঘোষণা হয়েছে, যা ইতিবাচক সংকেত। তবুও, ২০২৫ অর্থবছরে নেট FDI প্রবাহ ৯৬ শতাংশের বেশি কমেছে—রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এই পতন বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।

বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রধান প্রতিবন্ধকতা

আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা
ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আইনি কাঠামো এবং বিনিয়োগ অনুমোদন প্রক্রিয়া এখনো জটিল। অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি কোম্পানিকে “অটোমেটিক রুট”-এর বাইরে গিয়ে সরকারি অনুমোদন নিতে হয়, যা সময় ও ব্যয় বাড়ায়। এছাড়া করনীতি ও “General Anti-Avoidance Rule (GAAR)”–এর মতো বিধান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে।

অবকাঠামোগত দুর্বলতা
রাস্তাঘাট, বন্দর, বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যবস্থায় ঘাটতি এখনো ভারতের বড় সীমাবদ্ধতা। শিল্পাঞ্চল ছাড়া অনেক স্থানে অবকাঠামো দুর্বল, ফলে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ব্যয় ও সরবরাহ চেইন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে।

রাজনৈতিক ও নীতি অনিশ্চয়তা
রাজ্য ও কেন্দ্রের নীতিগত অমিল, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, এবং ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ঝুঁকি তৈরি করে। নীতি ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থতা অনেক সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ প্রকল্পকে নিরুৎসাহিত করছে।

আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা
দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো—যেমন ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ—কম কর, দ্রুত অনুমোদন ও জমি সুবিধা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। তুলনামূলকভাবে ভারতের প্রশাসনিক ধীরগতি এবং নীতি জটিলতা অনেক কোম্পানিকে বিকল্প বাজারে যেতে বাধ্য করছে।

স্থানীয় সামাজিক ও পরিবেশগত বাধা
জমি অধিগ্রহণ, পরিবেশ অনুমোদন ও স্থানীয় বিরোধ ভারতের বড় প্রতিবন্ধকতা। বিশেষ করে কৃষিজমি বা গ্রামীণ এলাকায় শিল্প স্থাপন নিয়ে সামাজিক প্রতিরোধ বাড়ছে। দুর্নীতি, প্রশাসনিক স্বার্থবোধ ও অকার্যকর স্থানীয় আমলাতন্ত্র পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।

সরকারের উদ্যোগ ও পরিবর্তন
ভারত সরকার বিদেশি বিনিয়োগে গতি আনতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বীমা খাতে ১০০ শতাংশ FDI অনুমোদন, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ কমিশন গঠন, এবং ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে অগ্রগতি এদের মধ্যে অন্যতম। পাশাপাশি ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থা (EFTA)-র সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিও হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও (RBI) বাহ্যিক ঋণ গ্রহণের নিয়ম সহজ করতে উদ্যোগ নিচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্য বিনিয়োগ আকর্ষণে কর ছাড়, জমি ইনসেনটিভ ও অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
FDI প্রবাহ হ্রাস সত্ত্বেও ভারত এখনও বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় বাজার। বিশাল জনসংখ্যা, প্রযুক্তি খাতের দ্রুত বিকাশ এবং শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সূচক। তবে এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে সরকারকে প্রশাসনিক সংস্কার, নীতি স্থিতিশীলতা, কর সরলীকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে আরও কার্যকর হতে হবে।


ভারত এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে সামান্য নীতিগত সংস্কার বিদেশি বিনিয়োগের বিশাল প্রবাহ আনতে পারে। আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা কমানো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার উদ্যোগ নিলে দেশটি বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশই হতে পারে ভারতের পরবর্তী অর্থনৈতিক সাফল্যের চাবিকাঠি।

জনপ্রিয় সংবাদ

মার্কিন বাজারে রপ্তানিতে ছাড় পাওয়ার আশায় সিঙ্গাপুরের ওষুধ শিল্প, আলোচনায় দুই দেশের প্রশাসন

ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি আনা সম্ভব — তাহলে কেন হচ্ছে না

০১:১৭:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি। বিশাল বাজার, তরুণ কর্মশক্তি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দেশটি এখনও প্রত্যাশিত মাত্রায় বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) আকর্ষণ করতে পারছে না। কেন এমন হচ্ছে? এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্লেষণ করেছি বিনিয়োগ প্রবাহের বাস্তবতা, প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাবনার দিকগুলো।

বর্তমান বিনিয়োগ প্রবণতা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে মোট বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলেও “নেট” FDI প্রবাহে ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালে গ্রীনফিল্ড প্রকল্পে প্রায় ৭৭ বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ ঘোষণা হয়েছে, যা ইতিবাচক সংকেত। তবুও, ২০২৫ অর্থবছরে নেট FDI প্রবাহ ৯৬ শতাংশের বেশি কমেছে—রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এই পতন বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।

বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রধান প্রতিবন্ধকতা

আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা
ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আইনি কাঠামো এবং বিনিয়োগ অনুমোদন প্রক্রিয়া এখনো জটিল। অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি কোম্পানিকে “অটোমেটিক রুট”-এর বাইরে গিয়ে সরকারি অনুমোদন নিতে হয়, যা সময় ও ব্যয় বাড়ায়। এছাড়া করনীতি ও “General Anti-Avoidance Rule (GAAR)”–এর মতো বিধান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে।

অবকাঠামোগত দুর্বলতা
রাস্তাঘাট, বন্দর, বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যবস্থায় ঘাটতি এখনো ভারতের বড় সীমাবদ্ধতা। শিল্পাঞ্চল ছাড়া অনেক স্থানে অবকাঠামো দুর্বল, ফলে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ব্যয় ও সরবরাহ চেইন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে।

রাজনৈতিক ও নীতি অনিশ্চয়তা
রাজ্য ও কেন্দ্রের নীতিগত অমিল, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, এবং ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ঝুঁকি তৈরি করে। নীতি ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থতা অনেক সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ প্রকল্পকে নিরুৎসাহিত করছে।

আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা
দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো—যেমন ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ—কম কর, দ্রুত অনুমোদন ও জমি সুবিধা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। তুলনামূলকভাবে ভারতের প্রশাসনিক ধীরগতি এবং নীতি জটিলতা অনেক কোম্পানিকে বিকল্প বাজারে যেতে বাধ্য করছে।

স্থানীয় সামাজিক ও পরিবেশগত বাধা
জমি অধিগ্রহণ, পরিবেশ অনুমোদন ও স্থানীয় বিরোধ ভারতের বড় প্রতিবন্ধকতা। বিশেষ করে কৃষিজমি বা গ্রামীণ এলাকায় শিল্প স্থাপন নিয়ে সামাজিক প্রতিরোধ বাড়ছে। দুর্নীতি, প্রশাসনিক স্বার্থবোধ ও অকার্যকর স্থানীয় আমলাতন্ত্র পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।

সরকারের উদ্যোগ ও পরিবর্তন
ভারত সরকার বিদেশি বিনিয়োগে গতি আনতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বীমা খাতে ১০০ শতাংশ FDI অনুমোদন, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ কমিশন গঠন, এবং ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে অগ্রগতি এদের মধ্যে অন্যতম। পাশাপাশি ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থা (EFTA)-র সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিও হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও (RBI) বাহ্যিক ঋণ গ্রহণের নিয়ম সহজ করতে উদ্যোগ নিচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্য বিনিয়োগ আকর্ষণে কর ছাড়, জমি ইনসেনটিভ ও অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
FDI প্রবাহ হ্রাস সত্ত্বেও ভারত এখনও বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় বাজার। বিশাল জনসংখ্যা, প্রযুক্তি খাতের দ্রুত বিকাশ এবং শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সূচক। তবে এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে সরকারকে প্রশাসনিক সংস্কার, নীতি স্থিতিশীলতা, কর সরলীকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে আরও কার্যকর হতে হবে।


ভারত এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে সামান্য নীতিগত সংস্কার বিদেশি বিনিয়োগের বিশাল প্রবাহ আনতে পারে। আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা কমানো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার উদ্যোগ নিলে দেশটি বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশই হতে পারে ভারতের পরবর্তী অর্থনৈতিক সাফল্যের চাবিকাঠি।