বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে উত্তাল মাদাগাস্কার। সরকারের পতনের পর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশটির সেনা জেনারেল রুফিন ফরচুনাট জাফিসাম্বোকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। রাজধানী আন্তানানারিভোসহ বিভিন্ন শহরে চলছে বিক্ষোভ, যার কেন্দ্রবিন্দুতে দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা।
সরকারের পতনের পর নতুন নেতৃত্বে সেনা কর্মকর্তা
মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেনাবাহিনীর জেনারেল রুফিন ফরচুনাট জাফিসাম্বোকে নিয়োগ দিয়েছেন। ৬ অক্টোবর রাজধানী আন্তানানারিভোর ল্যাভোলোহা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এই নিয়োগ আসে এমন এক সময়, যখন বিদ্যুৎ ও পানির ঘাটতি নিয়ে টানা বিক্ষোভে রাজপথ অচল হয়ে পড়েছিল এবং প্রেসিডেন্ট এক সপ্তাহ আগেই, পুরো সরকার ভেঙে দেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী জাফিসাম্বো এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামরিক ক্যাবিনেটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিক্ষোভের মধ্যে ‘শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার’-এর অঙ্গীকার
প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা বলেছেন, দেশকে এখন এমন একজন প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজন যিনি “জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।”
তিনি আরও বলেন, জাফিসাম্বোর প্রথম কাজ হবে সারা দেশে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ পুনরায় নিশ্চিত করা।
টানা তৃতীয় সপ্তাহে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সোমবার আবারও বিক্ষোভে নামে জনগণ। টানা তৃতীয় সপ্তাহের মতো এই আন্দোলনে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। তাঁরা শুধু বিদ্যুৎ-পানির সংকট নয়, দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন।
আন্তানানারিভোর রাস্তায় মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। একই সঙ্গে দক্ষিণের তোলিয়ারা ও উত্তরের দিয়েগো সুয়ারেজ শহরেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
কেন ক্ষোভ বাড়ছে
বিশাল খনিজ সম্পদ, উর্বর কৃষিজমি ও জীববৈচিত্র্যের দেশ হওয়া সত্ত্বেও মাদাগাস্কার আজও বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র।
১৯৬০ সালে স্বাধীনতার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশটির মাথাপিছু আয় কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। দারিদ্র্যের গভীরতা ও দুর্নীতি নিয়ে জনগণের ক্ষোভই বর্তমান বিক্ষোভের মূল কারণ।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিক্ষোভের প্রাথমিক দিনগুলোতে অন্তত ২২ জন নিহত ও ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তবে সরকার এই সংখ্যা অস্বীকার করেছে।
সরকারের অবস্থান ও সমালোচনা
গত সপ্তাহের এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা বলেন, তিনি বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ শুনতে প্রস্তুত, তবে পদত্যাগের দাবিতে সাড়া দেবেন না।
প্রেসিডেন্টের দপ্তরের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানান, এই বিক্ষোভ “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” এবং “দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ।”
তাঁর ভাষায়, “প্রেসিডেন্ট সংলাপের পক্ষে আছেন এবং জনগণের দৈনন্দিন জীবনের উন্নয়নে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।”
নাগরিক সমাজের বিভাজন ও দাবি
শনিবার কিছু নাগরিক সমাজ সংগঠন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করলেও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
অন্যদিকে, বেশ কয়েকটি সংগঠন জানিয়েছে, তারা বৈঠকে অংশ নেয়নি, কারণ সরকার এখনো নিশ্চয়তা দেয়নি যে গ্রেফতার বিক্ষোভকারীদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতের প্রতিবাদ বাধাহীনভাবে চলতে পারবে।
ছায়ায় অস্থির রাজনীতি
জাফিসাম্বোর নিয়োগ প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার শক্ত হাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর সংকেত দিচ্ছে। তবে সামরিক প্রভাব বাড়ানো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বদলে আরও সংঘাত ডেকে আনতে পারে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।
আন্দোলনের ‘জেনারেশন-জেড’ তরুণ নেতৃত্ব জানিয়েছে—তারা শুধু পানি-বিদ্যুৎ নয়, নাগরিক অধিকার ও স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থার দাবিতেও আপসহীন।
মাদাগাস্কার এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। সেনা নেতৃত্বে সরকার পুনর্গঠন হয়তো স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনবে, কিন্তু জনগণের আস্থা ফেরাতে হলে রাজোয়েলিনা সরকারকে গভীর সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে এই বিক্ষোভ আরও ব্যাপক রূপ নিতে পারে।
#মাদাগাস্কার #বিক্ষোভ #সেনা_সরকার #রাজনীতি #নতুন_প্রধানমন্ত্রী #সারাক্ষণ_রিপোর্ট