ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের দক্ষিণ উপকূল প্রাচীনকাল থেকেই ভয়ঙ্কর সুনামির সাক্ষী। নতুন গবেষণায় জানা গেছে, ওই অঞ্চলে অতীতে একাধিকবার ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে সৃষ্ট মহাসুনামি আঘাত হেনেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যতেও জাভার জনবসতি ও অবকাঠামো বড় বিপদের মুখে পড়বে।
প্রাচীন স্মৃতিতে সুনামির ছাপ
ইন্দোনেশিয়া জাভা দ্বীপের দক্ষিণ উপকূল দীর্ঘদিন ধরে বিশাল সুনামির ভয়ঙ্কর স্মৃতি বহন করছে। প্রাচীন সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এখন প্রশ্ন হলো—আমরা কি আরেকটি মহাসুনামির জন্য প্রস্তুত?
গবেষণা ও আবিষ্কার
বাডান রিসের্চ দান ইনোভাসি নাসিওনাল (BRIN) বা জাতীয় গবেষণা ও উদ্ভাবন সংস্থার বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ জাভার উপকূলে ‘প্যালিও-সুনামি’ বা প্রাচীন সুনামির চিহ্ন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
২০০৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই গবেষণায় বান্টেন প্রদেশ থেকে শুরু করে পূর্ব জাভা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সুনামির বিশাল বালু ও পলি স্তর শনাক্ত করা হয়েছে।
গবেষক পুরনা সুলাস্ত্য পুত্রা জানান—বিনুয়াঙ্গেন, পাঙ্গানদারান, সিলাকাপ এবং পাসিতানের মতো এলাকায় সুনামির স্তর পাওয়া গেছে। রেডিওকার্বন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসব স্তরের বয়স কাছাকাছি এবং একই সময়ে একটি মহা-ভূমিকম্প ও সুনামির ফলেই সৃষ্টি হয়েছে।
কত বড় হতে পারে এই ভূমিকম্প?
গবেষকদের ধারণা, দক্ষিণ জাভা উপকূলে অন্তত তিনবার ৯ মাত্রা বা তারও বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প সুনামি সৃষ্টি করেছে।
- • প্রায় ১,৮০০ বছর আগে
- • প্রায় ১,০০০ বছর আগে
- • প্রায় ৪০০ বছর আগে
পুরনা জানান, গড় হিসেবে প্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ বছর অন্তর এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
ঝুঁকিতে বড় শহর ও অবকাঠামো
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, জাভার দক্ষিণ উপকূলের অনেক স্থাপনা এই ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, যোগজাকার্তার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি সমুদ্র থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে অবস্থিত। অথচ সেখানে সুনামির পলি স্তর পাওয়া গেছে যা ১.৫ কিলোমিটার ভেতরে পর্যন্ত বিস্তৃত।
এর মানে দাঁড়ায়—বিমানবন্দর, হোটেল, রিসোর্টসহ বহু স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। গবেষকদের মতে, দক্ষিণ উপকূলের বহু জেলা এখনো পর্যাপ্ত সুনামি-প্রতিরোধ পরিকল্পনা নিতে পারেনি।
ভূমিকম্পের ব্যাপক প্রভাব
সুনামির চেয়ে ভূমিকম্পের প্রভাবও সমান ভয়াবহ হতে পারে। গবেষকদের মতে, ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটলে ভাঙ্গন ফাটল প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ হতে পারে। এতে শুধু দক্ষিণ উপকূল নয়, জাভার উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটতে পারে।
করণীয়
গবেষকদের মূল বার্তা স্পষ্ট—সুনামির ঝুঁকি হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।
- • উপকূলীয় স্থাপনাগুলোতে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা বাড়াতে হবে।
- • জনগণকে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রমে মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- • ভূমিকম্প ও সুনামি মোকাবিলায় শক্তিশালী অবকাঠামো এবং জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
দক্ষিণ জাভার উপকূল প্রাচীনকাল থেকেই সুনামির সাক্ষী। এবার প্রশ্ন—ভবিষ্যতের সেই হুমকির মুখে মানুষ কতটা প্রস্তুত?
#জাভা #সুনামি #ভূমিকম্প #ইন্দোনেশিয়া #দক্ষিণ_জাভা #প্রাকৃতিক_দুর্যোগ #গবেষণা