১২:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
ডিডব্লিউটিএস’-এ ‘বয় মিটস ওয়ার্ল্ড’ রিইউনিয়ন উইন্ডোজ ১০ শেষ—কোন ল্যাপটপে আপগ্রেড করবেন, আজকের গাইড বাণিজ্য-উদ্বেগে তেলদাম নিম্নমুখী—সরবরাহ এখনো স্বচ্ছন্দ রকেট’ ভঙ্গির ড্রোনে এক সেন্ট ডেলিভারি—এয়ারবাউন্ডের তহবিল ৮.৬৫ মিলিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৭) হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ল ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত আখ নয়, শস্যই এখন ভারতের ইথানল বিপ্লবের চালিকাশক্তি ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ৬ ব্যাংক থেকে আরও ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৫ দিন ধরে ওসি শূন্য বেনাপোল পোর্ট থানা—অপরাধ ও চোরাচালানে বাড়ছে তিন দফা দাবিতে উচ্চ আদালতের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে শিক্ষকরা

কক্ষপথে ভাসমান ঐতিহাসিক স্যাটেলাইট: সংরক্ষণে রাখা হবে নাকি উদ্ধার?

মহাকাশে ভাসমান পুরোনো স্যাটেলাইটগুলোকে আমরা কি ইতিহাসের অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করব, নাকি জাদুঘরে ফিরিয়ে আনব? এই প্রশ্নকে ঘিরেই নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে বিজ্ঞানী ও মহাকাশ ইতিহাসবিদদের মধ্যে। কেউ বলছেন এগুলো মহাকাশেই সবচেয়ে নিরাপদ, আবার কেউ প্রস্তাব দিচ্ছেন—ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্যাটেলাইট উদ্ধার করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার।

প্রাচীন স্যাটেলাইট নিয়ে নতুন বিতর্ক

মানবসৃষ্ট যন্ত্রপাতি প্রতিনিয়ত মহাকাশে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু পুরোনো স্যাটেলাইটগুলোকে আমরা কীভাবে দেখব—ঐতিহাসিক সম্পদ নাকি কেবল মহাকাশ আবর্জনা? এই প্রশ্নেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কয়েকজন বিজ্ঞানী ও মহাকাশ ইতিহাসবিদের প্রস্তাব।

তাদের ধারণা, মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইটগুলোর কিছু উদ্ধার করা উচিত, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

ভ্যানগার্ড ১: মহাকাশে মানুষের সবচেয়ে পুরোনো যন্ত্র

মার্চ ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উৎক্ষেপিত ভ্যানগার্ড ১ স্যাটেলাইট ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সংকেত পাঠায়। এরপর থেকে এটি কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো প্রাচীনতম মানবসৃষ্ট বস্তু। সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এটিকে তুলনা করেছিলেন একখানা জাম্বুরার সঙ্গে।

HARTA KARUN YANG MENGORBIT - PressReader

ইতিহাসবিদ ম্যাট বিলের মতে, ভ্যানগার্ড ১ কেবল পুরোনো স্যাটেলাইট নয়, বরং মহাকাশ ইতিহাসের সবচেয়ে মূল্যবান নিদর্শনগুলোর একটি। তিনি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব অ্যারোনটিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিকস সম্মেলনে এটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার বিস্তারিত প্রস্তাব পেশ করেছেন।

সংরক্ষণ নাকি উদ্ধার—দ্বন্দ্বের জায়গা

বহু বিশেষজ্ঞের মতে, প্রাচীন স্যাটেলাইটগুলো কক্ষপথেই থাকা উচিত, কারণ সেগুলো তখন আর কোনো দেশের একক মালিকানায় থাকে না এবং নিরাপদভাবে গবেষণা করার সুযোগ তৈরি করে।

ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস-এর অ্যালিস গোরম্যান বলেন, “স্যাটেলাইটগুলো কক্ষপথেই রাখা উচিত। সেখানেই এগুলো সবচেয়ে নিরাপদ।”

তবে মহাকাশ এখন ভিড়ে ভরে উঠছে। ফলে বিল ও তার সহকর্মীরা প্রস্তাব করেছেন—কিছু ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইট কি উদ্ধার করা উচিত নয়? তারা এগারোটি স্যাটেলাইটকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

প্রস্তাবিত স্যাটেলাইটগুলোর তালিকা

ভ্যানগার্ড ১ (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৫৮)

পৃথিবী পুরোপুরি গোল নয়, বরং বিষুবরেখায় স্ফীত—এ তথ্য নিশ্চিত করতে বড় অবদান রাখে।

লুনা ১ (সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৫৯)

প্রথম মহাকাশযান যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ থেকে বেরিয়ে সূর্যের কক্ষপথে প্রবেশ করে।

HARTA KARUN YANG MENGORBIT - PressReader

পাইওনিয়ার ৪ (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৫৯)

চাঁদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মূল্যবান বিকিরণ তথ্য পাঠায়।

টায়রস ১ (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬০)

প্রথম আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট, যা পরে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বিপ্লব আনে।

টেলস্টার (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬২)

প্রথম সক্রিয় যোগাযোগ স্যাটেলাইট, যা টেলিভিশন সিগনাল আটলান্টিকের ওপারে পাঠায়।

আলুয়েট ১ (কানাডা, ১৯৬২)

আইনোস্ফিয়ারের তথ্য সংগ্রহ করে কানাডাকে তৃতীয় মহাকাশশক্তি করে তোলে।

অ্যাস্টেরিক্স (ফ্রান্স, ১৯৬৫)

ফ্রান্সের প্রথম স্যাটেলাইট, তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে খুব কম তথ্য পাঠায়।

ভেলা ১এ ও ১বি (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬৩)

পারমাণবিক বিস্ফোরণ শনাক্তের জন্য তৈরি, যা আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আর্লি বার্ড (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬৫)

প্রথম বাণিজ্যিক ভূস্থির যোগাযোগ স্যাটেলাইট।

পাইওনিয়ার ৬ (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬৫)

সূর্যের বাতাস ও মহাকাশের চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করে।

ভেগা (সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৮৪)

ভেনাসের কক্ষপথ ও হ্যালির ধূমকেতুর তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত বিশাল মিশন।

বিল ও তার দলের ধারণা, এসব স্যাটেলাইট উদ্ধার করা হলে তা কেবল মহাকাশ ইতিহাসের জ্ঞানকেই সমৃদ্ধ করবে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাস্তব গবেষণার সম্পদ হয়ে উঠবে। তবে এর বিপক্ষে থাকা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কক্ষপথে রেখে দেওয়াই নিরাপদ এবং সাংস্কৃতিকভাবে বেশি সম্মানজনক।

প্রশ্ন থেকে যায়—ঐতিহাসিক স্যাটেলাইটগুলোকে আমরা কি জাদুঘরে ফিরিয়ে আনব, নাকি আকাশেই তাদের চিরস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে রেখে দেব?

#মহাকাশ #স্যাটেলাইট #ভ্যানগার্ড১ #মহাকাশইতিহাস #বিজ্ঞান #প্রযুক্তি #সংরক্ষণ #জাদুঘর

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিডব্লিউটিএস’-এ ‘বয় মিটস ওয়ার্ল্ড’ রিইউনিয়ন

কক্ষপথে ভাসমান ঐতিহাসিক স্যাটেলাইট: সংরক্ষণে রাখা হবে নাকি উদ্ধার?

০৪:৫১:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

মহাকাশে ভাসমান পুরোনো স্যাটেলাইটগুলোকে আমরা কি ইতিহাসের অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করব, নাকি জাদুঘরে ফিরিয়ে আনব? এই প্রশ্নকে ঘিরেই নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে বিজ্ঞানী ও মহাকাশ ইতিহাসবিদদের মধ্যে। কেউ বলছেন এগুলো মহাকাশেই সবচেয়ে নিরাপদ, আবার কেউ প্রস্তাব দিচ্ছেন—ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্যাটেলাইট উদ্ধার করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার।

প্রাচীন স্যাটেলাইট নিয়ে নতুন বিতর্ক

মানবসৃষ্ট যন্ত্রপাতি প্রতিনিয়ত মহাকাশে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু পুরোনো স্যাটেলাইটগুলোকে আমরা কীভাবে দেখব—ঐতিহাসিক সম্পদ নাকি কেবল মহাকাশ আবর্জনা? এই প্রশ্নেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কয়েকজন বিজ্ঞানী ও মহাকাশ ইতিহাসবিদের প্রস্তাব।

তাদের ধারণা, মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইটগুলোর কিছু উদ্ধার করা উচিত, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

ভ্যানগার্ড ১: মহাকাশে মানুষের সবচেয়ে পুরোনো যন্ত্র

মার্চ ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উৎক্ষেপিত ভ্যানগার্ড ১ স্যাটেলাইট ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সংকেত পাঠায়। এরপর থেকে এটি কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো প্রাচীনতম মানবসৃষ্ট বস্তু। সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এটিকে তুলনা করেছিলেন একখানা জাম্বুরার সঙ্গে।

HARTA KARUN YANG MENGORBIT - PressReader

ইতিহাসবিদ ম্যাট বিলের মতে, ভ্যানগার্ড ১ কেবল পুরোনো স্যাটেলাইট নয়, বরং মহাকাশ ইতিহাসের সবচেয়ে মূল্যবান নিদর্শনগুলোর একটি। তিনি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব অ্যারোনটিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিকস সম্মেলনে এটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার বিস্তারিত প্রস্তাব পেশ করেছেন।

সংরক্ষণ নাকি উদ্ধার—দ্বন্দ্বের জায়গা

বহু বিশেষজ্ঞের মতে, প্রাচীন স্যাটেলাইটগুলো কক্ষপথেই থাকা উচিত, কারণ সেগুলো তখন আর কোনো দেশের একক মালিকানায় থাকে না এবং নিরাপদভাবে গবেষণা করার সুযোগ তৈরি করে।

ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস-এর অ্যালিস গোরম্যান বলেন, “স্যাটেলাইটগুলো কক্ষপথেই রাখা উচিত। সেখানেই এগুলো সবচেয়ে নিরাপদ।”

তবে মহাকাশ এখন ভিড়ে ভরে উঠছে। ফলে বিল ও তার সহকর্মীরা প্রস্তাব করেছেন—কিছু ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইট কি উদ্ধার করা উচিত নয়? তারা এগারোটি স্যাটেলাইটকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

প্রস্তাবিত স্যাটেলাইটগুলোর তালিকা

ভ্যানগার্ড ১ (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৫৮)

পৃথিবী পুরোপুরি গোল নয়, বরং বিষুবরেখায় স্ফীত—এ তথ্য নিশ্চিত করতে বড় অবদান রাখে।

লুনা ১ (সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৫৯)

প্রথম মহাকাশযান যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ থেকে বেরিয়ে সূর্যের কক্ষপথে প্রবেশ করে।

HARTA KARUN YANG MENGORBIT - PressReader

পাইওনিয়ার ৪ (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৫৯)

চাঁদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মূল্যবান বিকিরণ তথ্য পাঠায়।

টায়রস ১ (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬০)

প্রথম আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট, যা পরে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বিপ্লব আনে।

টেলস্টার (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬২)

প্রথম সক্রিয় যোগাযোগ স্যাটেলাইট, যা টেলিভিশন সিগনাল আটলান্টিকের ওপারে পাঠায়।

আলুয়েট ১ (কানাডা, ১৯৬২)

আইনোস্ফিয়ারের তথ্য সংগ্রহ করে কানাডাকে তৃতীয় মহাকাশশক্তি করে তোলে।

অ্যাস্টেরিক্স (ফ্রান্স, ১৯৬৫)

ফ্রান্সের প্রথম স্যাটেলাইট, তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে খুব কম তথ্য পাঠায়।

ভেলা ১এ ও ১বি (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬৩)

পারমাণবিক বিস্ফোরণ শনাক্তের জন্য তৈরি, যা আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আর্লি বার্ড (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬৫)

প্রথম বাণিজ্যিক ভূস্থির যোগাযোগ স্যাটেলাইট।

পাইওনিয়ার ৬ (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬৫)

সূর্যের বাতাস ও মহাকাশের চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করে।

ভেগা (সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৮৪)

ভেনাসের কক্ষপথ ও হ্যালির ধূমকেতুর তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত বিশাল মিশন।

বিল ও তার দলের ধারণা, এসব স্যাটেলাইট উদ্ধার করা হলে তা কেবল মহাকাশ ইতিহাসের জ্ঞানকেই সমৃদ্ধ করবে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাস্তব গবেষণার সম্পদ হয়ে উঠবে। তবে এর বিপক্ষে থাকা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কক্ষপথে রেখে দেওয়াই নিরাপদ এবং সাংস্কৃতিকভাবে বেশি সম্মানজনক।

প্রশ্ন থেকে যায়—ঐতিহাসিক স্যাটেলাইটগুলোকে আমরা কি জাদুঘরে ফিরিয়ে আনব, নাকি আকাশেই তাদের চিরস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে রেখে দেব?

#মহাকাশ #স্যাটেলাইট #ভ্যানগার্ড১ #মহাকাশইতিহাস #বিজ্ঞান #প্রযুক্তি #সংরক্ষণ #জাদুঘর