ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে এক নজিরবিহীন ঘটনা। প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের দিকে আদালতকক্ষে এক আইনজীবী প্রকাশ্যে জুতা নিক্ষেপ করেছেন। বিচারপতির সাম্প্রতিক হিন্দুধর্ম বিষয়ক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে এই পদক্ষেপ নেন তিনি। ঘটনায় আদালতের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আদালতে জুতা নিক্ষেপের ঘটনা
সোমবার (৬ অক্টোবর) দিল্লিতে এই ঘটনা ঘটে। আইনজীবী রাকেশ কিশোর আদালতে শুনানির সময় হঠাৎ জুতা ছুড়ে মারেন, যা বিচারপতি গাভাই ও অপর এক বিচারকের কাছাকাছি গিয়ে পড়ে। তিনজন আইনজীবী বিবিসি হিন্দিকে জানান, এটি ছিল আদালতকক্ষে প্রকাশ্য অসম্মান ও নিরাপত্তা ভঙ্গের গুরুতর উদাহরণ।
ধর্মীয় মন্তব্যে ক্ষোভ
ঘটনার সময় কিশোর চিৎকার করে বলেন, ‘সনাতন ধর্মের অপমান ভারত সহ্য করবে না।’ সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে আটক করেন। পরে আইনজীবী সমিতি তাঁকে সাময়িকভাবে পেশা থেকে বরখাস্ত করে।
উপস্থিত আইনজীবী রবি শঙ্কর ঝা বিবিসিকে জানান, “তিনি জুতা নিক্ষেপের পর নিজেই স্বীকার করেন যে তিনি সেটা করেছেন। পরে প্রধান বিচারপতি সবাইকে শান্ত থেকে যুক্তি-তর্ক চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।”
আরেক আইনজীবী আনাস তানভির বলেন, “পুরো সময় বিচারপতি গাভাই সংযত ছিলেন এবং কোনও আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া দেখাননি।”
মামলার পটভূমি ও বিতর্ক
ঘটনার সূত্র গত সেপ্টেম্বরের এক মামলায়। মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দিরে বিষ্ণুর সাত ফুট উঁচু একটি ভাস্কর্য পুনর্নির্মাণের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি গাভাইয়ের বেঞ্চ। তিনি মন্তব্য করেন, “এটা জনস্বার্থ মামলা নয়, প্রচার পাওয়ার মামলা। দেবতার কাছে গিয়ে নিজেই কিছু করার অনুরোধ করুন।”
এই বক্তব্যকে হিন্দুধর্মের বিশ্বাসকে বিদ্রুপ হিসেবে সমালোচনা করা হয়। পরে গাভাই বলেন, তিনি সব ধর্মকেই সমান শ্রদ্ধা করেন।
রাকেশ কিশোর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টকে বলেন, “বিচারপতি শুধু আবেদন খারিজ করেননি, বিষ্ণু ভগবানকেও বিদ্রুপ করেছেন।” তিনি আরও জানান, ওই মন্তব্যের পর থেকে তাঁর ঘুম হারাম হয়ে যায়, আর সেই ক্ষোভই তাঁকে এই পদক্ষেপে ঠেলে দেয়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনাকে “অত্যন্ত নিন্দনীয়” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বিচারপতি গাভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে বলেন, “এমন লজ্জাজনক কাজ সমাজে কোনো স্থান পেতে পারে না।”
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও আইনজীবী মহলও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আদালত ভবিষ্যতে নিরাপত্তা আরও জোরদারের আশ্বাস দিয়েছে।
প্রতীকমূলক প্রতিবাদের দৃষ্টান্ত
ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে জুতা নিক্ষেপকে চরম অপমানের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ২০০৮ সালে ইরাকি সাংবাদিক তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের দিকে জুতা ছুড়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। এ বছর কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর প্রতিও এক জনসভায় জুতা নিক্ষেপ করা হয়।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে এই ঘটনাটি শুধু বিচারবিভাগের নিরাপত্তা নয়, বরং ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ও বাক্স্বাধীনতার সীমারেখা নিয়েও নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। প্রধান বিচারপতি গাভাই নীরব থাকলেও ঘটনাটি দেশজুড়ে বিচারক মর্যাদা ও ধর্মীয় মন্তব্যের পরিধি নিয়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিচারপতি_গাভাই, আদালত, ধর্মীয়_বিতর্ক, জুতা_নিক্ষেপ, সনাতন_ধর্ম, নরেন্দ্র_মোদি, দিল্লি, বিবিসি_হিন্দি