ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত হিমালয় অঞ্চল
চীনের তিব্বতে মাউন্ট এভারেস্টের পূর্ব ঢালে ভয়াবহ তুষারঝড়ে আটকা পড়েছেন শতাধিক হাইকার ও পর্বতারোহী। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং এখনো ২০০ জনের বেশি মানুষ আটকা রয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এই তুষারপাত পুরো সপ্তাহান্ত জুড়ে চলেছে, ফলে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে প্রবেশের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
উদ্ধার অভিযান ও স্থানীয় সহায়তা
রবিবার পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন ও সেনা সদস্যরা ৩৫০ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে। তাদের রাখা হয়েছে কুদাং নামের ছোট এক পাহাড়ি শহরে, যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় জেনারেটরের মাধ্যমে আলো জ্বালানো হচ্ছে। তুষারঝড়ের কারণে উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে চলছে। এখনও বহু পর্যটকের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
পর্যটকদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
চীনা প্রকৃতি আলোকচিত্রী দং শুচাং জানান, ‘আমরা শনিবার সকালেই হাঁটা শুরু করেছিলাম। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আকাশ কালো হয়ে যায়, বজ্রপাত শুরু হয়, আর ঘন তুষারঝড় আমাদের থামিয়ে দেয়।’
তার দলের অনেক সদস্যের হাইপোথারমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। দং বলেন, ‘আমাদের জ্যাকেট ও রেইনকোট তুষারের বিরুদ্ধে কোনো কাজে আসেনি, সবাই ভিজে গিয়েছিল।’
তাদের দলটি প্রায় ৪,৬০০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তা ছিল খুব পিচ্ছিল, বারবার পড়ে যাচ্ছিলাম। তুষারপাত এতটাই ঘন ছিল যে সামনে কিছু দেখা যাচ্ছিল না।’
‘আমি ভাগ্যবান যে বের হতে পেরেছি’
দংয়ের সঙ্গী চেন গেশুয়াং বলেন, ‘রবিবার সকালে যখন আমরা ফিরে আসছিলাম, তখন বরফের গভীরতা এক মিটারের মতো ছিল। আমরা সবাই অভিজ্ঞ পর্বতারোহী হলেও, এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন ছিল। আমি ভাগ্যবান যে জীবিত ফিরে এসেছি।’
কঠিন উদ্ধার পরিস্থিতি ও পরিবারের দুশ্চিন্তা
এক নারী জানান, তার স্বামী এখনো পাহাড়ে আটকা রয়েছেন এবং ধীরে ধীরে নিচে নামার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ঘন তুষার ও পিচ্ছিল পথের কারণে উদ্ধারকারীরা পথ পরিষ্কার করতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী সারা রাত ঘুমাতে পারেননি, ভয়ে ছিলেন যে তাঁবু তুষারের নিচে চাপা পড়ে যাবে।’
আরেক পর্যটক এরিক ওয়েন জানান, ‘আমাদের তিনজন হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল, যদিও আমরা যথেষ্ট গরম পোশাক পরেছিলাম। প্রতি ১০ মিনিট পরপর তাঁবুর উপর থেকে তুষার সরাতে হয়েছে, না হলে সেটি ভেঙে পড়ত।’
পর্যটনের মৌসুমে আকস্মিক দুর্যোগ
ঘটনাটি ঘটেছে চীনের গোল্ডেন উইক ছুটির সময়, যখন পর্যটকদের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। সাধারণত অক্টোবর মাসে এই এলাকায় আকাশ পরিষ্কার ও আবহাওয়া অনুকূল থাকে, যা এভারেস্টে ট্রেকিংয়ের জনপ্রিয় সময়।
তবে এবারের দুর্যোগে পুরো এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কারমা ভ্যালি ট্রেইল—যা এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছানোর একটি মনোরম পথ—সেখানে শতাধিক ট্রেকার আটকা পড়ে।
জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের আকস্মিক তুষারঝড় জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরছে। প্রতিবেশী নেপালও বর্তমানে প্রবল বর্ষণ ও বন্যায় বিপর্যস্ত; অন্তত ৪৭ জন নিহত এবং বহু সেতু ও সড়ক ধ্বংস হয়েছে।
অন্যদিকে, চীনের পূর্ব উপকূলে টাইফুন ম্যাটমো আঘাত হেনে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এভারেস্ট অঞ্চলের এই তুষারঝড় কেবল একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, বরং পাহাড়ি পর্যটনের জন্য এক সতর্কবার্তা। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না শেষ পর্যটককেও নিরাপদে নামানো যায়।
#এভারেস্ট #তুষারঝড় #চীন #তিব্বত #পর্যটকআটকা #উদ্ধারঅভিযান #গোল্ডেনউইক #জলবায়ুপরিবর্তন #সারাক্ষণরিপোর্ট