০৮:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
তিন দফা দাবিতে উচ্চ আদালতের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে শিক্ষকরা ভারতের তেলঙ্গানার প্রাক্তন সাংসদ কে. কবিতা বললেন, ‘সত্য বলার কারণেই আজ আমি একা আসিয়ান শীর্ষে থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে লালন শাহের ১৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশব্যাপী উৎসব ও মেলা সেনা বিদ্রোহে অস্থির মাদাগাস্কার—নিরাপদ স্থানে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা সৌদি আরবের হাইল প্রদেশের হৃদয়ে আজা ও সালমা পর্বতমালা—প্রকৃতির মহিমান্বিত আশ্রয় শিক্ষকদের সম্মান শুধু কথায় নয়, বাস্তব পদক্ষেপে দিতে হবে—জি. এম. কাদের অস্থিরতায় ঘেরা শেয়ারবাজার—স্থিতির খোঁজে বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ও সিএসই দিনের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শেষে পতনে বন্ধ যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি — যেখানে প্রাণীদের কান্না প্রতিফলিত হয় মানুষের নীরবতায় -চতুর্থ পর্ব

ইসরায়েলের সামরিক জয়, কিন্তু কূটনৈতিক পরাজয়

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় অর্জনের পরও ইসরায়েল এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক গভীর কূটনৈতিক একাকিত্বের মুখোমুখি। গাজায় রক্তপাত ও ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ বিশ্ব জনমতকে ইসরায়েলের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে, আর এই পরিস্থিতি দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থানকে অনিশ্চিত করে তুলছে।

মিশরে আলোচনার নতুন উদ্যোগ

দুই বছর আগে হামাসের প্রাণঘাতী হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শুরু হওয়া যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এখন মিশরে আলোচনায় বসেছেন মধ্যস্থতাকারীরা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার ও জিম্মিদের মুক্তি।

সামরিকভাবে শক্তিশালী, কিন্তু কূটনৈতিকভাবে দুর্বল

যুদ্ধক্ষেত্রে একের পর এক জয়লাভের পর ইসরায়েল এখন আঞ্চলিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। হামাস ও অন্যান্য কৌশলগত প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করলেও, এই লড়াই দেশটিকে রাজনৈতিকভাবে একঘরে করে তুলেছে। পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদি সমর্থনও এখন ঝুঁকির মুখে, যা ইসরায়েলের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

Hamas delegation in Egypt as mediators push to maintain Gaza ceasefire

গাজার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, সেখানে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং ইসরায়েলকে বিশ্ব জনমতের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে।

প্রতিপক্ষ দুর্বল, কিন্তু বিশ্ব জনমত বিরূপ

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় এবং ধারাবাহিকভাবে হামাস, হিজবুল্লাহ, সিরিয়ার আসাদ সরকার ও ইরানের সামরিক নেতৃত্বকে দুর্বল করে ফেলে।

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের ফেলো ও সাবেক ইসরায়েলি উপদেষ্টা শালোম লিপনারের ভাষায়, “আঞ্চলিকভাবে ইসরায়েল এখন অনেক বেশি নিরাপদ; কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা কঠিন অবস্থানে রয়েছে, আর দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতি তাদের পক্ষে নয়।”

যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপেও ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি

মুসলিম বিশ্ব থেকে শুরু করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত ইসরায়েলবিরোধী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এই একাকিত্ব তাঁকে অস্বাভাবিক প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।

Good to Know: Antisemitism in America

তিনি পশ্চিম তীর সংযুক্তির পরিকল্পনা আটকে দিয়েছেন, কাতারে ইসরায়েলি হামলার জন্য নেতানিয়াহুকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন এবং সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনায় ইসরায়েলকে রাজি করিয়েছেন।

তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

এই পরিস্থিতি শুধু নেতানিয়াহু নয়, বরং ইসরায়েলের ভবিষ্যৎকেও অনিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক সংকটগোষ্ঠীর সিনিয়র বিশ্লেষক মাইরাভ জন্সেইনের মতে, “বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলে নতুন প্রজন্মের কাছে ফিলিস্তিনপ্রীতি ও জায়োনিবাদবিরোধিতা রাজনৈতিক পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠছে। সাধারণ ইহুদি ও ইসরায়েলি নাগরিকরাই আগামী বছরগুলোতে এর মূল ভার বহন করবে।”

পশ্চিমা দেশে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ইতালিসহ ইউরোপজুড়ে বিক্ষোভ, সাধারণ ধর্মঘট ও জনঅসন্তোষ মূলত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা এবং পশ্চিমা সরকারের ইসরায়েলপ্রীতির বিরোধিতায় চালিত। রোমের আন্তর্জাতিক বিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক নাথালি টোচ্চির ভাষায়, “এই আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে মানবিক ক্ষোভ, ধর্মীয় উগ্রতা নয়।”

“সবকিছু আগের মতো হবে না”

Germany's Support of Israel Needs to Lead to Strategic Action | DGAP

ইসরায়েলের অনেক মিত্র বিশ্বাস করেন যে এই কূটনৈতিক ক্ষতি স্থায়ী নয়। ওয়াশিংটনের ‘ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিস’-এর নির্বাহী পরিচালক জনাথন শানজারের মতে, “ইসরায়েল অতীতেও বহু বৈধতা-চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। যুদ্ধ শেষ হলে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

তবে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল শাপিরো ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁর মতে, “যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এবং ইসরায়েলে নতুন নেতৃত্ব না আসা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অবস্থান পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। এই পথ হবে কঠিন ও দীর্ঘ।”

হামাসের ব্যর্থতা ও গাজার ভবিষ্যৎ

দুই বছর আগে হামাস যখন ১২০০ ইসরায়েলি বেসামরিক ও সেনা সদস্যকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে, তখন তারা আশা করেছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দুর্বল হবে। কিন্তু ইসরায়েলি পাল্টা আঘাতে হামাসের অধিকাংশ নেতা নিহত হন।

এখন ট্রাম্প ও আরব মিত্রদের সমর্থনে নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের লক্ষ্য—হামাস সরকারকে সরিয়ে একটি টেকনোক্র্যাট প্রশাসন প্রতিষ্ঠা।

শনিবার এক ভাষণে নেতানিয়াহু এই দুই বছরের সামরিক সাফল্যকে “ইসরায়েল ও মানবজাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়” বলে বর্ণনা করেন।

ফিলিস্তিন ইস্যু আবারও কেন্দ্রবিন্দুতে

গাজায় যদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং নতুন প্রশাসন কাজ শুরু করে, তাহলে নেতানিয়াহুর সেই যুক্তি—“হামাসের অস্তিত্ব ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পথে বাধা”—আর প্রাসঙ্গিক থাকবে না।

Palestinian professor Mkhaimar Abusada reacts to Trump's Gaza takeover  claims – North by Northwestern

কায়রোতে অবস্থানরত গাজার আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মখাইমার আবুসাদা বলেন, “ফিলিস্তিন প্রশ্ন এখন আবারও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রে। কিন্তু এই অর্জনের জন্য ফিলিস্তিনিরা এমন মূল্য দিয়েছে, যা তারা আগে কখনো দেয়নি।”

ইসরায়েলি শক্তি, কিন্তু আরব আস্থার সংকট

ইসরায়েলের সামরিক ক্ষমতা যেমন প্রতিপক্ষকে দুর্বল করেছে, তেমনি সম্ভাব্য মিত্রদেরও সতর্ক করেছে। ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তি মূলত ইরানের প্রভাব রুখতেই করা হয়েছিল। কিন্তু ইরান, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন—এমনকি কাতারের হামাস ঘাঁটিতেও বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েল এখন বহু আরব রাষ্ট্রের কাছে হুমকি হিসেবেই দেখা দিচ্ছে।

ইসরায়েলের সামরিক জয় তার অস্তিত্বের নিশ্চয়তা দিলেও, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই জয় তাকে ক্রমে একা করে দিচ্ছে। গাজায় রক্তপাত থামিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে না গেলে, এই একাকিত্ব আরও গভীর হতে পারে—এবং ভবিষ্যতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্থায়িত্বও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

 

#ইসরায়েল #গাজাযুদ্ধ #হামাস #আন্তর্জাতিকরাজনীতি #মধ্যপ্রাচ্যসংকট #নেতানিয়াহু #ফিলিস্তিন #ট্রাম্প #আরববিশ্ব #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন দফা দাবিতে উচ্চ আদালতের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে শিক্ষকরা

ইসরায়েলের সামরিক জয়, কিন্তু কূটনৈতিক পরাজয়

০৬:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় অর্জনের পরও ইসরায়েল এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক গভীর কূটনৈতিক একাকিত্বের মুখোমুখি। গাজায় রক্তপাত ও ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ বিশ্ব জনমতকে ইসরায়েলের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে, আর এই পরিস্থিতি দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থানকে অনিশ্চিত করে তুলছে।

মিশরে আলোচনার নতুন উদ্যোগ

দুই বছর আগে হামাসের প্রাণঘাতী হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শুরু হওয়া যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এখন মিশরে আলোচনায় বসেছেন মধ্যস্থতাকারীরা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার ও জিম্মিদের মুক্তি।

সামরিকভাবে শক্তিশালী, কিন্তু কূটনৈতিকভাবে দুর্বল

যুদ্ধক্ষেত্রে একের পর এক জয়লাভের পর ইসরায়েল এখন আঞ্চলিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। হামাস ও অন্যান্য কৌশলগত প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করলেও, এই লড়াই দেশটিকে রাজনৈতিকভাবে একঘরে করে তুলেছে। পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদি সমর্থনও এখন ঝুঁকির মুখে, যা ইসরায়েলের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

Hamas delegation in Egypt as mediators push to maintain Gaza ceasefire

গাজার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, সেখানে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং ইসরায়েলকে বিশ্ব জনমতের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে।

প্রতিপক্ষ দুর্বল, কিন্তু বিশ্ব জনমত বিরূপ

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় এবং ধারাবাহিকভাবে হামাস, হিজবুল্লাহ, সিরিয়ার আসাদ সরকার ও ইরানের সামরিক নেতৃত্বকে দুর্বল করে ফেলে।

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের ফেলো ও সাবেক ইসরায়েলি উপদেষ্টা শালোম লিপনারের ভাষায়, “আঞ্চলিকভাবে ইসরায়েল এখন অনেক বেশি নিরাপদ; কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা কঠিন অবস্থানে রয়েছে, আর দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতি তাদের পক্ষে নয়।”

যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপেও ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি

মুসলিম বিশ্ব থেকে শুরু করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত ইসরায়েলবিরোধী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এই একাকিত্ব তাঁকে অস্বাভাবিক প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।

Good to Know: Antisemitism in America

তিনি পশ্চিম তীর সংযুক্তির পরিকল্পনা আটকে দিয়েছেন, কাতারে ইসরায়েলি হামলার জন্য নেতানিয়াহুকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন এবং সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনায় ইসরায়েলকে রাজি করিয়েছেন।

তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

এই পরিস্থিতি শুধু নেতানিয়াহু নয়, বরং ইসরায়েলের ভবিষ্যৎকেও অনিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক সংকটগোষ্ঠীর সিনিয়র বিশ্লেষক মাইরাভ জন্সেইনের মতে, “বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলে নতুন প্রজন্মের কাছে ফিলিস্তিনপ্রীতি ও জায়োনিবাদবিরোধিতা রাজনৈতিক পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠছে। সাধারণ ইহুদি ও ইসরায়েলি নাগরিকরাই আগামী বছরগুলোতে এর মূল ভার বহন করবে।”

পশ্চিমা দেশে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ইতালিসহ ইউরোপজুড়ে বিক্ষোভ, সাধারণ ধর্মঘট ও জনঅসন্তোষ মূলত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা এবং পশ্চিমা সরকারের ইসরায়েলপ্রীতির বিরোধিতায় চালিত। রোমের আন্তর্জাতিক বিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক নাথালি টোচ্চির ভাষায়, “এই আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে মানবিক ক্ষোভ, ধর্মীয় উগ্রতা নয়।”

“সবকিছু আগের মতো হবে না”

Germany's Support of Israel Needs to Lead to Strategic Action | DGAP

ইসরায়েলের অনেক মিত্র বিশ্বাস করেন যে এই কূটনৈতিক ক্ষতি স্থায়ী নয়। ওয়াশিংটনের ‘ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিস’-এর নির্বাহী পরিচালক জনাথন শানজারের মতে, “ইসরায়েল অতীতেও বহু বৈধতা-চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। যুদ্ধ শেষ হলে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

তবে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল শাপিরো ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁর মতে, “যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এবং ইসরায়েলে নতুন নেতৃত্ব না আসা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অবস্থান পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। এই পথ হবে কঠিন ও দীর্ঘ।”

হামাসের ব্যর্থতা ও গাজার ভবিষ্যৎ

দুই বছর আগে হামাস যখন ১২০০ ইসরায়েলি বেসামরিক ও সেনা সদস্যকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে, তখন তারা আশা করেছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দুর্বল হবে। কিন্তু ইসরায়েলি পাল্টা আঘাতে হামাসের অধিকাংশ নেতা নিহত হন।

এখন ট্রাম্প ও আরব মিত্রদের সমর্থনে নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের লক্ষ্য—হামাস সরকারকে সরিয়ে একটি টেকনোক্র্যাট প্রশাসন প্রতিষ্ঠা।

শনিবার এক ভাষণে নেতানিয়াহু এই দুই বছরের সামরিক সাফল্যকে “ইসরায়েল ও মানবজাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়” বলে বর্ণনা করেন।

ফিলিস্তিন ইস্যু আবারও কেন্দ্রবিন্দুতে

গাজায় যদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং নতুন প্রশাসন কাজ শুরু করে, তাহলে নেতানিয়াহুর সেই যুক্তি—“হামাসের অস্তিত্ব ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পথে বাধা”—আর প্রাসঙ্গিক থাকবে না।

Palestinian professor Mkhaimar Abusada reacts to Trump's Gaza takeover  claims – North by Northwestern

কায়রোতে অবস্থানরত গাজার আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মখাইমার আবুসাদা বলেন, “ফিলিস্তিন প্রশ্ন এখন আবারও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রে। কিন্তু এই অর্জনের জন্য ফিলিস্তিনিরা এমন মূল্য দিয়েছে, যা তারা আগে কখনো দেয়নি।”

ইসরায়েলি শক্তি, কিন্তু আরব আস্থার সংকট

ইসরায়েলের সামরিক ক্ষমতা যেমন প্রতিপক্ষকে দুর্বল করেছে, তেমনি সম্ভাব্য মিত্রদেরও সতর্ক করেছে। ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তি মূলত ইরানের প্রভাব রুখতেই করা হয়েছিল। কিন্তু ইরান, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন—এমনকি কাতারের হামাস ঘাঁটিতেও বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েল এখন বহু আরব রাষ্ট্রের কাছে হুমকি হিসেবেই দেখা দিচ্ছে।

ইসরায়েলের সামরিক জয় তার অস্তিত্বের নিশ্চয়তা দিলেও, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই জয় তাকে ক্রমে একা করে দিচ্ছে। গাজায় রক্তপাত থামিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে না গেলে, এই একাকিত্ব আরও গভীর হতে পারে—এবং ভবিষ্যতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্থায়িত্বও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

 

#ইসরায়েল #গাজাযুদ্ধ #হামাস #আন্তর্জাতিকরাজনীতি #মধ্যপ্রাচ্যসংকট #নেতানিয়াহু #ফিলিস্তিন #ট্রাম্প #আরববিশ্ব #সারাক্ষণরিপোর্ট