অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনি (পিএনজি) পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে ‘পুকপুক চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছে, যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। এই চুক্তি কেবল সামরিক নয়, বরং প্রশাসনিক, প্রশিক্ষণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোর ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরে শক্তির ভারসাম্যে নতুন রূপ
এই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনি (পিএনজি) এক ঐতিহাসিক পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। সোমবার ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও পিএনজির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
‘পুকপুক চুক্তি’ নামে পরিচিত এই সমঝোতা গত সাত দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা উদ্যোগ। টক পিসিন ভাষায় ‘পুকপুক’ শব্দের অর্থ ‘কুমির’—যা এই চুক্তির প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এটি এমন এক সময় এসেছে যখন পিএনজিতে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা বাড়ছে এবং পুরো প্রশান্ত অঞ্চলে চীন ও পশ্চিমা প্রভাব নিয়ে প্রতিযোগিতা তীব্র হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যেই নতুন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
গত বছর পিএনজির রাজধানী পোর্ট মোরসবিতে ভয়াবহ দাঙ্গায় বহু প্রাণহানি ঘটে, শহরজুড়ে অগ্নিসংযোগ হয় এবং সরকারকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়। এরপর থেকে দেশটির গ্রামীণ অঞ্চলে, বিশেষত সম্পদসমৃদ্ধ কিন্তু দারিদ্র্যপীড়িত প্রদেশগুলোতে উপজাতীয় সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেই ক্যানবেরার সঙ্গে প্রতিরক্ষা জোট দেশটির নিরাপত্তা কাঠামোকে নতুন রূপ দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চুক্তিটি কেবল সামরিক সহযোগিতা নয়, বরং প্রশাসনিক সমন্বয়, প্রশিক্ষণ ও যৌথ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার দিকেও ইঙ্গিত করছে।
সেনাবাহিনী সমন্বয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ
যদিও চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি, জানা গেছে এতে পিএনজির প্রায় ৩৬০০ সদস্যের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৯০ হাজার সদস্যবিশিষ্ট সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী বছর থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী হাজারো পিএনজি নাগরিক অস্ট্রেলিয়ার সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেতে পারেন।
এটি কেবল দুই দেশের সামরিক সম্পর্ককেই নয়, বরং প্রশান্ত মহাসাগরের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের নজর ও আঞ্চলিক ভারসাম্যের প্রশ্ন
অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপে চীন নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিনিয়োগ, বন্দর উন্নয়ন ও অবকাঠামো সহযোগিতার মাধ্যমে প্রভাব বাড়িয়েছে। এখন ‘পুকপুক চুক্তি’ কার্যকর হলে সেই প্রভাব মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়া স্পষ্টভাবে নেতৃত্বে আসবে।
অর্থাৎ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক নতুন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরু হলো—যেখানে পাপুয়া নিউগিনি হয়ে উঠছে দুই বৃহৎ শক্তির প্রভাব বলয়ের মিলনবিন্দু।
#অস্ট্রেলিয়া #পাপুয়া_নিউগিনি #প্রশান্ত_মহাসাগর #চীন #প্রতিরক্ষা_চুক্তি #আঞ্চলিক_নিরাপত্তা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট