কাঠবিড়ালিদের ছবি তুলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের পুরস্কার জিতেছেন বেলজিয়ামের নিকি কোলমন্ট৷ কাঠবিড়ালিদের ছবি তোলা তাকে অতীতের দুঃখজনক অধ্যায় ভুলে থাকতে সহায়তা করে৷
কাঠবিড়ালিদর ছবি তুলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের পুরস্কার জিতেছেন বেলজিয়ামের নিকি কোলমন্ট৷ রুয়ান্ডায় জন্মগ্রহণ করা নিকি ছোটবেলায় তার মা-বাবাকে হারিয়েছেন৷
চার বছর বয়সে তাকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করার পর থেকে তিনি বেলজিয়ামে থাকছেন৷ কাঠবিড়ালিদের ছবি তোলা তাকে অতীতের দুঃখজনক অধ্যায় ভুলে থাকতে সহায়তা করে৷ অনেকে তাকে ‘দ্য স্কুইরেলম্যান’ বা কাঠবিড়ালিমানব বলে ডাকেন৷
নিকি বলেন, ‘‘কাঠবিড়ালিদের সহজাত প্রবৃত্তি দুর্দান্ত৷ তারা বুদ্ধিমান, চালাক৷ সহজে হাল ছাড়ে না৷ তারা অবিচল৷ আর তারা আমাদের মতোই কাজ করতে পারে৷ যেমনটা আমরা জিনিসপত্র তুলতে পারি, জিনিসপত্র ঠেলে দিতে পারি, জিনিসপত্র বহন করতে পারি৷”
কিন্তু আনন্দের এই ছবিগুলোর পেছনে গভীর এক গল্প লুকিয়ে আছে- যেখানে আছে টিকে থাকা এবং মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসার দীর্ঘ পথের কথা৷
রুয়ান্ডায় জন্মগ্রহণ করা এই আলোকচিত্রী শুধু কাঠবিড়ালির একজন ভক্তই নন, তিনি সারা বিশ্বের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলেন৷
নিকি বলেন, ‘‘সাধারণ মন্তব্য, যেমন, ‘আপনি এই ছবিগুলো তুলছেন দেখে আমি খুশি৷ আপনি আমাকে হাসাতে পারেন৷ আপনি আমার দিনটিকে সুন্দর করে তুলেছেন৷ আজ আমার এটাই দেখার দরকার ছিল৷” ছবি তোলার মাধ্যমে আমি আসলে এটাই করতে চাই৷ কিছু সময়ের জন্য হলেও মানুষকে জীবনের সব খারাপ জিনিসগুলো ভুলে থাকতে সাহায্য করতে চাই৷”
ছবি তোলার মাধ্যমে নিকি তার অন্ধকার অতীত ভুলে থাকার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন৷ তিনি ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন৷ জন্মের পরপরই তার মা মারা যান, আর কয়েক বছর পর তিনি বাবাকে হারান৷ মাত্র চার বছর বয়সে বোনের সঙ্গে রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে ইউরোপে চলে আসেন৷ সেখানে তাদের দত্তক নেওয়া হয়৷
নিকি জানান, ‘‘বেলজিয়ামে বেড়ে ওঠা খুবই কঠিন ছিল৷ হ্যাঁ, আমাদের সবসময় এমন ধারণা ছিল যে, ত্বকের রংয়ের কারণে তুমি এখানে থাকতে পারো না৷ মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন ছিল৷”
বনে থাকা, প্রাণবন্ত কাঠবিড়ালিদের সুন্দর মুহূর্তের ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করা, নিকিকে তার কঠিন অতীত সত্ত্বেও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে৷
নিকি বলেন, ‘‘কাঠবিড়ালিরা আমাকে আমার মানসিক আঘাত মোকাবেলা করতে সাহায্য করেছে৷ আট বছর আগে আমি কখনো কাঠবিড়ালি দেখিনি বা তাদের মুখোমুখি হইনি৷ যখন প্রথমবার কাঠবিড়ালি দেখি, তখন আমি আমার চারপাশে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ভুলে গিয়েছিলাম৷”
তিনি এখন সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন বনে কাটান — পূর্ব বেলজিয়ামের গেঙ্ক শহরে তার বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে৷
তার ছবি তাকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা এবং ইউরোপিয়ান ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড জিতিয়েছে৷
নিকি বলেন, ‘‘এটা দারুণ ছিল৷ এটা আপনার কাজের স্বীকৃতি পাওয়ার মতো৷ আমি কখনোই আশা করিনি যে কাঠবিড়ালির ছবি দিয়ে আমি ফটোগ্রাফিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হবো৷”
পুরস্কার পেলেও নিকি তার কাজ থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন না৷ তাই ‘দ্য স্কুয়ারেলম্যান’কে একটি গাড়ি কারখানায় কাজ করতে হয়৷ ‘‘টাকা আয়ের বিষয় থাকলে আপনার উপর চাপ থাকবে৷ বিষয়টা এমনই, এবং এটা স্বাধীনতা নয়৷ স্বাধীনতা হলো, টাকা জড়িত থাকার চাপ ছাড়াই আপনি যা করছেন তা উপভোগ করা,” বলে মনে করেন নিকি৷
তার বান্ধবী, ইনি, শুরু থেকেই তার সঙ্গে আছেন৷ ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা একসঙ্গে আছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা হাঁটার সময় যখন কেউ বলে: ‘এটা সেই স্কুইরেলম্যান না?’ এটা শোনার পর ও বলে, ওহ চলো আরও সামনে যাই৷ সে সবসময় মাটিতে পা রাখে; খুব বেশি মনোযোগ চায় না৷”
চুপ থাকা৷ শান্ত থাকা৷ সঠিক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করা — ঠিক তার কাঠবিড়ালিদের মতো৷
এভাবেই নিকি কোলমন্ট তার শান্তি খুঁজে পেয়েছেন — এবং এর মাধ্যমে তিনি অন্যদেরও একটু আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করেন৷