অ্যাংলো-আমেরিকান মৈত্রীজোটের হয়ে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের দুই শহরে দুটো পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে।
আতাজীবনীতে আনাতোল লিখেছেন যে যুদ্ধটি অকস্মাৎ থেমে গেল। কুর্মিটোলার ঘাঁটিতে, পারমাণবিক বোমার উপরে তাঁকে একটি বক্তৃতা দিতে বলা হয়। সেই বক্তৃতায় পারমাণবিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত জগৎবিখ্যাত E=mc2 সমীকরণটিতে আইনস্টাইন কিভাবে উপনীত হয়েছিলেন, আনাতোল সেটির পরিপাটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। আনাতোল অবাক হয়েছিলেন যে উপস্থিত খুব কমজনেরই সমীকরণটির সঙ্গে পূর্ব পরিচিতি ছিল।
এই বক্তৃতায় তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন যে প্রতিটি তত্ত্বের সুবিধা-উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অসুবিধা-অপকারিতা- আর পারমাণবিক শক্তিও কোনো ব্যতিক্রম নয়।
প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন যে আইনস্টাইনের সূত্র E=mc2 নিয়ে মৌলিক ভ্রান্তি ও অজ্ঞতাজনিত প্রবণতা হলো: এই অভূতপূর্ব সমীকরণকে পারমাণবিক বোমা/শক্তির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। সমীকরণটির মাধ্যমে ভর-শক্তির সমতুল্যতা প্রকাশ করা হয়েছে মাত্র। …প্রায়োগিক ক্ষেত্রে, ১৯০৫ সালে, ব্যবহারোপযোগী বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপাদন ছিল আকাশ-কুসুম কল্পনা! …
১৯৩২ সালে নিউট্রন নামক চার্জহীন অতিপারমাণবিক কণিকা ও তার ভর আবিষ্কার হওয়াতে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। …১৯৩৪ সালে সিলার্ড ‘চেইন রিয়েকশন’ বা পরম্পরাগত ক্রমবৃদ্ধিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তির মুক্ত হওয়ার কথা বলেন। … অর্থাৎ, বিভাজন প্রক্রিয়া আপেক্ষিকতত্ত্ব ছাড়াই সম্ভব …১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে, অ্যাংলো-আমেরিকান মৈত্রীজোটের হয়ে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের দুই শহরে দুটো পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে।
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে; কুর্মিটোলার অবশেষ সব সাপ্লাই- পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ধুম পড়েছে আর তা-ই দেখে আনাতোল নিসারুণ মর্মপীড়া অনুভব। করেন। অগ্নিদাহের এই যজ্ঞকর্মের মধ্যে কম্বল, জামাকাপড়, ভালো মানের বিমান-ঘড়ি ইত্যাদি ইত্যাদির এমন দুর্গতি তাঁকে বিমর্ষ করে তুলেছিল। কিন্তু কিছু একটা করার উপায়ও ছিল না। ব্রিটিশ ইংরেজরা আমেরিকানদের নিষেধ করে বলে দিয়েছিল যে- খবরদার। স্থানীয়দের মধ্যে কোনো জিনিসপত্রই বিলি করতে পারবে না।
(চলবে)