অদৃশ্য কিন্তু সাধারণ এক স্বাস্থ্যঝুঁকি
আমাদের অধিকাংশই জানি, ভিটামিন ডি হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এ কারণেই একে বলা হয় ‘সানশাইন ভিটামিন’। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এটি শুধু হাড়ের জন্য নয়; বরং শরীরের শক্তি উৎপাদন, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি এখন সবচেয়ে কম চিহ্নিত কিন্তু প্রচলিত এক স্বাস্থ্যসমস্যা। এর ফলে ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব এবং অকারণে মেজাজের ওঠানামা দেখা দিতে পারে। যেহেতু এসব লক্ষণ খুবই সাধারণ এবং দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে থাকে, তাই অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারেন না, সমস্যার মূল কারণটি ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি।
শরীরের শক্তির মূল উৎসে ভিটামিন ডি
আলপ্রো ক্লিনিকের সাধারণ চিকিৎসক ড. টান জিয়া মিং বলেন, ভিটামিন ডি কোষের ‘মাইটোকন্ড্রিয়া’ বা শক্তির ঘরগুলোর কার্যকারিতা বজায় রাখে, যা শরীরের সার্বিক শক্তি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, এই ভিটামিন সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার বা স্নায়ুর রাসায়নিক বার্তাবাহকের ওপরও প্রভাব ফেলে। ফলে এটি মনোযোগ, অনুপ্রেরণা এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এছাড়া, ভিটামিন ডি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ঘাটতি থাকলে শরীর সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বারবার অসুস্থ লাগতে পারে।
‘বার্নআউট’ নয়, হতে পারে ভিটামিন ডি ঘাটতি
ড. টান বলেন, অনেক সময় এই ঘাটতি ‘বার্নআউট’ বা মানসিক ক্লান্তির মতো দেখায়। ক্লান্তি, মেজাজের ওঠানামা, ‘ব্রেইন ফগ’ বা মাথা ঝিমঝিম ভাবকে আমরা সাধারণত ঘুমের অভাব বা অতিরিক্ত চাপের ফল ভেবে নিই। কিন্তু প্রকৃত কারণ হতে পারে ভিটামিন ডি-এর স্বল্পতা।
আরও একটি বড় সমস্যা হলো—রক্ত পরীক্ষায় সাধারণত ভিটামিন ডি লেভেল আলাদা করে পরীক্ষা করা হয় না, যদি না চিকিৎসক বিশেষভাবে তা নির্দেশ দেন। ধীরে ধীরে এই ঘাটতি তৈরি হয় এবং শরীরের পরিবর্তনও ধীর গতিতে ঘটে, ফলে মানুষ তা টেরই পায় না।
সঠিক পরীক্ষা ও যত্নে সহজ সমাধান
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিটামিন ডি-এর মাত্রা পরীক্ষা ও ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা নিলে ক্লান্তি ও মনোযোগহীনতার মতো সমস্যায় দ্রুত উন্নতি দেখা যায়। অনেক সময় যা ‘স্ট্রেস’ বলে মনে হয়, তা আসলে সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য এক পুষ্টিগত ঘাটতি।
সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকা, সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া—এই তিনটি বিষয়ই শরীরে ভিটামিন ডি-এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
‘সানশাইন ভিটামিন’-এর প্রতি নতুন করে মনোযোগ
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের নানা জৈব প্রক্রিয়ার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। তাই নিয়মিত পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণের মাধ্যমে এই অদৃশ্য কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের ঘাটতি দূর করা গেলে মানসিক ও শারীরিক উভয় সুস্থতাই বৃদ্ধি পেতে পারে।
#
ভিটামিন ডি, স্বাস্থ্য, ক্লান্তি, মানসিক স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস, সূর্যালোক, পুষ্টি ঘাটতি, সারাক্ষণ রিপোর্ট