০২:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ তৎপরতা যশোর এখন বাংলাদেশের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ওমানের দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে আট মাস পর ভারতে আটক ১২ বাংলাদেশি নাবিকের দেশে ফেরা নারী অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে ইলা মিত্রের শতবর্ষে নওগাঁয় র‌্যালি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভেনিজুয়েলা: সামরিক প্রস্তুতি ও দুর্বলতা ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুধ খামার বিক্রয়: লাভজনক সুযোগ এবং সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য গঠনমূলক পদক্ষপে ভারতের রুশ তেল কেনার বিষয়ে ট্রাম্পের দাবির প্রতিক্রিয়া ইরানে পুরানো ক্ষত পুনরুজ্জীবিত: মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণে উদ্বেগের নতুন ঢেউ

উষ্ণ আবহাওয়ায় বৃক্ষবৃদ্ধি বাড়লেও বিশ্ব উষ্ণায়ন কমেনি

বন কমছে, কিন্তু কার্বন শোষণ বাড়ছে

বনাঞ্চল ধ্বংস ও দাবানলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও, বৈশ্বিকভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) শোষণের পরিমাণ বেড়েছে। ঠান্ডা অঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে গাছপালার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে, যা মোট শোষণ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্ট (GCP)-এর ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে বনভূমি বছরে প্রায় ৫০০ কোটি মেট্রিক টন বেশি CO₂ শোষণ করছে। ১৯৯০ দশক থেকে প্রায় প্রতি বছরই বনভূমি দাবানলসহ অন্যান্য নির্গমনের চেয়ে বেশি CO₂ শোষণ করেছে।


শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে CO₂ ঘনত্বের উল্লম্ফন

১৮শ শতকের শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের ঘনত্ব ক্রমাগত বেড়েছে। ২০২৩ সালে এই ঘনত্ব দাঁড়িয়েছে প্রতি মিলিয়নে ৪২০ অংশে (ppm), যা শিল্পবিপ্লব-পূর্ব ২৭৮ ppm-এর তুলনায় প্রায় ৫০% বেশি। যদিও এই বাড়তি CO₂ পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে, সেই উষ্ণতা ঠান্ডা অঞ্চলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করছে।

তবে এতে আশাবাদী হওয়ার কারণ নেই। জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ-এর কর্মকর্তা ইয়োশিউকি তাকাহাশি বলেন, “বনভূমিতে কার্বন শোষণ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির নির্গমন আরও দ্রুত বাড়ছে—ফলে বায়ুমণ্ডলে CO₂-র পরিমাণ কমছে না।”


বিশ্বব্যাপী বনভূমি হ্রাসে শোষণ কমার আশঙ্কা

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের ভূমির ৩১% বনাঞ্চল ছিল—যা ১৯৯২ সালের ৩৩% থেকে কমে গেছে। মানুষের কর্মকাণ্ড, বিশেষত গাছ কাটা ও বন পোড়ানোর কারণে এই পতন ঘটেছে।

জাতিসংঘ বন ফোরামের সহকারী পরিচালক মিনোরু তাকাদা জানান, “বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটি হেক্টর বন হারিয়ে যাচ্ছে। এতে বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ১০% সমমূল্যের ক্ষতি হচ্ছে।” তিনি সরকার ও বেসরকারি খাতকে বন সংরক্ষণে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।


আঞ্চলিক চিত্র: এশিয়ায় বৃক্ষরোপণ, দক্ষিণে উজাড়

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) তথ্যমতে, ১৯৯০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এশিয়ায় বনভূমি বেড়েছে ৩.৮ কোটি হেক্টর। চীন মরুকরণ ঠেকাতে পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক বনায়ন চালিয়েছে—এর ফলে ৩০ বছরে দেশটির বনভূমির অংশ ১৬.৩% থেকে বেড়ে ২৩.৮%-এ পৌঁছেছে।

ইউরোপেও একই সময়ে ২.৩ কোটি হেক্টর বনভূমি বেড়েছে, যেখানে পরিত্যক্ত চারণভূমি রূপান্তর ও নতুন বৃক্ষরোপণ বড় ভূমিকা রেখেছে।

তবে দক্ষিণ গোলার্ধে (দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা) পরিস্থিতি উল্টো। গত ৩০ বছরে এসব অঞ্চলে ২৪ কোটি হেক্টর বন হারিয়ে গেছে। ব্রাজিলে মাংস ও সয়াবিন উৎপাদনের জন্য বনভূমি কেটে ফেলা হচ্ছে, আর আফ্রিকায় জ্বালানি কাঠ ও কৃষিজমি তৈরির জন্য ব্যাপক গাছ কাটছে মানুষ।


বনের আয়ু ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি

জাপানে বনভূমি দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকলেও, CO₂ শোষণ কমেছে। ২০০৩ সালে যেখানে শোষণের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি টন, ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ৬ কোটি টনের নিচে। মোট বনভূমির আয়তন প্রায় অপরিবর্তিত—২.৫ কোটি হেক্টর—থাকলেও এর উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ বৃক্ষের বার্ধক্য। অধিকাংশ গাছ ৫০ বছর বয়স পেরোলেই বৃদ্ধি মন্থর হয়। জাপানে মোট বনভূমির ৪০% হলো রোপিত বন, যার অর্ধেকের বেশি গাছই ৫০ বছরের বেশি পুরোনো। কার্বন শোষণ বাড়াতে হলে এসব পুরোনো গাছ পাতলা করে কাটা ও নবীন চারাগাছ রোপণ জরুরি।


দাবানল ও জলবায়ু সংকট

এই বছর জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে ভয়াবহ দাবানল দেখা দিয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পাহাড়ি অঞ্চলের শুষ্কতা এই ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বন সংরক্ষণ অপরিহার্য। বন শুধু কার্বন শোষণ করে না, এটি জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পানি বিশুদ্ধ রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


 মানবতার বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা

বন উজাড় ঠেকানো এবং হারানো বন পুনর্গঠন এখন মানবতার জ্ঞানের ও সংকল্পের আসল পরীক্ষা। বন বাঁচাতে ব্যর্থ হলে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা অসম্ভব হয়ে পড়বে।


# জলবায়ু_পরিবর্তন, বন_উজাড়, কার্বন_শোষণ, দক্ষিণ_আমেরিকা, আফ্রিকা, চীন, পরিবেশ, সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব

উষ্ণ আবহাওয়ায় বৃক্ষবৃদ্ধি বাড়লেও বিশ্ব উষ্ণায়ন কমেনি

১১:৫০:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

বন কমছে, কিন্তু কার্বন শোষণ বাড়ছে

বনাঞ্চল ধ্বংস ও দাবানলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও, বৈশ্বিকভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) শোষণের পরিমাণ বেড়েছে। ঠান্ডা অঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে গাছপালার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে, যা মোট শোষণ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্ট (GCP)-এর ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে বনভূমি বছরে প্রায় ৫০০ কোটি মেট্রিক টন বেশি CO₂ শোষণ করছে। ১৯৯০ দশক থেকে প্রায় প্রতি বছরই বনভূমি দাবানলসহ অন্যান্য নির্গমনের চেয়ে বেশি CO₂ শোষণ করেছে।


শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে CO₂ ঘনত্বের উল্লম্ফন

১৮শ শতকের শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের ঘনত্ব ক্রমাগত বেড়েছে। ২০২৩ সালে এই ঘনত্ব দাঁড়িয়েছে প্রতি মিলিয়নে ৪২০ অংশে (ppm), যা শিল্পবিপ্লব-পূর্ব ২৭৮ ppm-এর তুলনায় প্রায় ৫০% বেশি। যদিও এই বাড়তি CO₂ পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে, সেই উষ্ণতা ঠান্ডা অঞ্চলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করছে।

তবে এতে আশাবাদী হওয়ার কারণ নেই। জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ-এর কর্মকর্তা ইয়োশিউকি তাকাহাশি বলেন, “বনভূমিতে কার্বন শোষণ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির নির্গমন আরও দ্রুত বাড়ছে—ফলে বায়ুমণ্ডলে CO₂-র পরিমাণ কমছে না।”


বিশ্বব্যাপী বনভূমি হ্রাসে শোষণ কমার আশঙ্কা

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের ভূমির ৩১% বনাঞ্চল ছিল—যা ১৯৯২ সালের ৩৩% থেকে কমে গেছে। মানুষের কর্মকাণ্ড, বিশেষত গাছ কাটা ও বন পোড়ানোর কারণে এই পতন ঘটেছে।

জাতিসংঘ বন ফোরামের সহকারী পরিচালক মিনোরু তাকাদা জানান, “বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটি হেক্টর বন হারিয়ে যাচ্ছে। এতে বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ১০% সমমূল্যের ক্ষতি হচ্ছে।” তিনি সরকার ও বেসরকারি খাতকে বন সংরক্ষণে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।


আঞ্চলিক চিত্র: এশিয়ায় বৃক্ষরোপণ, দক্ষিণে উজাড়

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) তথ্যমতে, ১৯৯০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এশিয়ায় বনভূমি বেড়েছে ৩.৮ কোটি হেক্টর। চীন মরুকরণ ঠেকাতে পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক বনায়ন চালিয়েছে—এর ফলে ৩০ বছরে দেশটির বনভূমির অংশ ১৬.৩% থেকে বেড়ে ২৩.৮%-এ পৌঁছেছে।

ইউরোপেও একই সময়ে ২.৩ কোটি হেক্টর বনভূমি বেড়েছে, যেখানে পরিত্যক্ত চারণভূমি রূপান্তর ও নতুন বৃক্ষরোপণ বড় ভূমিকা রেখেছে।

তবে দক্ষিণ গোলার্ধে (দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা) পরিস্থিতি উল্টো। গত ৩০ বছরে এসব অঞ্চলে ২৪ কোটি হেক্টর বন হারিয়ে গেছে। ব্রাজিলে মাংস ও সয়াবিন উৎপাদনের জন্য বনভূমি কেটে ফেলা হচ্ছে, আর আফ্রিকায় জ্বালানি কাঠ ও কৃষিজমি তৈরির জন্য ব্যাপক গাছ কাটছে মানুষ।


বনের আয়ু ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি

জাপানে বনভূমি দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকলেও, CO₂ শোষণ কমেছে। ২০০৩ সালে যেখানে শোষণের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি টন, ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ৬ কোটি টনের নিচে। মোট বনভূমির আয়তন প্রায় অপরিবর্তিত—২.৫ কোটি হেক্টর—থাকলেও এর উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ বৃক্ষের বার্ধক্য। অধিকাংশ গাছ ৫০ বছর বয়স পেরোলেই বৃদ্ধি মন্থর হয়। জাপানে মোট বনভূমির ৪০% হলো রোপিত বন, যার অর্ধেকের বেশি গাছই ৫০ বছরের বেশি পুরোনো। কার্বন শোষণ বাড়াতে হলে এসব পুরোনো গাছ পাতলা করে কাটা ও নবীন চারাগাছ রোপণ জরুরি।


দাবানল ও জলবায়ু সংকট

এই বছর জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে ভয়াবহ দাবানল দেখা দিয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পাহাড়ি অঞ্চলের শুষ্কতা এই ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বন সংরক্ষণ অপরিহার্য। বন শুধু কার্বন শোষণ করে না, এটি জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পানি বিশুদ্ধ রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


 মানবতার বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা

বন উজাড় ঠেকানো এবং হারানো বন পুনর্গঠন এখন মানবতার জ্ঞানের ও সংকল্পের আসল পরীক্ষা। বন বাঁচাতে ব্যর্থ হলে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা অসম্ভব হয়ে পড়বে।


# জলবায়ু_পরিবর্তন, বন_উজাড়, কার্বন_শোষণ, দক্ষিণ_আমেরিকা, আফ্রিকা, চীন, পরিবেশ, সারাক্ষণ_রিপোর্ট