০৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ তৎপরতা যশোর এখন বাংলাদেশের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ওমানের দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে আট মাস পর ভারতে আটক ১২ বাংলাদেশি নাবিকের দেশে ফেরা নারী অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে ইলা মিত্রের শতবর্ষে নওগাঁয় র‌্যালি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভেনিজুয়েলা: সামরিক প্রস্তুতি ও দুর্বলতা ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুধ খামার বিক্রয়: লাভজনক সুযোগ এবং সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য গঠনমূলক পদক্ষপে ভারতের রুশ তেল কেনার বিষয়ে ট্রাম্পের দাবির প্রতিক্রিয়া ইরানে পুরানো ক্ষত পুনরুজ্জীবিত: মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণে উদ্বেগের নতুন ঢেউ

সহিংস গেম ও ভার্চুয়াল জগৎ: কিশোর মানসিকতায় বিশ্বজুড়ে হিংস্র প্রবণতা

সহিংস ভিডিও গেম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতি নির্ভরশীলতা এখন বিশ্বজুড়ে কিশোরদের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপ থেকে বাংলাদেশ—সবখানেই দেখা যাচ্ছে কিশোরদের মধ্যে রাগ, হিংসা, একাকিত্ব ও আত্মবিধ্বংসী আচরণ বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে যাওয়া তরুণ প্রজন্মের এই সংকট শুধু সামাজিক নয়, এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ও বটে।


কিশোর সহিংসতা: এক বৈশ্বিক সংকট

মালয়েশিয়ার এক স্কুলে ১৬ বছর বয়সী ছাত্রী হত্যার ঘটনা শুধু স্থানীয় অপরাধ নয়, বরং সারা বিশ্বের কিশোর সমাজে বাড়তে থাকা সহিংসতার প্রতীক। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ— সবখানেই কিশোরদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে রাগ, হিংসা ও মানসিক অস্থিরতার বৃদ্ধি। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সহিংস ভিডিও গেম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অবাধ প্রভাব এই আচরণ পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।


গেমের নেশা থেকে বাস্তব সহিংসতা

‘ফ্রি ফায়ার’, ‘পাবজি’, ‘কল অব ডিউটি’ বা অনুরূপ গেমগুলো কিশোরদের মনে এমন এক মানসিক কাঠামো তৈরি করছে, যেখানে হত্যা ও প্রতিশোধ হয়ে উঠছে বিনোদনের অংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, “এই গেমগুলোতে জয়ের মানে প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করা— যা মস্তিষ্কে সহিংস প্রতিক্রিয়া গেঁথে দেয়।” যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণায়ও দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সহিংস গেম খেলে, তারা বাস্তব জীবনে রাগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আক্রমণাত্মক আচরণ প্রদর্শন করে।


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: লাইক-ভিউ প্রতিযোগিতার মানসিক ফাঁদ

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের লাইক ও ভিউ-এর দুনিয়ায় কিশোররা এখন আত্মমূল্যায়ন করছে ভার্চুয়াল জনপ্রিয়তার মাধ্যমে।
ঢাকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাহসিনা রহমান বলেন, “অনেকে বাস্তবে প্রত্যাখ্যান বা ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে অনলাইন জগতে বিকৃত পরিচয় গড়ে তোলে — যা হতাশা ও সহিংসতায় রূপ নেয়।”


বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট: নজরদারির অভাব ও মানসিক চাপ

বাংলাদেশে বহু পরিবারে সন্তানদের অনলাইন সময়ের উপর যথাযথ নজরদারি নেই। রাতভর গেম খেলা, টিকটকে আসক্তি কিংবা অনলাইন বন্ধুত্ব এখন কিশোর বয়সের নতুন বাস্তবতা।
একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক চাপ ও সামাজিক প্রত্যাশা তরুণদের মনে অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে — যার ফলে তারা অনেক সময় ভার্চুয়াল সহিংসতায় নিজেদের প্রকাশ করছে।


সমাধান: পরিবার, স্কুল ও রাষ্ট্রের যৌথ দায়িত্ব

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তরুণদের এই ঝুঁকি থেকে দূরে রাখার পরিবর্তে তাদের সচেতন করা প্রয়োজন। স্কুলে মানসিক সহায়তা ও পরামর্শদান সেশন চালু করা, ডিজিটাল লিটারেসি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা এবং পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
অভিভাবকদেরও জানা দরকার, সন্তান কোন গেম খেলছে এবং কার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখছে।


ভারসাম্যের শিক্ষা সবচেয়ে জরুরি

সহিংস গেম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করলেই সমস্যা মিটবে না; দরকার মানসিক ভারসাম্য শেখানো। তরুণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে— ভার্চুয়াল জগত বাস্তব নয়, আর বাস্তব জীবনের মূল্য কোনো স্কোর বোর্ডে মাপা যায় না।


#ট্যাগ: কিশোর_সহিংসতা, ভিডিও_গেম, সামাজিক_যোগাযোগমাধ্যম, মানসিক_স্বাস্থ্য, বাংলাদেশ, বৈশ্বিক_প্রভাব, শিক্ষা, পরিবার, সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব

সহিংস গেম ও ভার্চুয়াল জগৎ: কিশোর মানসিকতায় বিশ্বজুড়ে হিংস্র প্রবণতা

১২:১০:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

সহিংস ভিডিও গেম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতি নির্ভরশীলতা এখন বিশ্বজুড়ে কিশোরদের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপ থেকে বাংলাদেশ—সবখানেই দেখা যাচ্ছে কিশোরদের মধ্যে রাগ, হিংসা, একাকিত্ব ও আত্মবিধ্বংসী আচরণ বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে যাওয়া তরুণ প্রজন্মের এই সংকট শুধু সামাজিক নয়, এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ও বটে।


কিশোর সহিংসতা: এক বৈশ্বিক সংকট

মালয়েশিয়ার এক স্কুলে ১৬ বছর বয়সী ছাত্রী হত্যার ঘটনা শুধু স্থানীয় অপরাধ নয়, বরং সারা বিশ্বের কিশোর সমাজে বাড়তে থাকা সহিংসতার প্রতীক। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ— সবখানেই কিশোরদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে রাগ, হিংসা ও মানসিক অস্থিরতার বৃদ্ধি। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সহিংস ভিডিও গেম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অবাধ প্রভাব এই আচরণ পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।


গেমের নেশা থেকে বাস্তব সহিংসতা

‘ফ্রি ফায়ার’, ‘পাবজি’, ‘কল অব ডিউটি’ বা অনুরূপ গেমগুলো কিশোরদের মনে এমন এক মানসিক কাঠামো তৈরি করছে, যেখানে হত্যা ও প্রতিশোধ হয়ে উঠছে বিনোদনের অংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, “এই গেমগুলোতে জয়ের মানে প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করা— যা মস্তিষ্কে সহিংস প্রতিক্রিয়া গেঁথে দেয়।” যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণায়ও দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সহিংস গেম খেলে, তারা বাস্তব জীবনে রাগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আক্রমণাত্মক আচরণ প্রদর্শন করে।


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: লাইক-ভিউ প্রতিযোগিতার মানসিক ফাঁদ

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের লাইক ও ভিউ-এর দুনিয়ায় কিশোররা এখন আত্মমূল্যায়ন করছে ভার্চুয়াল জনপ্রিয়তার মাধ্যমে।
ঢাকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাহসিনা রহমান বলেন, “অনেকে বাস্তবে প্রত্যাখ্যান বা ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে অনলাইন জগতে বিকৃত পরিচয় গড়ে তোলে — যা হতাশা ও সহিংসতায় রূপ নেয়।”


বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট: নজরদারির অভাব ও মানসিক চাপ

বাংলাদেশে বহু পরিবারে সন্তানদের অনলাইন সময়ের উপর যথাযথ নজরদারি নেই। রাতভর গেম খেলা, টিকটকে আসক্তি কিংবা অনলাইন বন্ধুত্ব এখন কিশোর বয়সের নতুন বাস্তবতা।
একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক চাপ ও সামাজিক প্রত্যাশা তরুণদের মনে অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে — যার ফলে তারা অনেক সময় ভার্চুয়াল সহিংসতায় নিজেদের প্রকাশ করছে।


সমাধান: পরিবার, স্কুল ও রাষ্ট্রের যৌথ দায়িত্ব

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তরুণদের এই ঝুঁকি থেকে দূরে রাখার পরিবর্তে তাদের সচেতন করা প্রয়োজন। স্কুলে মানসিক সহায়তা ও পরামর্শদান সেশন চালু করা, ডিজিটাল লিটারেসি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা এবং পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
অভিভাবকদেরও জানা দরকার, সন্তান কোন গেম খেলছে এবং কার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখছে।


ভারসাম্যের শিক্ষা সবচেয়ে জরুরি

সহিংস গেম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করলেই সমস্যা মিটবে না; দরকার মানসিক ভারসাম্য শেখানো। তরুণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে— ভার্চুয়াল জগত বাস্তব নয়, আর বাস্তব জীবনের মূল্য কোনো স্কোর বোর্ডে মাপা যায় না।


#ট্যাগ: কিশোর_সহিংসতা, ভিডিও_গেম, সামাজিক_যোগাযোগমাধ্যম, মানসিক_স্বাস্থ্য, বাংলাদেশ, বৈশ্বিক_প্রভাব, শিক্ষা, পরিবার, সারাক্ষণ_রিপোর্ট