০৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ তৎপরতা যশোর এখন বাংলাদেশের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ওমানের দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে আট মাস পর ভারতে আটক ১২ বাংলাদেশি নাবিকের দেশে ফেরা নারী অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে ইলা মিত্রের শতবর্ষে নওগাঁয় র‌্যালি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভেনিজুয়েলা: সামরিক প্রস্তুতি ও দুর্বলতা ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুধ খামার বিক্রয়: লাভজনক সুযোগ এবং সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য গঠনমূলক পদক্ষপে ভারতের রুশ তেল কেনার বিষয়ে ট্রাম্পের দাবির প্রতিক্রিয়া ইরানে পুরানো ক্ষত পুনরুজ্জীবিত: মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণে উদ্বেগের নতুন ঢেউ

ভারতের ‘গ্রেট নিকোবর’ প্রকল্পে অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষার নতুন সমন্বয়

ভারতের পূর্ব ভারত মহাসাগরে অবস্থিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ‘গ্রেট নিকোবর প্রকল্প’ এখন দেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই কেন্দ্রবিন্দুতে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে এই প্রকল্পকে ভারত দেখছে ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্যিক প্রভাব বিস্তারের নতুন ভিত্তি হিসেবে।

ভৌগোলিক নয়ভূরাজনৈতিক মানচিত্রের পরিবর্তন

খ্যাতনামা লেখক রবার্ট ডি. কাপলান তাঁর Monsoon গ্রন্থে লিখেছিলেন—ভৌগোলিক মানচিত্র অপরিবর্তনশীল হলেও ভূরাজনৈতিক মানচিত্র ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়। ভারতের পূর্ব ভারত মহাসাগরে অবস্থিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ‘গ্রেট নিকোবর প্রকল্প’ নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক সেই উক্তিটিকেই নতুনভাবে প্রমাণ করছে, কারণ এ প্রকল্পকে ঘিরে ‘উন্নয়ন বনাম পরিবেশ’, ‘অর্থনীতি বনাম পরিবেশবিদ্যা’, ‘জাতীয় স্বার্থ বনাম উপজাতি স্বার্থ’ ও ‘কৌশল বনাম টেকসই উন্নয়ন’—এই বিতর্কগুলো আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে। কিন্তু এসব বিতর্ক ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে এই প্রকল্পের কৌশলগত গুরুত্বকে খাটো করতে পারে না।

প্রকল্পের সারসংক্ষেপ: উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষাদুই দিকেই লাভ

‘গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড প্রকল্প’-এর মূল লক্ষ্য একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। এতে থাকবে আন্তর্জাতিক কনটেইনার ট্রান্সশিপমেন্ট টার্মিনাল, নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গ্যাস ও সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং আধুনিক টাউনশিপ।
এই অবকাঠামো শুধু ভারতের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়াবে না, বরং এটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। ভারত মহাসাগরে দ্রুত বাড়তে থাকা আঞ্চলিক ও বহিরাগত শক্তিগুলোর প্রভাব মোকাবিলায় এটি হবে ভারতের জন্য কৌশলগত সুবিধার উৎস।

 মালাক্কা দোটানা’ ও বিকল্প পথের খোঁজ

ভারতের উদ্বেগের অন্যতম কারণ হলো চীনের আক্রমণাত্মক ভূরাজনৈতিক উত্থান। দুই দেশই বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির মধ্যে, এবং উভয়েরই লক্ষ্য—ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যপথে নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত রাখা।
চীন দীর্ঘদিন ধরে “মালাক্কা দোটানা” (Malacca Dilemma) নামের এক কৌশলগত ঝুঁকির মুখে রয়েছে, কারণ তাদের ৮০ শতাংশ জ্বালানি ও বাণিজ্য পণ্য মালাক্কা প্রণালীর মধ্য দিয়ে আসে। এই ঝুঁকি কমাতে বেইজিং সরকার বিভিন্ন বিকল্প পথ খুঁজছে—ইন্দোনেশিয়ার লম্বক, ওম্বাই-ওয়েটার প্রণালী ও সান্ডা প্রণালী, কিংবা স্থলপথে করিডর গড়ে তোলার মাধ্যমে।
চীন পাকিস্তানের গওয়াদর বন্দরকেন্দ্রিক “চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC)” এবং মিয়ানমারের কিয়াউকফিউ বন্দর প্রকল্পেও ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যাতে জ্বালানি আমদানির বিকল্প পথ তৈরি হয়।

তবে এই বিকল্পগুলো রাজনৈতিক অস্থিরতা, দূরত্ব ও উচ্চ ব্যয়ের কারণে সম্পূর্ণ কার্যকর হয়নি। ফলে চীন এখনো মালাক্কা প্রণালীর ওপর নির্ভরশীল, যা ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

চীনের সামরিক উপস্থিতি: গবেষণা জাহাজের ছদ্মবেশে গুপ্তচরবৃত্তি

চীন ২০০৮ সাল থেকেই ভারত মহাসাগরে নৌবাহিনী মোতায়েন শুরু করে—প্রথমে জলদস্যু দমন অভিযানে, পরে ২০১৭ সালে জিবুতিতে তাদের প্রথম বিদেশি ঘাঁটি স্থাপন করে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চীনের পরিকল্পিত ১১টি সামরিক ঘাঁটির স্থানই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত।
এছাড়া চীনের তথাকথিত ‘গবেষণা জাহাজ’ প্রায়ই সমুদ্রতল মানচিত্র তৈরির নামে গোয়েন্দা তৎপরতায় লিপ্ত থাকে। ২০২২ সালে এমন দুটি ঘটনায় ভারত তার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থগিত করেছিল, কারণ চীনের গুপ্তচর জাহাজ বঙ্গোপসাগরের জলে প্রবেশ করেছিল। এসব জাহাজ ভারতের উপকূল থেকে মাত্র ২৫০ নটিক্যাল মাইল দূরেও অবস্থান করেছিল।

চীনের এসব ‘সার্ভে জাহাজ’ মিয়ানমারের কোকোস দ্বীপেও কার্যক্রম চালায়, যা আন্দামান থেকে মাত্র ২২ নটিক্যাল মাইল দূরে—একটি সুস্পষ্ট কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।

ভারতের প্রতিকৌশল: আন্দামান-নিকোবরের মাধ্যমে সমুদ্র ও আকাশে প্রাধান্য

এই প্রেক্ষাপটে, গ্রেট নিকোবর দ্বীপটি ভারতের জন্য “প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দুর্গ” হিসেবে কাজ করতে পারে। দ্বীপটি মালাক্কা প্রণালী থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থল।
চীনের দক্ষিণ চীন সাগরে নির্মিত কৃত্রিম দ্বীপগুলোর মতোই ভারত তার প্রাকৃতিক দ্বীপভিত্তিক ঘাঁটি থেকে বিমান ও নৌবাহিনীর শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। নিকোবর দ্বীপে যদি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়, তবে ভারতের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে এবং শত্রু রাষ্ট্রের কার্যক্রম সীমিত করা সম্ভব হবে।

অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ভারসাম্যে ভারতের নতুন পদক্ষেপ

বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নেতৃত্ব ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। সেই লক্ষ্যেই “গ্রেট নিকোবর প্রকল্প” একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ—যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কৌশলগত নিরাপত্তা একসাথে অগ্রসর হচ্ছে।
ভারতের উচিত এই দ্বীপসম্পদগুলোকে শুধু সংরক্ষণ নয়, বরং দূরদর্শীভাবে কাজে লাগানো। প্রকল্পটি এখন শুধু উন্নয়নের প্রতীক নয়, বরং ভারতের সমুদ্রকৌশলগত অবস্থান দৃঢ় করার একটি বাস্তব প্রয়াস।

# ভারত-মহাসাগর, গ্রেট-নিকোবর-প্রকল্প, আন্দামান-নিকোবর, ইন্দো-প্যাসিফিক, চীন-ভারত-প্রতিযোগিতা, প্রতিরক্ষা-নীতি, ভূরাজনীতি, সারাক্ষণ-রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব

ভারতের ‘গ্রেট নিকোবর’ প্রকল্পে অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষার নতুন সমন্বয়

১২:২৬:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

ভারতের পূর্ব ভারত মহাসাগরে অবস্থিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ‘গ্রেট নিকোবর প্রকল্প’ এখন দেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই কেন্দ্রবিন্দুতে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে এই প্রকল্পকে ভারত দেখছে ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্যিক প্রভাব বিস্তারের নতুন ভিত্তি হিসেবে।

ভৌগোলিক নয়ভূরাজনৈতিক মানচিত্রের পরিবর্তন

খ্যাতনামা লেখক রবার্ট ডি. কাপলান তাঁর Monsoon গ্রন্থে লিখেছিলেন—ভৌগোলিক মানচিত্র অপরিবর্তনশীল হলেও ভূরাজনৈতিক মানচিত্র ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়। ভারতের পূর্ব ভারত মহাসাগরে অবস্থিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ‘গ্রেট নিকোবর প্রকল্প’ নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক সেই উক্তিটিকেই নতুনভাবে প্রমাণ করছে, কারণ এ প্রকল্পকে ঘিরে ‘উন্নয়ন বনাম পরিবেশ’, ‘অর্থনীতি বনাম পরিবেশবিদ্যা’, ‘জাতীয় স্বার্থ বনাম উপজাতি স্বার্থ’ ও ‘কৌশল বনাম টেকসই উন্নয়ন’—এই বিতর্কগুলো আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে। কিন্তু এসব বিতর্ক ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে এই প্রকল্পের কৌশলগত গুরুত্বকে খাটো করতে পারে না।

প্রকল্পের সারসংক্ষেপ: উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষাদুই দিকেই লাভ

‘গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড প্রকল্প’-এর মূল লক্ষ্য একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। এতে থাকবে আন্তর্জাতিক কনটেইনার ট্রান্সশিপমেন্ট টার্মিনাল, নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গ্যাস ও সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং আধুনিক টাউনশিপ।
এই অবকাঠামো শুধু ভারতের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়াবে না, বরং এটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। ভারত মহাসাগরে দ্রুত বাড়তে থাকা আঞ্চলিক ও বহিরাগত শক্তিগুলোর প্রভাব মোকাবিলায় এটি হবে ভারতের জন্য কৌশলগত সুবিধার উৎস।

 মালাক্কা দোটানা’ ও বিকল্প পথের খোঁজ

ভারতের উদ্বেগের অন্যতম কারণ হলো চীনের আক্রমণাত্মক ভূরাজনৈতিক উত্থান। দুই দেশই বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির মধ্যে, এবং উভয়েরই লক্ষ্য—ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যপথে নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত রাখা।
চীন দীর্ঘদিন ধরে “মালাক্কা দোটানা” (Malacca Dilemma) নামের এক কৌশলগত ঝুঁকির মুখে রয়েছে, কারণ তাদের ৮০ শতাংশ জ্বালানি ও বাণিজ্য পণ্য মালাক্কা প্রণালীর মধ্য দিয়ে আসে। এই ঝুঁকি কমাতে বেইজিং সরকার বিভিন্ন বিকল্প পথ খুঁজছে—ইন্দোনেশিয়ার লম্বক, ওম্বাই-ওয়েটার প্রণালী ও সান্ডা প্রণালী, কিংবা স্থলপথে করিডর গড়ে তোলার মাধ্যমে।
চীন পাকিস্তানের গওয়াদর বন্দরকেন্দ্রিক “চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC)” এবং মিয়ানমারের কিয়াউকফিউ বন্দর প্রকল্পেও ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যাতে জ্বালানি আমদানির বিকল্প পথ তৈরি হয়।

তবে এই বিকল্পগুলো রাজনৈতিক অস্থিরতা, দূরত্ব ও উচ্চ ব্যয়ের কারণে সম্পূর্ণ কার্যকর হয়নি। ফলে চীন এখনো মালাক্কা প্রণালীর ওপর নির্ভরশীল, যা ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

চীনের সামরিক উপস্থিতি: গবেষণা জাহাজের ছদ্মবেশে গুপ্তচরবৃত্তি

চীন ২০০৮ সাল থেকেই ভারত মহাসাগরে নৌবাহিনী মোতায়েন শুরু করে—প্রথমে জলদস্যু দমন অভিযানে, পরে ২০১৭ সালে জিবুতিতে তাদের প্রথম বিদেশি ঘাঁটি স্থাপন করে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চীনের পরিকল্পিত ১১টি সামরিক ঘাঁটির স্থানই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত।
এছাড়া চীনের তথাকথিত ‘গবেষণা জাহাজ’ প্রায়ই সমুদ্রতল মানচিত্র তৈরির নামে গোয়েন্দা তৎপরতায় লিপ্ত থাকে। ২০২২ সালে এমন দুটি ঘটনায় ভারত তার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থগিত করেছিল, কারণ চীনের গুপ্তচর জাহাজ বঙ্গোপসাগরের জলে প্রবেশ করেছিল। এসব জাহাজ ভারতের উপকূল থেকে মাত্র ২৫০ নটিক্যাল মাইল দূরেও অবস্থান করেছিল।

চীনের এসব ‘সার্ভে জাহাজ’ মিয়ানমারের কোকোস দ্বীপেও কার্যক্রম চালায়, যা আন্দামান থেকে মাত্র ২২ নটিক্যাল মাইল দূরে—একটি সুস্পষ্ট কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।

ভারতের প্রতিকৌশল: আন্দামান-নিকোবরের মাধ্যমে সমুদ্র ও আকাশে প্রাধান্য

এই প্রেক্ষাপটে, গ্রেট নিকোবর দ্বীপটি ভারতের জন্য “প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দুর্গ” হিসেবে কাজ করতে পারে। দ্বীপটি মালাক্কা প্রণালী থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থল।
চীনের দক্ষিণ চীন সাগরে নির্মিত কৃত্রিম দ্বীপগুলোর মতোই ভারত তার প্রাকৃতিক দ্বীপভিত্তিক ঘাঁটি থেকে বিমান ও নৌবাহিনীর শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। নিকোবর দ্বীপে যদি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়, তবে ভারতের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে এবং শত্রু রাষ্ট্রের কার্যক্রম সীমিত করা সম্ভব হবে।

অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ভারসাম্যে ভারতের নতুন পদক্ষেপ

বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নেতৃত্ব ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। সেই লক্ষ্যেই “গ্রেট নিকোবর প্রকল্প” একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ—যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কৌশলগত নিরাপত্তা একসাথে অগ্রসর হচ্ছে।
ভারতের উচিত এই দ্বীপসম্পদগুলোকে শুধু সংরক্ষণ নয়, বরং দূরদর্শীভাবে কাজে লাগানো। প্রকল্পটি এখন শুধু উন্নয়নের প্রতীক নয়, বরং ভারতের সমুদ্রকৌশলগত অবস্থান দৃঢ় করার একটি বাস্তব প্রয়াস।

# ভারত-মহাসাগর, গ্রেট-নিকোবর-প্রকল্প, আন্দামান-নিকোবর, ইন্দো-প্যাসিফিক, চীন-ভারত-প্রতিযোগিতা, প্রতিরক্ষা-নীতি, ভূরাজনীতি, সারাক্ষণ-রিপোর্ট