০৭:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
শান্তিরক্ষা মিশন থেকে কন্টিনজেন্ট ফেরত পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন ১৩ বছর বয়সী জে টেলরের আত্মহত্যার পেছনে রহস্য: FBI-র তদন্তে ‘হোয়াইট টাইগার’ এর সন্ধান সেনাপ্রধানের সাথে কুয়েতের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী H.E. Sameeh Essa Johar Hayat এর সৌজন্য সাক্ষাৎ ধারাবাহিক পতনে ধসের মুখে শেয়ারবাজার — ৫ হাজার পয়েন্ট সীমার কাছাকাছি ডিএসই সূচক তিন দফা দাবিতে অনড় এমপিও শিক্ষকরা, ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সিলেটের অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল বিএনপিকে জুলাই আন্দোলনের বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হবে — সালাহউদ্দিন জামায়াতের ‘পিআর আন্দোলন’ আসলে পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা — নাহিদ ইসলাম শাহজালাল বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে নষ্ট হলো পোশাক খাতের কাঁচামাল ও ব্যবসায়িক নমুনা শিরোনাম: মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা যাবে না—এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আপিলের শুনানি নির্ধারিত

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৪৩)

মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবী পুঠিয়া নিবাসী একজন সম্ভ্রান্ত জমিদার ভৈরবনাথ সান্যালের কন্যা ছিলেন। বাল্যকাল হইতেই এই কন্যার হৃদয় দয়া ও উদারতায় পরিপূর্ণ ছিল, যদিচ পিতৃগৃহে কোনরূপ লেখাপড়া শিক্ষা করেন নাই। ইহার প্রায় ছয় বৎসর বয়সের সময় রাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ রায়ের সহিত বিবাহ এবং তিনি প্রায় ১৩ বৎসর বয়সে বিধবা হন। তাহার পর প্রায় ২৫ বৎসর তিনি জীবিতা ছিলেন। পতিগৃহে আসিয়া বিধবা হইবার পূর্বে পতির ভালবাসা ও যত্নে সামান্য লেখাপড়া শিক্ষা করেন এবং পতির পরলোক গমনের পর সেই সামান্য শিক্ষা ক্রমে বৃদ্ধি পাইয়া তাহার নির্মল জ্ঞান এবং পবিত্র দেবচরিত্রের এত উৎকর্ষতা লাভ করে যে তাহাকে সামান্য মানবী না বলিয়া দেবী বলিলে অত্যুক্তি হয় না। আর্যজাতির বিবাহের প্রণালী এত উৎকৃষ্ট যে পতিপত্নী উভয়ে ধর্ম বন্ধনে সম্বন্ধ থাকিয়া পরস্পর পরস্পরের সহিত ধর্ম পালন করিবে। কিন্তু হায়! ভারতের কি দুর্দশা, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে এবং উনবিংশতীর সভ্যতা ও বিলাসিতার দুর্দমনীয় অত্যাচারে, এই ধর্মবন্ধনী ক্রমে শিথিল হইয়া যাইতেছে। এই ভারতের দুর্ভাগ্য। এমন দুঃসময়ে সেই রমণী শৈশবকাল হইতে যৌবনের অতীতকাল পর্যন্ত এক মনে, এক হৃদয়ে, এক আত্মায় পতির প্রিয় কার্য সাধনে, নারী ধর্ম প্রতিপালনে, স্বধর্ম রক্ষণে,

 

দীনদুঃখীর দুঃখমোচনে এবং প্রজাগণকে পুত্রবৎ প্রতিপালনে, নিজ অনিত্য দেহকে বিসর্জন দিয়াছেন। “স্বামী স্ত্রীলোকদিগের তীর্থ, তপস্যা, দান, ব্রত এবং গুরু। অতএব নারী সর্বান্তঃকরণে পতি সেবা করিবে।”৩৫ আর্যজাতির বিবাহ বন্ধন এইরূপ যে স্বামীর অভাবেও সম্বন্ধ ছিন্ন হয় না। পতি জীবিত থাকিতে স্ত্রী সর্বান্তঃকরণে তাহার সেবা কবিবে এবং পতিব্রতা সাধ্বীভাবে থাকিয়া তাহার প্রিয়কার্য সাধন করিবে; আবার পতির অভাব হইলে ব্রহ্মচারিণী বেশে সেই পতিকে ধ্যান করিয়া মনে মনে তাহারই চরণ পূজা করিবে এবং দেবার্চনা, দয়া ও দান ধর্মদ্বারা চিত্তকে পবিত্র রাখিবে। “যে ভার্যা পতির প্রিয় ও হিতকার্যে নিযুক্ত থাকেন এবং সদাচারী ও সংযতেন্দ্রিয়া হয়েন, তিনি ইহলোকে কীর্তি ও পরলোকে অনুপম সুখ প্রাপ্ত হয়েন।৩৬ নারী কোন কালে স্বাধীন নহে। বিবাহের পূর্বে নারী পিতার অধীন, বিবাহ হইলে পতির অধীন, এবং পতির অভাবে তিনি সকল জগতের-প্রজার, দীন ও দুঃখীর-দাস ও অধীনা ছিলেন। এই আদর্শের নারীই মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবী ছিলেন। বাল্যকাল হইতে তাহার জীবিতকাল পর্যন্ত এরূপ পতিপ্রাণ; পতিব্রতী, সাধ্বী, দয়াশীলা ও দানশীলা রমণী ভারতে দৃষ্টিগোচর হয় না।

 

রাজারাণী হইয়া মৃত্তিকা যাহার শয্যা ছিল; হস্ত যাহার বালিশ ছিল। এক মুষ্টি আতপ তণ্ডুল যাহার জীবন রক্ষার প্রধান উপাদান ছিল, পতি ও দেবসেবায় যাহার শরীর অর্পিত হইয়াছিল, যাহার অতুল ধনরাশি দীন দুঃখীর সেবায় নিয়োজিত ছিল, যাহার যাবতীয় ধর্ম ও কর্ম, নিষ্কাম ও নিঃস্বার্থ ভাবে নির্বাহিত হইয়াছিল, তাহাকে আমি কেন, জগতের সকলেই এক বাক্যে বলিবে যে তিনি মানবী নহে; তিনি দেবী। তিনি নিশ্চয়ই মুক্তি-লাভ করিয়া ব্রহ্মলোকে বাস করিতেছেন।

 

যতদিন এজগতে চন্দ্রসূর্য বিদ্যমান থাকিবে, ততদিন তাহার কীর্তিও এ জগতে জীবিত থাকিবে

জনপ্রিয় সংবাদ

শান্তিরক্ষা মিশন থেকে কন্টিনজেন্ট ফেরত পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৪৩)

০৪:৫২:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবী পুঠিয়া নিবাসী একজন সম্ভ্রান্ত জমিদার ভৈরবনাথ সান্যালের কন্যা ছিলেন। বাল্যকাল হইতেই এই কন্যার হৃদয় দয়া ও উদারতায় পরিপূর্ণ ছিল, যদিচ পিতৃগৃহে কোনরূপ লেখাপড়া শিক্ষা করেন নাই। ইহার প্রায় ছয় বৎসর বয়সের সময় রাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ রায়ের সহিত বিবাহ এবং তিনি প্রায় ১৩ বৎসর বয়সে বিধবা হন। তাহার পর প্রায় ২৫ বৎসর তিনি জীবিতা ছিলেন। পতিগৃহে আসিয়া বিধবা হইবার পূর্বে পতির ভালবাসা ও যত্নে সামান্য লেখাপড়া শিক্ষা করেন এবং পতির পরলোক গমনের পর সেই সামান্য শিক্ষা ক্রমে বৃদ্ধি পাইয়া তাহার নির্মল জ্ঞান এবং পবিত্র দেবচরিত্রের এত উৎকর্ষতা লাভ করে যে তাহাকে সামান্য মানবী না বলিয়া দেবী বলিলে অত্যুক্তি হয় না। আর্যজাতির বিবাহের প্রণালী এত উৎকৃষ্ট যে পতিপত্নী উভয়ে ধর্ম বন্ধনে সম্বন্ধ থাকিয়া পরস্পর পরস্পরের সহিত ধর্ম পালন করিবে। কিন্তু হায়! ভারতের কি দুর্দশা, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে এবং উনবিংশতীর সভ্যতা ও বিলাসিতার দুর্দমনীয় অত্যাচারে, এই ধর্মবন্ধনী ক্রমে শিথিল হইয়া যাইতেছে। এই ভারতের দুর্ভাগ্য। এমন দুঃসময়ে সেই রমণী শৈশবকাল হইতে যৌবনের অতীতকাল পর্যন্ত এক মনে, এক হৃদয়ে, এক আত্মায় পতির প্রিয় কার্য সাধনে, নারী ধর্ম প্রতিপালনে, স্বধর্ম রক্ষণে,

 

দীনদুঃখীর দুঃখমোচনে এবং প্রজাগণকে পুত্রবৎ প্রতিপালনে, নিজ অনিত্য দেহকে বিসর্জন দিয়াছেন। “স্বামী স্ত্রীলোকদিগের তীর্থ, তপস্যা, দান, ব্রত এবং গুরু। অতএব নারী সর্বান্তঃকরণে পতি সেবা করিবে।”৩৫ আর্যজাতির বিবাহ বন্ধন এইরূপ যে স্বামীর অভাবেও সম্বন্ধ ছিন্ন হয় না। পতি জীবিত থাকিতে স্ত্রী সর্বান্তঃকরণে তাহার সেবা কবিবে এবং পতিব্রতা সাধ্বীভাবে থাকিয়া তাহার প্রিয়কার্য সাধন করিবে; আবার পতির অভাব হইলে ব্রহ্মচারিণী বেশে সেই পতিকে ধ্যান করিয়া মনে মনে তাহারই চরণ পূজা করিবে এবং দেবার্চনা, দয়া ও দান ধর্মদ্বারা চিত্তকে পবিত্র রাখিবে। “যে ভার্যা পতির প্রিয় ও হিতকার্যে নিযুক্ত থাকেন এবং সদাচারী ও সংযতেন্দ্রিয়া হয়েন, তিনি ইহলোকে কীর্তি ও পরলোকে অনুপম সুখ প্রাপ্ত হয়েন।৩৬ নারী কোন কালে স্বাধীন নহে। বিবাহের পূর্বে নারী পিতার অধীন, বিবাহ হইলে পতির অধীন, এবং পতির অভাবে তিনি সকল জগতের-প্রজার, দীন ও দুঃখীর-দাস ও অধীনা ছিলেন। এই আদর্শের নারীই মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবী ছিলেন। বাল্যকাল হইতে তাহার জীবিতকাল পর্যন্ত এরূপ পতিপ্রাণ; পতিব্রতী, সাধ্বী, দয়াশীলা ও দানশীলা রমণী ভারতে দৃষ্টিগোচর হয় না।

 

রাজারাণী হইয়া মৃত্তিকা যাহার শয্যা ছিল; হস্ত যাহার বালিশ ছিল। এক মুষ্টি আতপ তণ্ডুল যাহার জীবন রক্ষার প্রধান উপাদান ছিল, পতি ও দেবসেবায় যাহার শরীর অর্পিত হইয়াছিল, যাহার অতুল ধনরাশি দীন দুঃখীর সেবায় নিয়োজিত ছিল, যাহার যাবতীয় ধর্ম ও কর্ম, নিষ্কাম ও নিঃস্বার্থ ভাবে নির্বাহিত হইয়াছিল, তাহাকে আমি কেন, জগতের সকলেই এক বাক্যে বলিবে যে তিনি মানবী নহে; তিনি দেবী। তিনি নিশ্চয়ই মুক্তি-লাভ করিয়া ব্রহ্মলোকে বাস করিতেছেন।

 

যতদিন এজগতে চন্দ্রসূর্য বিদ্যমান থাকিবে, ততদিন তাহার কীর্তিও এ জগতে জীবিত থাকিবে