এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–কর্মচারীরা তাঁদের তিন দফা দাবির প্রজ্ঞাপন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সোমবার, ২০ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন। দাবিগুলো হলো—মূল বেতনের ওপর ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা। রবিবার, ১৯ অক্টোবর বিকেলে ঢাকার হাইকোর্ট মাজার মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী এই ঘোষণা দেন।
প্রেক্ষাপট ও সময়রেখা
- ১২ অক্টোবর থেকে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–কর্মচারীরা বেতন–ভাতা কাঠামো উন্নয়নের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছেন।
- ১৮ অক্টোবর কালো পতাকা মিছিল ও অনশন, ১৯ অক্টোবর থালা–বাটি হাতে ‘ভুখা মিছিল’ অনুষ্ঠিত হয়।
- ১৯ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
- ঘোষণামতে, ২০ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশন শুরু হবে।
দাবির সারসংক্ষেপ (৩ দফা)
মূল বেতনের ওপর ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া সংযোজন।
প্রতিমাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা প্রদান
কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা কার্যকর করা।
আয়োজকদের বক্তব্য
অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী বলেন, সরকারের ঘোষিত ৫ শতাংশ বাড়িভাড়াকে তাঁরা ‘প্রাথমিক বিজয়’ হিসেবে দেখছেন; কিন্তু চূড়ান্ত সাফল্য হবে তখনই, যখন ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, মাসিক ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার পাশাপাশি তাঁরা শাহবাগ অবরোধ, টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ, অনশন, কালো পতাকা মিছিল ও ‘ভুখা মিছিল’—সব কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মাঠের পরিস্থিতি
টানা কর্মসূচির কারণে ১৮ ও ১৯ অক্টোবর অন্তত কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন বলে নেতাকর্মীরা জানান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা, তিন নেতার মাজার ও আশপাশের স্থানে অনেক শিক্ষক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে অবস্থান নেন। সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে; এতে প্রতিবাদ ও মানববন্ধনের কর্মসূচিও হয়েছে।
‘ভুখা মিছিল’: দিনের দৃশ্যপট
রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে শিক্ষকরা থালা–বাটি হাতে ‘ভুখা মিছিল’ শুরু করেন। মিছিলে অংশ নেওয়া একাংশ শিক্ষা ভবনের দিকে যাত্রা করলেও অনেকেই শহীদ মিনার এলাকায় থেকে স্লোগান ও সমাবেশে যুক্ত থাকেন। মিছিল–সমাবেশ শেষে তাঁরা আবার শহীদ মিনারেই অবস্থান নেন এবং সেখানে অনশন চলতে থাকে।
রাজনৈতিক যোগাযোগ ও সমন্বয়
রবিবার দুপুরে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পর পূর্বঘোষিত সময় থেকে সামান্য পিছিয়ে বিকাল ৩টায় ‘ভুখা মিছিল’ শুরু হয়। নেতারা জানান, আন্দোলনের স্বার্থে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সংলাপ ও যোগাযোগ অব্যাহত আছে; তবে প্রধান লক্ষ্য তিন দফা দাবির প্রজ্ঞাপন নিশ্চিত করা।
শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গ
শিক্ষক সমাবেশে শিক্ষা উপদেষ্টা সি. আর. আবরারের পদত্যাগের দাবি উত্থাপিত হয়। জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি পর্যবেক্ষণে আছে। আর্থিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা দেশের বাইরে থাকায় তাঁর ফেরার পর পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী অবস্থান নেওয়া হবে। নেতারা বলেন, যদি অসহযোগিতা চলতে থাকে, তাহলে আন্দোলন ‘এক দফা’ লক্ষ্যেও গতি পেতে পারে।
প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত
প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের মতে, আংশিক সিদ্ধান্ত নয়, মাঠের শিক্ষক–কর্মচারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র সমাধান হলো পূর্ণাঙ্গ প্রজ্ঞাপন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, সরকারের আংশিক স্বীকৃতি তাঁদের আন্দোলনের ন্যায্যতা প্রমাণ করে; তবে বাস্তব সুফল পেতে হলে তিন দফা দাবির প্রজ্ঞাপন জরুরি। তাই সোমবার থেকে ঘোষিত আমরণ অনশন কর্মসূচিকে তাঁরা ‘চূড়ান্ত চাপ’ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে দেখছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মসূচি ও কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
#এমপিওভুক্ত_শিক্ষক #আমরণ_অনশন #বাড়িভাড়া_ভাতা #চিকিৎসা_ভাতা #উৎসব_ভাতা #শিক্ষা_আন্দোলন #শহীদ_মিনার #ঢাকা #কালো_পতাকা_মিছিল #ভুখা_মিছিল #কর্মবিরতি #প্রজ্ঞাপন #বাংলাদেশ_শিক্ষা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট