বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সাংবাদিকের ওপর মারধরের ঘটনা দলীয় মহল ও গণমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের মতে, মনোনয়ন সাক্ষাৎকার চলাকালে কার্যালয়ের কিছু স্টাফের হাতে একাধিক সাংবাদিক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার আগে এই ঘটনাকে অনেকেই নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির কারণ হিসেবে দেখছেন।
ঘটনার বিবরণ
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার চলছিল। এ সময় দৈনিক আমার দেশ-এর প্রতিবেদক জাহিদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন স্টাফ এসে তাকে টেনে নিয়ে যান, মারধর করেন এবং তার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন বলে অভিযোগ।
জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তিনি ভিডিও করা বন্ধ করতে রাজি ছিলেন, কিন্তু কোনো সতর্কতা ছাড়াই তাকে মারধর করা হয় ও কার্যালয়ের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। ঘটনার সময় আরও কয়েকজন সাংবাদিক — যেমন জাগো নিউজ-এর খালিদ হোসেন, ডেইলি স্টার-এর সাজ্জাদ এবং নয়া দিগন্ত-এর অসীম আল ইমরান — হেনস্তার শিকার হন।
দলের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, “ঘটনাটি দুঃখজনক। আমি শীর্ষ মহলকে জানিয়েছি।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি কার্যালয়ে ‘কে কতো প্রভাবশালী’ তা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা চলে, যা শৃঙ্খলা ভেঙে দেয়। দলীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন, এই ধরনের ঘটনা তারেক রহমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
সাংবাদিক মহলের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর বিএনপি বিট কাভার করা সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। একজন সাংবাদিককে রক্তাক্ত করা, মোবাইল ভাঙচুর এবং আইডি কার্ড কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের চিন্তাভাবনাও চলছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মির্জা ফখরুলের দুঃখপ্রকাশ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন,
“গুলশান কার্যালয়ে হামলায় আমার দেশ-এর রিপোর্টার জাহিদ হাসান আহত হয়েছেন এবং অন্যান্য সাংবাদিক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। সাংবাদিকরা রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম জনগণের কাছে পৌঁছে দেন—এটাই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভিত্তি। আজকের ঘটনা সম্পূর্ণ ভুল বোঝাবুঝি থেকে সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
গুলশান কার্যালয়ের এই সহিংস ঘটনার পর বিএনপি ও গণমাধ্যম উভয় মহলে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক যোগাযোগে সহনশীলতা ও গণমাধ্যমের প্রতি সম্মান না থাকলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আরও দুর্বল হবে।
# বিএনপি, সাংবাদিক নির্যাতন, তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল, গুলশান কার্যালয়, গণমাধ্যম, সারাক্ষণ রিপোর্ট