কৈশোরের এক আবিষ্কার
১৯৮০ সালে, বয়স তখন ১৭। সেই সময়েই ব্রুস স্প্রিংস্টিনের সঙ্গীতের সঙ্গে প্রথম পরিচয়। তখন কল্পনাও করিনি, এই সঙ্গীতিক সংযোগ টিকে যাবে জীবনের পরবর্তী ৪৫ বছর ধরে। এখন ফিরে তাকিয়ে বুঝি, কতটা ভাগ্যবান ছিলাম এমন এক শিল্পীকে বেছে নিতে, যিনি কেবল তারুণ্যের প্রতীকই নন, বরং স্থায়ী সৃষ্টিশীলতারও প্রতিমূর্তি।
ব্রুস: শুধুই স্মৃতিচারণ নয়, অবিরাম নবজন্ম
ব্রুস স্প্রিংস্টিন অন্যদের মতো শুধু পুরনো হিট গান গেয়ে যান না। তিনি সময়ের সঙ্গে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন—কখনো ডিলানধর্মী কবি, কখনো এলভিস-প্রভাবিত রকার, কখনো লোকগানের কণ্ঠস্বর, কখনো ব্রডওয়ে-শিল্পী, কিংবা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কান্ট্রি গল্পকার ও আত্মার সুরকার।
তার সঙ্গীতের মূলে রয়েছে সাধারণ মানুষের গল্প—যৌবনের ভুল বোঝাবুঝি, মধ্যবয়সের ভাঙা স্বপ্ন, কিংবা বার্ধক্যের হারানোর বেদনা। এই ধারাবাহিক মানবিকতার কারণেই তিনি আজও প্রাসঙ্গিক।
‘নেব্রাস্কা’: অন্ধকার থেকে আলোর পথে

তার সৃষ্টিশীল জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ে জন্ম নেয় অ্যালবাম “নেব্রাস্কা”—যা তিনি একাই নিজের ঘরে রেকর্ড করেছিলেন। সেই নিঃসঙ্গ সুরগুলো হয়তো সহজ ছিল না—কিন্তু সত্য ছিল। অনেক ভক্তের মতো আমিও প্রথমে বুঝিনি, পরে উপলব্ধি করেছি—একজন শিল্পীর আত্ম-অনুসন্ধানকে অনুসরণ করা পুরনো সাফল্য পুনরাবৃত্তির চেয়ে অনেক গভীর অভিজ্ঞতা।
‘বর্ন ইন দ্য ইউ.এস.এ.’ এবং তারুণ্যের উল্লাস
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন, ব্রুসের “বর্ন ইন দ্য ইউ.এস.এ.” প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যেন এক নতুন যুগের সূচনা হয়। বন্ধুদের সঙ্গে এক গ্যাস স্টেশনের উপর의 অ্যাপার্টমেন্টে সারাদিন বাজত সেই রেকর্ড। তখনকার উচ্ছ্বাস আজও মনে গেঁথে আছে—প্রথম কনসার্টে যাওয়া, গানের তালে মেতে ওঠা, আর জীবনের এক বড় স্মৃতি তৈরি হওয়া।
জীবনের পর্যায়ে পর্যায়ে ব্রুস
গত কয়েক দশকে আমি প্রায় ২৫ বার ব্রুসের কনসার্টে গিয়েছি—কখনো পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে, কখনো সহকর্মীদের নিয়ে—এমনকি একবার আমার বসকেও নিয়ে গিয়েছিলাম ‘দ্য বস’-এর শো দেখতে। কিন্তু সবচেয়ে আবেগময় মুহূর্ত ছিল ২০০২ সালের এক সন্ধ্যায়, যখন আমি আর আমার স্ত্রী একসঙ্গে প্রথমবার স্প্রিংস্টিন কনসার্টে যাই।

ঠিক সেই বছরেই বেরিয়েছিল “দ্য রাইজিং”, ৯/১১ হামলার পর সৃষ্ট এক সান্ত্বনাদায়ক অ্যালবাম। এর গানগুলো—“এম্পটি স্কাই”, “মাই সিটি অব রুইনস”—আমার হৃদয়ের খুব কাছের—কারণ আমি নিজেই ব্রুকলিন ব্রিজে ছিলাম সেদিন।
পরিবারে ‘দ্য বস’-এর উত্তরাধিকার
আমার মেয়ের জন্মের কিছু পর থেকেই ব্রুসের গান হয়ে ওঠে পরিবারের অংশ। বড়দিনের আগের রাতে, গাড়িতে করে যাত্রার সময়, রেডিওতে যখন তার লাইভ “সান্তা ক্লজ ইজ কামিং টু টাউন” বাজল—সেটাই যেন এক ছোট্ট অলৌকিকতা।
পরে যখন আমরা ফ্রিহোল্ড, নিউ জার্সিতে—ব্রুসের শহরে—একটি ব্যবহৃত গাড়ি কিনলাম, তাতে আগে থেকেই ছিল ‘E Street Radio’। আমরা গাড়িটির নাম দিলাম ‘ব্রুসমোবাইল’—আর বছরের পর বছর সেই রেডিওতেই বাজত শুধু স্প্রিংস্টিন।
প্রজন্মান্তরে স্প্রিংস্টিনের সেতুবন্ধন
আমার মেয়ের প্রথম কনসার্ট ছিল “দ্য রিভার” অ্যালবামের ৩৫তম বার্ষিকী ট্যুর, যেটি আমারও প্রথম ছিল।
যখন সে গান গেয়ে উঠল “আই’ম আ রকার”, পাশের আসনে বসা দুই বৃদ্ধ ভক্ত আমাকে থাম্বস-আপ দিলেন—যেন বললেন, “ভালো কাজ করেছো, বাবা।” সেই মুহূর্তটা জীবনের অন্যতম পরম প্রাপ্তি।

সময়, মৃত্যু এবং শেষ নোট
কোভিড মহামারির সময়, ট্যুর বন্ধ হয়ে গেলে ব্রুস নিজের বাড়ি থেকে “ফ্রম মাই হোম টু ইউরস” নামে রেডিও শো শুরু করেন—ভক্তদের সঙ্গে সংযোগ রাখার এক অনন্য উদ্যোগ।
তার সাম্প্রতিক শো-গুলোয় স্পষ্ট, তিনি এখন জীবনের শেষ অধ্যায় নিয়ে কথা বলেন। ৭৩ বছর বয়সে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “এখন আমার কাছে অনেক বেশি গতকাল আছে—আর অনেক বেশি বিদায়।”
সেই কনসার্টের কেন্দ্রীয় গান “লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডিং”—তার স্কুলজীবনের ব্যান্ডের একমাত্র জীবিত সদস্য হিসেবে তার অনুভূতি।
কিন্তু ঠিক তখনই, সুর বয়ে আসে আমার জীবনের প্রিয় গান “জঙ্গলল্যান্ড”-এর আর আমি আর আমার মেয়ে একসঙ্গে গেয়ে উঠি—বয়স, সময়, আর প্রজন্মের সীমা পেরিয়ে।
চার দশক ধরে ব্রুস স্প্রিংস্টিনের গান শুধু বিনোদন নয়, জীবনের সহযাত্রী। তার সুরে আছে প্রেম, বেদনা, প্রতিরোধ এবং বেঁচে থাকার সাহস।
আমার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে ‘দ্য বস’-এর গান যেন স্মরণ করিয়ে দেয়—বয়স যতই হোক, সঙ্গীতই আমাদের রাখে জীবন্ত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















