শিল্পী হিসেবে সীমার বাইরে নোরা ফাতেহি
বলিউড অভিনেত্রী, গায়িকা ও পারফর্মার নোরা ফাতেহি বিশ্বাস করেন, একজন শিল্পীকে কখনো কোনো ছাঁচে ফেলা উচিত নয়। গালফ নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “একজন শিল্পীকে কখনো সীমাবদ্ধ বা স্টেরিওটাইপ করা উচিত নয়, কারণ শিল্প সবসময় বহুমাত্রিক।”
দুবাইয়ের সিটি সেন্টার ডেইরায় অনুষ্ঠানের আগে তার লম্বা শাড়ির পেছনের কাপড় ট্রেইনে পরিণত হয়ে যেন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি, বরং তা যেন তার প্রতীকী সংগ্রামকে ফুটিয়ে তুলেছিল। তার মূল চিন্তা ছিল, তাকে কেবল নাচ বা সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে নয়, বরং একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পী হিসেবে মানুষ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া: অনুপ্রেরণার প্রতীক
নোরা ফাতেহি বলেন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস প্রমাণ করেছেন, একজন শিল্পী যেকোনো সময় নিজের পরিচয় নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারেন। “আমি প্রিয়াঙ্কার গল্প ভালোবাসি, কারণ তিনি তা প্রমাণ করেছেন এবং সফল হয়েছেন। আমিও আশা করি, একদিন আমিও তা করতে পারব,” বলেন নোরা।
দুবাই: বৈচিত্র্যের শহর ও নোরার কেন্দ্র
দুবাইয়ের প্রতি নিজের টান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নোরা বলেন, “দুবাই হলো সুযোগের শহর। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে নানা সংস্কৃতির মানুষ ও শিল্পীরা একই মঞ্চে আসে এবং একে অপরের প্রতিভা গ্রহণ করে।”

তার ভাষায়, দুবাই শুধু তার ক্যারিয়ারের স্টপওভার নয়, এটি তার পরিচয়ের প্রতিফলন—একজন বিশ্বনাগরিক শিল্পীর। “আমি নিজেকে গ্লোবাল সিটিজেন বলতে গর্ববোধ করি। দুবাইও এমন একটি শহর, যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একত্র হয়, দীপাবলির মতো উৎসব একসঙ্গে উদযাপন করে,” বলেন তিনি।
ভারতীয়, আরব ও উত্তর আফ্রিকান ভক্তদের মিলনস্থল
দুবাইয়ে তার ভারতীয়, আরব ও উত্তর আফ্রিকান ভক্তদের মিলন ঘটে—যা তাকে এক বিশেষ সংযোগ দেয়। “প্রতিবার দুবাইয়ে এসে আমি ভক্তদের ভালোবাসা অনুভব করি। ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মের, হলেও তারা আমার শিল্পকে সমর্থন করে, যা আমাকে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ করে তোলে,” জানান নোরা।
টরন্টোতে শুরু, মুম্বাই নয়
নোরা ফাতেহির দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার সূচনা হয়েছিল কানাডার টরন্টো শহরে। “আমরা স্কুলে ‘সাউথ এশিয়ান মান্থ’ উদযাপন করতাম, সুন্দর লেহেঙ্গা ও শাড়ি পরতাম, দীপাবলি পালন করতাম। তখনই আমি এই সংস্কৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলাম,” বলেন তিনি।
বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা ও পরিশ্রমের গল্প
নোরা এখন বলিউডের এমন এক তারকা, যার গান ইউটিউবে টেইলর সুইফটকেও ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া তিনি কাতারে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন—যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

তবে তিনি এই সাফল্যকে ভাগ্যের ফল নয়, পরিশ্রমের প্রতিফলন হিসেবে দেখেন। “আমি কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষিত নই, কিন্তু আমি সময়, শ্রম ও ভালোবাসা দিয়েছি। আর সেই ফলই মানুষ সেদিন দেখেছিল,” বলেন তিনি।
“আনটোল্ড ফেস্টিভ্যাল”-এ নতুন অধ্যায়
নোরা ৭ নভেম্বর দুবাইয়ের “আনটোল্ড ফেস্টিভ্যাল”-এ প্রধান শিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠবেন। “এবার আমার সঙ্গে অনেক আন্তর্জাতিক ডিজে থাকবেন। আমি ৭ নভেম্বরের প্রধান পারফর্মার এবং দুটি বড় সারপ্রাইজ রাখছি। এখানেই আমি আমার নতুন গানটি প্রথমবার প্রকাশ করব,” বলেন তিনি।
নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো নতুন গান
তার নতুন গানটির নাম ‘হোয়াট ডু আই নো, জাস্ট আ গার্ল’। এটি শুধুই গান নয়, বরং বিশ্বজুড়ে তরুণী ভক্তদের জন্য এক নিবেদন। “এই গানটি মূলত মেয়েদের জন্য। আমি চাই, আমার নারী ভক্তরা এটি শুনে অনুপ্রেরণা পাক,” যোগ করেন নোরা।
সামাজিক মাধ্যমে স্থির ও আত্মবিশ্বাসী
সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার মুখেও নোরা দৃঢ় থাকেন। “ক্যামেরার সামনে যারা থাকেন, সবাই ট্রোলের শিকার হন—অভিনেতা, সাংবাদিক, ইউটিউবার, সবাই। তবে আমি তেমন ঘৃণা পাই না, বরং প্রচুর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি,” জানান তিনি।
তার গ্রহণযোগ্যতা এসেছে প্রচলিত ধারা ভেঙে, নিজের পরিচয় নতুনভাবে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে।
দুবাই: নতুন পরিচয়ের মঞ্চ
নোরা ফাতেহির কাছে দুবাই কেবল একটি শহর নয়, বরং এমন এক প্রতীক যেখানে সীমা ভাঙা যায়। এখানকার একটি মলও হতে পারে বৈশ্বিক মঞ্চ, এক এসকেলেটরই র্যাম্প। আর এখানেই একজন শিল্পী শুধু গান নয়, নিজের নতুন পরিচয়ও প্রকাশ করতে পারেন।
তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “আমার শাড়িটা এত লম্বা, পড়ে যাব কিনা ভেবেছিলাম! কিন্তু আজ আমরা উদযাপন করছি সিটি সেন্টার ডেইরার ৩০ বছর পূর্তি—দারুণ এক শুরু।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















