ইয়োকোসুকায় মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে যৌথ উপস্থিতি দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান তাদের দীর্ঘস্থায়ী মৈত্রীর নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি একযোগে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রশান্ত মহাসাগরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এই জোটই হবে মূল ভিত্তি—যেখানে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক প্রভাবের মোকাবিলা প্রধান লক্ষ্য।
ইয়োকোসুকায় যুক্তরাষ্ট্র–জাপান ঐক্যের প্রতীকী প্রদর্শন
টোকিও সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র–জাপান মৈত্রীকে “প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার ভিত্তি” হিসেবে অভিহিত করেছেন। চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতির প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্কের নবউদ্যমের ইঙ্গিত দেন তিনি।
ট্রাম্প জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচিকে সঙ্গে নিয়ে মার্কিন পারমাণবিক চালিত বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জর্জ ওয়াশিংটন’-এ পৌঁছান। ইয়োকোসুকা নৌঘাঁটায় অবস্থিত এই জাহাজে তিনি প্রায় ৬,০০০ মার্কিন নাবিকের উদ্দেশে ভাষণ দেন।
“আট দশকের বন্ধন শান্তির প্রতীক”
ট্রাম্প বলেন, “এক ভয়াবহ যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে জন্ম নেওয়া এই বন্ধন আট দশকে সুন্দর এক বন্ধুত্বে রূপ নিয়েছে। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের শান্তি ও নিরাপত্তার স্তম্ভ।”
তিনি জানান, জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনীর এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানের জন্য প্রথম ব্যাচের ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছেন, যা চলতি সপ্তাহেই সরবরাহ করা হবে। ট্রাম্পের ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্র–জাপান জোট বিশ্বের অন্যতম অসাধারণ সম্পর্ক।”
তাকাইচির অঙ্গীকার: মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্যাসিফিক
প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি বলেন, “আজ যখন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের দুই সেনাপতি আবার একসঙ্গে দাঁড়িয়েছেন, আমি সেই অঙ্গীকার নবায়ন করছি—ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলকে মুক্ত ও উন্মুক্ত রাখার জন্য কাজ করে যাব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “জাপান এক অভূতপূর্ব কঠিন নিরাপত্তা পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। তাই আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মিলে এই জোটকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাব—যা ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জোটে পরিণত হয়েছে।”
চীনের সামরিক সম্প্রসারণে উদ্বেগ
এই যৌথ উপস্থিতি এমন সময়ে এলো, যখন চীন দ্রুত তার নৌ ও সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। দেশটি ২০১৯ সালে নিজস্বভাবে তৈরি প্রথম বিমানবাহী রণতরী ‘শানদং’ চালু করে, যা দ্বিতীয় রণতরী ‘লিয়াওনিং’-এর পরবর্তী সংযোজন। এ বছরই তারা তৃতীয় রণতরী যুক্ত করার পরিকল্পনাও করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প–তাকাইচির যৌথ উপস্থিতি শুধু জোটের ঐক্য নয়, বরং অঞ্চলে স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি: আশ্বাস ও প্রশ্ন দুটোই
সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কেই কোগা বলেন, এই সফর ইঙ্গিত দিচ্ছে যে জাপান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আবারও আবে–ট্রাম্প যুগের ঘনিষ্ঠতার পথে ফিরছে।
অন্যদিকে লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসির সহযোগী অধ্যাপক চিন হাও হুয়াং মনে করেন, এই সফর ওয়াশিংটনের কাছে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে—প্রশান্ত মহাসাগরীয় শক্তি হিসেবে তাদের প্রভাব কীভাবে বজায় রাখা হবে, তা স্পষ্ট করার।
তবে হুয়াং সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি মিত্রদের নিজেদের প্রতিরক্ষায় বেশি দায়িত্ব নিতে উৎসাহিতও করে, তবুও “নিরাপত্তা ছাতাটি যেন কেবল সর্বোচ্চ দরদাতার জন্য উন্মুক্ত বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় পরিণত না হয়।”
তিনি আরও বলেন, “এ সফরই নির্ধারণ করবে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতিকে বোঝা হিসেবে দেখা হবে, নাকি প্রভাব বিস্তারের সুযোগ হিসেবে—যা ভবিষ্যৎ জোট রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে।”
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার প্রতিক্রিয়া: সতর্ক আশাবাদ
কোগা উল্লেখ করেন, দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় দেশগুলো ওয়াশিংটনের সঙ্গে টোকিওর এই ঘনিষ্ঠতাকে সাধারণভাবে ইতিবাচক বলে দেখবে, কারণ এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বার্তা দেয়। তবে একই সঙ্গে তারা চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কায় সতর্ক থাকবে।
তার মতে, “অঞ্চলটি এখন একটি ‘অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ’-এর অবস্থানে থাকবে—দেখবে, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে জাপান কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখে।”
# যুক্তরাষ্ট্র_জাপান_জোট, ট্রাম্প_তাকাইচি_বৈঠক, ইন্দো_প্যাসিফিক_নিরাপত্তা, চীন_সামরিক_উদ্বেগ, প্রশান্ত_মহাসাগর, আন্তর্জাতিক_সম্পর্ক, সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















