চলচ্চিত্রের শহরে চিরচেনা দৃশ্য
ওরেগনের ছোট্ট উপকূলীয় শহর অ্যাস্টোরিয়া — যেখানে ১৯৮৫ সালের ক্লাসিক সিনেমা দ্য গুনিজ চিত্রায়িত হয়েছিল — আজও সেই স্মৃতিতে বেঁচে আছে। শহরের উপরে পুরোনো ভিক্টোরিয়ান ঘর, সাগরের ধারে পাথুরে উপকূল, আর স্থানীয়দের উচ্ছ্বাস যেন দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সিনেমার গল্পে। সেই বিখ্যাত “গুনিজ হাউস” আজও দাঁড়িয়ে আছে প্রায় আগের মতোই। বাড়ির সামনে রয়েছে রুব গোল্ডবার্গ ধরনের একটি গেট খোলার যন্ত্র — যা সিনেমায় দেখা যেত (এখন শুধু জীবন্ত মুরগির বদলে যান্ত্রিক মুরগি বসানো হয়েছে)।
স্মৃতিচারণে ভক্তদের ঢল
প্রতি বছর হাজার হাজার সিনেমাপ্রেমী অ্যাস্টোরিয়ায় আসে ‘দ্য গুনিজ’-এর স্থানগুলো ঘুরে দেখতে। চলতি বছরে ছবির ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জুন মাসে প্রায় ১০ হাজার দর্শক এখানে জড়ো হয়েছিল। স্থানীয় ব্যবসাগুলোও এই পর্যটন উচ্ছ্বাসকে স্বাগত জানিয়েছে — কফিশপ, জাদুঘর ও দোকানগুলোতে এখন ‘গুনিজ’-থিমের সামগ্রী পাওয়া যায়।

একজন পর্যটক ম্যাথিউ ক্র’ — যিনি নেভাদার কারসন সিটি থেকে এসেছিলেন — ফিল্মের বিখ্যাত ‘ট্রাফল শাফল’ নাচটি পুনর্নির্মাণ করে রাস্তায় হাস্যরস ছড়িয়ে দেন। তাঁর মতো ভক্তদের কাছে অ্যাস্টোরিয়া যেন এক নস্টালজিক তীর্থস্থান।
‘গুনিজ’ থেকে স্থানীয় অর্থনীতির জোয়ার
১৯৮০-এর দশকে লগিং ও মাছধরার উপর নির্ভরশীল অ্যাস্টোরিয়া আজ এক ব্যস্ত পর্যটনকেন্দ্র। স্থানীয় ব্রুয়ারি, রেস্টুরেন্ট ও উপকূলের হাইকিং ট্রেইল এখন গুনিজ-প্রেমীদের আকর্ষণ। শহরের অর্থনীতিতে চলচ্চিত্রভিত্তিক পর্যটন বড় ভূমিকা রাখছে।
মাইক শুল্টে, একজন দীর্ঘদিনের ভক্ত, বলেন — “‘ফিল্ড অব ড্রিমস’ যেমন আইওয়ার গর্ব, তেমনি, অ্যাস্টোরিয়া আমাদের জন্য এক জীবন্ত স্মৃতি। এখানে আসলে মনে হয় যেন আমরা নিজেরাই গুপ্তধনের খোঁজে বেরিয়েছি।”
সিনেমার গল্পের সঙ্গে বাস্তবের মিল
রিচার্ড ডোনার পরিচালিত দ্য গুনিজ ছিল কিশোরদের এক গুপ্তধন অনুসন্ধানের গল্প। তারা নিজেদের পাড়াকে রক্ষা করতে দস্যুদের রেখে যাওয়া ধন খুঁজে বের করার অভিযানে নামে। শহরের আশেপাশের পাহাড়, উপকূল আর জাহাজডুবির ইতিহাস এই গল্পকে করেছে বাস্তবসম্মত।
অ্যাস্টোরিয়া উপকূলকে বলা হয় ‘গ্রেভইয়ার্ড অব দ্য প্যাসিফিক’, কারণ এখানে ২,০০০-র বেশি জাহাজডুবির রেকর্ড আছে। সিনেমায় ব্যবহৃত পাথুরে উপকূল, গুহা আর ঝড়ো সাগর আজও রোমাঞ্চকর দৃশ্য তৈরি করে।
ওরেগন ফিল্ম মিউজিয়ামে ‘গুনিজ’ স্মৃতি
ছবির শুরুতে ব্যবহৃত পুরোনো জেলখানাটি এখন ওরেগন ফিল্ম মিউজিয়াম। মাত্র ছয় ডলার টিকিটে, দর্শকরা দেখতে পারেন জেক ফ্রাটেলির পালানোর দৃশ্যের সেট, ডেটার (কি হুই কোয়ান) যন্ত্রভর্তি পোশাক, আর ফ্রাটেলিদের জিপ চেরোকির প্রতিলিপি। দেয়ালে দর্শকদের নোটে ভরা — “এই সিনেমা আমাকে বাঁচার শক্তি দিয়েছে,” “আমার ক্যানসার সারার পর এখানে এসেছি,” কিংবা “এটা আমাকে শিখিয়েছে ‘চাঙ্ক’ হওয়াটা ঠিক আছে।”

কাছেই লোয়ার কলাম্বিয়া বোলিং অ্যালেতে দর্শকরা পুনর্নির্মাণ করতে পারেন সেই বিখ্যাত দৃশ্য, যেখানে চাঙ্ক জানালায় পিজা ও মিল্কশেক ছুড়ে মেরেছিল।
গুনিজ হাউস ও শহরের নতুন জীবন
১৮৯৬ সালে নির্মিত গুনিজ হাউস ২০২৩ সালে নতুন মালিক কিনে সেটিকে সিনেমার অবিকল রূপে পুনর্নির্মাণ করেন — অ্যাটিক পর্যন্ত সাজানো হয়েছে যেন ঠিক সেখানেই মানচিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়। আশেপাশের শ্রমজীবী পাড়া একসময় উন্নয়ন প্রকল্পের হুমকিতে ছিল — যেমনটা সিনেমার গল্পেও দেখা গিয়েছিল।
আজ সেই এলাকাই পরিণত হয়েছে ব্যস্ত পর্যটনকেন্দ্রে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ম্যাক বার্নস বলেন, “একসময় একদল কাঠুরে পঞ্চাশজন মিলে বনে যেত, এখন যন্ত্রের কারণে ছয়জনেই যথেষ্ট।”
হেইস্ট্যাক রক ও সিনেমার বাস্তব দৃশ্য
ক্যানন বিচের কাছে অবস্থিত বিশাল পাথরখণ্ড হেইস্ট্যাক রক — যা সিনেমার মূল দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল, যখন মাইকি পুরোনো মুদ্রার ছিদ্র দিয়ে তাকায়। এখানকার ইকোলা স্টেট পার্কে এখনো সেই দৃশ্য স্মরণে একটি ফলক রয়েছে।

সাগরের ধারে হেঁটে গেলে দেখা যায় সেই বিশাল পাথর যেন লুকিয়ে রেখেছে কোনো হারানো দস্যুজাহাজের গল্প। কুয়াশায় ঢেকে থাকা সমুদ্রের দিকে তাকালে মনে হয় — গুনিজরা হয়তো এখনও কোথাও গুপ্তধনের মানচিত্র নিয়ে অভিযানে আছে।
এক শহর, এক উত্তরাধিকার
আজও অ্যাস্টোরিয়ার প্রতিটি গলি, দোকান ও সৈকতে মিশে আছে ‘দ্য গুনিজ’-এর ছাপ। চার দশক পরও এই সিনেমা শুধু একটি চলচ্চিত্র নয় — এটি হয়ে উঠেছে শহরের ইতিহাস, অর্থনীতি ও মানুষের আবেগের প্রতীক।
#:ওরেগন,# অ্যাস্টোরিয়া, #দ্য গুনিজ, #মার্কিন সিনেমা, #পর্যটন,# উপকূল,# সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















