টোকিওতে প্রথম শীর্ষ বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন—দুই দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। তারা একসঙ্গে ‘নতুন সোনালি যুগ’-এর সূচনা ঘোষণা করে ইন্দো–প্রশান্ত অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেন।
টোকিওতে প্রথম বৈঠক: নতুন যুগের সূচনা
টোকিওতে প্রথম শীর্ষ বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় শুরু হচ্ছে এক “নতুন সোনালি যুগ”। তাকাইচি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জাপান আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায় আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বৈঠকের শুরুতে তাকাইচি বলেন, “জাপান–মার্কিন জোট এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্ক।” তিনি আরও জানান, “আমরা একসঙ্গে বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখব।”

তাকাইচি জোর দিয়ে বলেন, “জাপানের কূটনীতি পুনরুজ্জীবিত করব, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়। আমি চাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন ঘটাতে।”
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় জাপানের সক্রিয় ভূমিকা
ইয়োকোসুকার মার্কিন নৌঘাঁটিতে ট্রাম্পের সঙ্গে যৌথ ভাষণে তাকাইচি বলেন, “বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নজিরবিহীন। শুধু কথায় শান্তি রক্ষা সম্ভব নয়, প্রয়োজন দৃঢ় সংকল্প ও পদক্ষেপ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “জাপান তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা মূলগতভাবে শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় আরও সক্রিয় অবদান রাখবে।”
ট্রাম্প বলেন, “জাপান–মার্কিন সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হবে।” তিনি জানান, জাপান সামরিক ব্যয় বাড়াতে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণে নতুন অস্ত্র ক্রয় করেছে।
অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চুক্তি: বিনিয়োগে নতুন ধাপ
এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় তাকাইচি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই—দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। ক্ষমতায় এসে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মনোনিবেশ করেছেন, বিশেষত এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে এবং নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির চাপ দিচ্ছে।

বৈঠকের পর উভয় নেতা একটি চুক্তিতে সই করেন, যা পূর্ববর্তী বাণিজ্য অঙ্গীকারগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। চুক্তিতে বলা হয়, উভয় দেশ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধি জোরদার করে বৈশ্বিক সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে।
এতে উল্লেখ করা হয়, দুই নেতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন “অবিরাম বিকাশমান জাপান–মার্কিন জোটের এক নতুন সোনালি যুগ” গড়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে।
গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও রেয়ার আর্থে সহযোগিতা
দুই দেশ আরও একটি নতুন কাঠামোগত চুক্তিতে সই করেছে, যা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও রেয়ার আর্থ সরবরাহ নিরাপদ করার ওপর কেন্দ্রিত। সরকারি ও বেসরকারি খাত একত্রে কাজ করবে সরবরাহ চেইনের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে।
চুক্তি অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে উভয় দেশ যৌথভাবে “গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প” চিহ্নিত করবে এবং আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি, অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে প্রশাসনিক সংস্কারও আনা হবে।
ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রস্তাব
ট্রাম্পের প্রতি আস্থা অর্জনে তাকাইচি তাঁর বৈশ্বিক শান্তি উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধবিরতি সফলভাবে সম্পন্ন করে এক “অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক সাফল্য” অর্জন করেছেন।
তাকাইচি জানান, তিনি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে—যিনি তাকাইচির রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন—ট্রাম্পের “গতিশীল কূটনীতির” প্রশংসা করতেন। ট্রাম্পও মন্তব্য করেন, “আবে আপনার সম্পর্কে অনেক প্রশংসা করতেন। আমি নিশ্চিত, আপনি হবেন এক মহান প্রধানমন্ত্রী।”
চীনকে কেন্দ্র করে নতুন কৌশলগত বাস্তবতা
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে এটি তাঁর প্রথম জাপান সফর। সফরের উদ্দেশ্য হলো এশিয়ায় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মোকাবিলা করা।

জাপান এখন অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। চীনের সামরিক আগ্রাসন ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে টোকিও ওয়াশিংটনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করছে।
ট্রাম্প এই সফরে মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াও পরিদর্শন করবেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি জাপানের বড় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, যার মধ্যে টয়োটা মোটরও রয়েছে। টয়োটা ঘোষণা করতে পারে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ি জাপানে আমদানি করবে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর অংশ হিসেবে।
#: জাপান-মার্কিন সম্পর্ক, সানায়ে তাকাইচি, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চল, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, রেয়ার আর্থ চুক্তি, নোবেল শান্তি পুরস্কার, এশিয়া কূটনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















