ঐতিহাসিক চুক্তি: বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত
মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত পারস্পরিক বাণিজ্য চুক্তি (Agreement on Reciprocal Trade – ART) উভয় দেশের বাজারে আরও স্থিতিশীল ও নিরাপদ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার উপ-নিবেশ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী লিউ চিন টং।
তিনি জানিয়েছেন, এই চুক্তির আওতায় ১,৭১১টি শুল্ক লাইনে অন্তর্ভুক্ত পণ্য—যার মধ্যে রয়েছে পাম তেল, রাবার, কোকো, বিমান যন্ত্রাংশ ও ওষুধ—এর উপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ১৯ শতাংশ শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
লিউ বলেন, “গত রবিবারের বৈঠক ও স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ছিল ঐতিহাসিক। আগেই প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী সংসদে চুক্তির মূল কাঠামো ঘোষণা করেছিলেন। এবার যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়াকে আরও বিস্তৃত ও নিরাপদ বাজার সুবিধা দিয়েছে। ঘোষণার তুলনায় চূড়ান্ত ফলাফল আরও অনুকূল।”
সেমিকন্ডাক্টর এখনো আলোচনায়
মন্ত্রী লিউ চিন টং জানিয়েছেন, বর্তমান চুক্তিতে সেমিকন্ডাক্টর খাত অন্তর্ভুক্ত নয়, কারণ এ বিষয়ে আলোচনা এখনো চলমান। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চেম্বার অব কমার্স “ইউএস ট্রেড এক্সপ্যানশন অ্যাক্ট ১৯৬২”-এর সেকশন ২৩২ এর আওতায় এই বিষয়টি বিবেচনা করছে।
এই আইন অনুযায়ী, যদি কোনো আমদানি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়, তবে প্রেসিডেন্ট শুল্ক আরোপ বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে পারেন।

লিউ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ধারাবাহিক বাণিজ্য সহযোগিতা সেমিকন্ডাক্টর খাতে একটি অনুকূল সমঝোতার পথ খুলে দিতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সদয় বিবেচনা
বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী তেংকু দাতুক সেরি জাফরুল আবদুল আজিজ রবিবার বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মালয়েশিয়ার সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি বিষয়ে ‘উপযুক্ত বিবেচনা’ প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার গত জুলাইয়ে মালয়েশিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, যা কয়েক মাসের আলোচনার পর হ্রাস করা হয়।
রাজনৈতিক বিতর্ক: ‘একতরফা চুক্তি’ নাকি অর্থনৈতিক অগ্রগতি?
পেরিকাতান ন্যাশনাল পার্টির মহাসচিব দাতুক সেরি মোহাম্মদ আজমিন আলি চুক্তিটিকে ‘একতরফা’ বলে সমালোচনা করেন। তাঁর দাবি, “এই চুক্তি মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতাকে ক্ষুণ্ণ করবে, কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম-কানুন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা তৈরি করছে।”
তবে মন্ত্রী জাফরুল এর বিরোধিতা করে বলেন, “চুক্তির কোনো দিকেই জাতীয় সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়নি। মালয়েশিয়া কখনো এমন কোনো সমঝোতায় যাবে না, যা রাষ্ট্রের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার সীমিত করে।”
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নতুন গতি
জাফরুল আরও জানান, এই চুক্তির মাধ্যমে মালয়েশিয়া শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করছে না, বরং কৌশলগতভাবে বৃহত্তর শুল্ক উদারীকরণ ও বাজার নিরাপত্তা অর্জন করছে।
এর ফলে মালয়েশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারবে।

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে প্রভাব
একই সঙ্গে, ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনে আঞ্চলিক নেতারা দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন। প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “আসিয়ান তার নীতি নির্ধারণে স্বাধীন থাকবে এবং বাইরের কোনো শক্তি তাকে নির্দেশ দিতে পারবে না।”
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্মেলনে মালয়েশিয়াকে “একটি মহান ও প্রাণবন্ত দেশ” হিসেবে প্রশংসা করেন এবং নতুন বাণিজ্য চুক্তিকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন।
নতুন পারস্পরিক বাণিজ্য চুক্তি মালয়েশিয়ার জন্য অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করবে না, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য কাঠামোতেও নতুন ভারসাম্য আনবে।
# মালয়েশিয়া_যুক্তরাষ্ট্র_চুক্তি, আসিয়ান_সম্মেলন, সেমিকন্ডাক্টর, আনোয়ার_ইব্রাহিম, ট্রাম্প, আন্তর্জাতিক_বাণিজ্য, দক্ষিণ_চীন_সাগর, সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















