জেলেরা জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম জেলেরা ও উপকূলীয় সম্প্রদায়। তবুও টেকসই উদ্যোগের অভাবে খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি, বাসস্থান ও সংস্কৃতি—মানবাধিকারের মৌলিক দিকগুলো থেকেও তারা বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
‘রোড টু বেলেম’ সেমিনারে জোরালো দাবি
মঙ্গলবার রাজধানীর টপখানা রোডের সিআইআরডিএপি মিলনায়তনে ‘রোড টু বেলেম (কপ–৩০): জলবায়ু সংকট—জেলেদের সংগ্রাম ও নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব বিষয় উঠে আসে। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে কোস্ট ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ল্ড ফোরাম অফ ফিশার পিপলস (ডব্লিউএফএফপি) ও ফিয়ান ইন্টারন্যাশনাল।
সভাটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এম রেজাউল করিম চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন প্রাক্তন সচিব ও ন্যাকমের নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের সাবেক উপপরিচালক আবি আবদুল্লাহ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক, ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশের সিইও শরিফ জামিল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোর্ড সদস্য মো. আমিনুর রশুল বাবুল, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক মো. শামসুদ্দিন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্টস ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমানসহ সাংবাদিক মো. সালাউদ্দিন বাবলু, মো. মতাহার হোসেন ও ভোলার জেলে প্রতিনিধি আশরাফ মাঝি এবং বাবুলা মাঝি।

মূল প্রবন্ধে মানবাধিকারের সংকট তুলে ধরা হয়
অনুষ্ঠানে কোস্ট ফাউন্ডেশনের এম এ হাসান উপস্থাপন করেন মূল প্রবন্ধ, শিরোনাম ছিল—‘রাইজিং টাইডস, শ্রিংকিং কোস্টস অ্যান্ড সিঙ্কিং রাইটস: ক্লাইমেট ক্রাইসিস অ্যান্ড স্ট্রাগলস অফ ফিশারমেন’।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জেলেদের মানবাধিকারে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে; তাই জলবায়ু আলোচনা ও নীতি প্রণয়নে এই বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
‘মানবাধিকার ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে’
এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “জলজ প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় জেলেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাষ্ট্রকে স্বীকার করতে হবে। আমাদের দাবি কেবল পরিবেশ নয়, মানবাধিকার, খাদ্য সার্বভৌমত্ব ও জেলেসমাজের টিকে থাকার সঙ্গেও জড়িত।”
তিনি আহ্বান জানান, বেলেমে অনুষ্ঠিতব্য কপ–৩০ সম্মেলনে সুশীল সমাজ ও সরকার একযোগে এই ইস্যুগুলোকে আলোচনার কেন্দ্রে রাখবে।
নীতি প্রণয়নে ক্ষতিগ্রস্তদের মতামত জরুরি
ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, “বেলেম জলবায়ু সম্মেলনের জন্য জাতীয় অবস্থানপত্র তৈরি করার আগে সরকারকে অবশ্যই জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মতামত নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের মতামত ছাড়া আলোচনা অর্থহীন।”
অন্যদিকে, আবি আবদুল্লাহ বলেন, স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত জলবায়ু আলোচনায় নারীসহ জেলেদের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি পর্যায়ে স্বীকৃতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক স্বীকার করেন যে, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (ন্যাপ) জেলেদের মানবাধিকার যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। তবে ২০২৭ সালের ন্যাপ পর্যালোচনায় বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক অভিযোজন লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের স্বার্থ প্রতিফলিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কণ্ঠ তুলতে হবে।

পানি ব্যবস্থাপনা ও নদী–সীমান্ত সমস্যা
শরিফ জামিল বলেন, “সীমান্তবর্তী নদীর ইস্যুগুলো সমাধান ছাড়া কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। ডেল্টা প্ল্যান–২১০০–এ এই দিকটি অনুপস্থিত, যা সংশোধন করা জরুরি।”
অন্যদিকে, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক মো. শামসুদ্দিন বলেন, “অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণে খোলা জলাশয় কমে যাচ্ছে, ফলে দেশীয় মাছের প্রজাতি হুমকিতে পড়েছে।”
ন্যায্য দামের দাবি জেলেদের
ভোলার প্রতিনিধি আশরাফ মাঝি বলেন, “সংরক্ষণাগার, পরিবহন ও সরাসরি বাজার–সংযোগ না থাকায় আমরা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে কম দামে মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।”
তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান, জেলেদের ন্যায্য মূল্য ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হোক।
#জলবায়ু_পরিবর্তন #জেলেসমাজ #কপ৩০ #বেলেম #কোস্ট_ফাউন্ডেশন #বাংলাদেশ #উপকূলীয়_জনগোষ্ঠী #মানবাধিকার #জলবায়ু_আলোচনা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















