সিঙ্গাপুরের দম্পতি থমাস উ (Woo) ও ক্যান্ডি মেং তাদের সন্তানদের শৈশব থেকেই অর্থ ব্যবস্থাপনার শিক্ষা দিচ্ছেন। বাড়ি গোছানো থেকে শুরু করে পকেট খরচের হিসাব—প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়েই সন্তানদের সঞ্চয়ের গুরুত্ব ও বিচক্ষণ ব্যয়ের পাঠ শেখাচ্ছেন তারা।
পারিবারিক রুটিনেই সঞ্চয়ের শিক্ষা
প্রতি তিন মাসে একবার উ পরিবার (Woo পরিবার) তাদের সন্তান অস্কার (১১) ও অলিভিয়া (৯)-এর ঘর গুছিয়ে দেয়। পুরোনো জামাকাপড়, খেলনা ও ছোটখাটো জিনিসপত্র বেছে দেখা হয়—কোনটা রাখা দরকার, কোনটা দান করা যায়, আর কোনটা অপ্রয়োজনীয়।
ক্যান্ডি মেং বলেন, “ওদের অনেক জিনিস আছে। নতুন কিছু কেনার আগে আমরা চাই ওরা ভাবুক—এটা সত্যিই দরকার কী না।”
এই পদ্ধতিতে সন্তানদের ‘প্রয়োজন’ আর ‘চাওয়া’-র পার্থক্য শেখানোই মূল উদ্দেশ্য।
উদ্যোক্তা বাবা-মার অর্থনৈতিক বাস্তবতা
থমাস উ (৪৯) ও ক্যান্ডি মেং (৩৯) সিঙ্গাপুরে “অস্কার হেড স্পা” নামে একটি সৌন্দর্যসেবা প্রতিষ্ঠান চালান। ২০১২ সালে বেদোক সেন্ট্রালে একটি শাখা দিয়ে শুরু করা এই প্রতিষ্ঠান এখন চারটি আউটলেট ও ৩৮ জন কর্মচারী নিয়ে চলছে।
দুজনই উদ্যোক্তা হিসেবে জানেন বাজেট তৈরি, সঞ্চয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গুরুত্ব। থমাস বলেন, “আমার বিশের দশকে কোনো বিনিয়োগ পরিকল্পনা ছিল না। যা আয় করতাম, খরচ করে ফেলতাম।”

এখন তারা অবসরকালীন তহবিল গঠন ও সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য সঞ্চয়ে মনোযোগ দিচ্ছেন।
শিশুদের জন্য সঞ্চয়ের অনুশীলন
অস্কার ও অলিভিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওঠার পর থেকেই তারা নিজেদের খরচ নিজেরাই সামলায়। মাসে ১৫০ ডলার করে পকেটমানি পায় তারা।
প্রতি শুক্রবার বাবা-মা সন্তানের খরচের হিসাব নিয়ে বসেন। বেশিরভাগ ব্যয় হয় খাবারের পেছনে। কোনোদিন বেশি খরচ হলে থমাস জানতে চান, “কেন এত খরচ হলো?”
তিনি সন্তানদের উপদেশ দেন মাসিক টাকার ১০ থেকে ২০ শতাংশ সঞ্চয় করতে। অস্কারের নীল সেফটি বক্স ও অলিভিয়ার গোলাপি ব্যাংকই এখন তাদের ছোট্ট সঞ্চয়ের ভাণ্ডার।
বাস্তব উদাহরণে শেখা
অস্কার স্কুলে প্রতিদিন প্রায় ৫ ডলার খরচ করে এবং এখন ফুটবল কার্ড কেনার জন্য সঞ্চয় করছে। অন্যদিকে, অলিভিয়া নিজের টিফিন খরচ বাঁচিয়ে প্রায় ১০-১৫ সপ্তাহে ৯০ ডলার জোগাড় করে কিনেছে একটি স্মার্টওয়াচ।
এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো শিশুদের বাজেট, সঞ্চয় ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায় বলে জানান ইউওবি ব্যাংকের ডিপোজিট ও ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান গিডন জেরোম কেসেল।
আর্থিক সচেতনতা গড়ে তোলার উপায়
কেসেলের মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানদের দুই সপ্তাহ বা মাসিক ভাতা দেওয়া যেতে পারে—এতে তারা বড় অঙ্কের অর্থ পরিকল্পনা করে খরচ করতে শেখে।
তিনি পরামর্শ দেন, সন্তানদের সঞ্চয় বাড়াতে ‘ডলার ফর ডলার’ পুরস্কার দেওয়াও কার্যকর পদ্ধতি।
কৈশোরে প্রবেশ করলে তাদের ঋণ ও বিনিয়োগের মতো জটিল ধারণাগুলোর সঙ্গে পরিচিত করা যেতে পারে। এ সময় যৌথ সঞ্চয় হিসাব খোলা এক কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে।

প্রয়োজন বনাম চাওয়া
দৈনন্দিন বাজার করাও হতে পারে বাস্তব শিক্ষা। বাবা-মা যদি সন্তানদের বোঝান কোন পণ্যের দাম কেন বেশি বা কম, তবে তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে যুক্তি প্রয়োগ করতে শেখে।
থমাস ও ক্যান্ডি ইতিমধ্যেই সন্তানদের জন্য যৌথ সঞ্চয় হিসাব খুলেছেন। নববর্ষ ও জন্মদিনে পাওয়া উপহারের প্রায় ৮০ শতাংশ তারা এই হিসাবে জমা রাখে, বাকিটা দৈনন্দিন খরচে ব্যবহার করে।
উপহার আর সচেতনতার গল্প
অলিভিয়া নিজের সঞ্চয় থেকে ভাইয়ের জন্মদিনে ৭০ ডলারের এক জোড়া বেতার ইয়ারফোন কিনে উপহার দিয়েছে। মা ক্যান্ডি বলেন, “এটা ওর আন্তরিকতার প্রকাশ।”
এমনকি মাঝে মাঝে অলিভিয়া নিজেই মাকে স্মরণ করিয়ে দেয় কেনাকাটার সময় কোনো জিনিস ‘প্রয়োজন’ না, ‘চাওয়া’। একদিন শপিংয়ে গিয়ে সে মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “মা, ওই ব্যাগটা সত্যিই দরকার?”
ক্যান্ডি হাসতে হাসতে বলেন, “বোধহয় ওর মধ্যে প্রয়োজন-চাওয়ার পার্থক্যটা ভালোভাবেই গেঁথে গেছে।”
#ট্যাগ: #সঞ্চয় #পরিবার #শিক্ষা #অর্থব্যবস্থা #সন্তানশিক্ষা #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















