বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হওয়া বাস্তব আলোচনার প্রতিফলন ঘটায়নি এবং জুলাই সনদের মূল কাঠামোর সঙ্গে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেন, এতে কেবল কমিশনের প্রস্তাবনাই রাখা হয়েছে, অথচ দলগুলোর মতামত ও মতবিরোধ কোথায় ছিল তা উপেক্ষা করা হয়েছে।
কমিশন প্রতিবেদনে ‘বাস্তব আলোচনা’র প্রতিফলন নেই
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বুধবার অভিযোগ করেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশন) চূড়ান্ত প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হওয়া আলোচনার পূর্ণ প্রতিফলন নেই এবং এটি ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের মূল কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, “এই সনদে শুধু কমিশনের প্রস্তাবনাগুলোই রাখা হয়েছে। কোথায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত হলো, কোথায় ঐকমত্যে পৌঁছানো গেল, আর কোথায় মতবিরোধ ছিল—এসব কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।”
সালাহউদ্দিন ঢাকার এক হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।

সংসদ ভবনে স্বাক্ষরিত নথির সঙ্গে অসঙ্গতি
বিএনপি নেতা বলেন, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত নথিটি কমিশনের সঙ্গে হওয়া আলোচনার বিষয়গুলো প্রতিফলিত করার কথা ছিল, কিন্তু সেই সামঞ্জস্য এখন অনুপস্থিত।
তিনি আরও জানান, ওই সনদে সংবিধানের ৪৮টি অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংযুক্ত করা হয়েছে, যা গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। “যদি শুরু থেকেই এটাই পরিকল্পনা ছিল, তাহলে ১১ মাস ধরে এই কমিশনের অধীনে আলোচনা চালানোর মানেটা কী ছিল?” —প্রশ্ন করেন তিনি।
বাস্তবায়নে নিশ্চয়তা চাওয়ায় কমিশনের পিছু হটা
সালাহউদ্দিন বলেন, কমিশনের আলোচনার সময় বিএনপি প্রস্তাব করেছিল একটি গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতে। অধিকাংশ দল এই প্রস্তাবকে সমর্থন করলেও পরে কমিশন সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে যায়।
নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কমিশনের আলোচনায় অনেক সময় আমি একা হয়ে পড়েছিলাম—মনে হতো যেন আমি একাই বিরোধী পক্ষ। মনে হয়েছে, কমিশন ও কিছু দল নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে।”
গণভোটের প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক
তিনি দাবি করেন, যে ৪৮টি সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব এখন গণভোটে তোলা হচ্ছে, সেগুলো কমিশনের আলোচনায় কখনোই উত্থাপন করা হয়নি।
“আমি প্রথমে প্রস্তাব করেছিলাম জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের কথা, এবং তখন বেশিরভাগ দলই একমত হয়েছিল। কিন্তু এখন যে ৪৮টি প্রস্তাব তোলা হয়েছে, তা কমিশনে কখনোই আলোচনা হয়নি,” বলেন সালাহউদ্দিন।

রাজনৈতিক বিভাজন আরও বাড়াবে: সতর্কবার্তা
বিএনপি নেতা সতর্ক করে বলেন, কমিশন ও সরকারের বর্তমান পদক্ষেপ রাজনৈতিক ঐক্যের বদলে বিভাজন আরও গভীর করবে।
তিনি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন, যেখানে বলা হয়েছে জোটের দলগুলোকে নিজেদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। এই সিদ্ধান্তকে তিনি “গণতন্ত্রবিরোধী” বলে অভিহিত করেন।
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আহ্বান
সালাহউদ্দিন শেষ পর্যন্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি প্রকৃত তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন হিসেবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে এবং জাতিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে পরিচালিত করবে।
#সালাহউদ্দিনআহমেদ #বিএনপি #ঐকমত্যকমিশন #জুলাইসনদ #বাংলাদেশরাজনীতি #তত্ত্বাবধায়কসরকার
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















