২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং রপ্তানি-নির্ভর উৎপাদনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে — বিশেষ করে যখন বাণিজ্য উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও তীব্র হচ্ছে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধীরগতি
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৮ শতাংশ, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকের ৫.২ শতাংশের চেয়ে কম এবং রয়টার্স জরিপের পূর্বাভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বছরের প্রথম নয় মাসে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা সরকার ঘোষিত প্রায় ৫ শতাংশ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ইঙ্গিত দেয়। তবে দুর্বল ভোক্তা ব্যয় ও বিনিয়োগ, এবং রিয়েল এস্টেট খাতের মন্দা নীতিনির্ধারকদের জন্য সতর্ক সংকেত।
শিল্প ও খুচরা খাতের চিত্র
সেপ্টেম্বরে শিল্প উৎপাদন বেড়েছে ৬.৫ শতাংশ, যা তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিপরীতে খুচরা বিক্রি মাত্র ৩.০ শতাংশ বেড়েছে — গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এতে বোঝা যাচ্ছে, অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদা এখনও দুর্বল।
বাণিজ্য উত্তেজনা ও রপ্তানি নির্ভরতা
ওয়াশিংটনের সঙ্গে নতুন করে তৈরি হওয়া বাণিজ্য উত্তেজনা চীনের অর্থনীতির অসম ভারসাম্যকে উন্মোচিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য এখন চীনের উচিত অভ্যন্তরীণ ভোগ ও উৎপাদন বাড়ানো, যদিও তা কঠিন একটি রূপান্তর প্রক্রিয়া।
চীনের রপ্তানি তথ্য ইঙ্গিত দেয় — যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নতুন বাজারে প্রবেশের প্রচেষ্টা বাড়ছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ২৭ শতাংশ কমলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১৪ শতাংশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৫.৬ শতাংশ এবং আফ্রিকায় ৫৬.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র যে এই নতুন বাজারে মুনাফা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
একজন চীনা অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানিকারক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অর্ডার ৮০–৯০ শতাংশ কমে যাওয়ায় লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি বাড়ালেও মোট আয়ে ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বিনিয়োগ ও সম্পত্তি খাতের সঙ্কট
চীনের রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ১৩.৯ শতাংশ কমেছে — যা সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ওপর বড় প্রভাব ফেলছে। সম্পত্তি বাজারের পতন ভোক্তাদের আস্থা কমিয়েছে এবং গৃহঋণ ও নির্মাণে মন্দা সৃষ্টি করেছে।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার কয়েক দফা সীমিত প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা একমত নন — আরও প্রণোদনা আসবে কি না। কেউ কেউ মনে করেন, সরকার দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারে মনোযোগ দিচ্ছে; যেমন পেনশন সংস্কার, যা ভবিষ্যতে ভোগব্যয় বাড়াতে পারে, যদিও তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের হাতে নগদ অর্থ কমাবে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আসন্ন বৈঠক
এই সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হে লিফেং ও মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের বৈঠকের পাশাপাশি, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের সম্ভাব্য বৈঠককে, সামনে রেখে বেইজিং হয়তো বর্তমান প্রবৃদ্ধিকে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
এদিকে সোমবার থেকে শুরু হওয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বৈঠকে দেশের ১৫তম পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে উচ্চপ্রযুক্তি শিল্প ও উৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য পলিটব্যুরো সভা ও ‘সেন্ট্রাল ইকোনমিক ওয়ার্ক কনফারেন্সে’ আগামী বছরের অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কে ইঙ্গিত মিলবে বলে বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন।
চীনের অর্থনীতি এখন এক মোড় ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে — একদিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাপে রপ্তানি নির্ভরতা, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ভোগ ও রিয়েল এস্টেটের দুর্বলতা।
নীতিনির্ধারকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো, কীভাবে এই দুই দিকের ভারসাম্য বজায় রেখে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়।
# চীন,# অর্থনীতি,# জিডিপি,# বাণিজ্য, #রপ্তানি,# রিয়েল এস্টেট,# প্রণোদনা,# বিশ্ববাজার # সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















