তিন বছর পর আদালতে শুরু বহুল আলোচিত বিচার
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যার তিন বছরেরও বেশি সময় পর অবশেষে আদালতে শুরু হয়েছে সেই বহুল আলোচিত মামলার বিচার। অভিযুক্ত টেটসুয়া ইয়ামাগামি (৪৫) মঙ্গলবার আদালতে নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনিই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে নারায় শহরে এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আবে; তখন ইয়ামাগামি নিজ হাতে তৈরি বন্দুক দিয়ে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে।
‘সবই সত্য, আমি করেছি’—আদালতে স্বীকারোক্তি
নারা জেলা আদালতে প্রসিকিউশন পক্ষের অভিযোগপত্র পাঠের পর প্রধান বিচারক ইয়ামাগামিকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি এসব অভিযোগ স্বীকার করেন কি না। উত্তরে তিনি বলেন, “সবই সত্য। সন্দেহের কিছু নেই, আমি করেছি।” জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলো আদালতকক্ষ থেকে এই বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে।
মানসিক মূল্যায়নের কারণে বিলম্ব
ইয়ামাগামির বিচার শুরু হতে তিন বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। এর কারণ হিসেবে আদালত জানিয়েছে, অভিযুক্তের মানসিক অবস্থা মূল্যায়নে দীর্ঘ সময় লেগেছে। এই সময়কালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা তার মানসিক সক্ষমতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।

আবের অনুসারী তাকাইচি ক্ষমতায়—পুরনো স্মৃতি ফিরে
এই বিচার শুরু হয় এমন এক সময়, যখন আবের ঘনিষ্ঠ অনুসারী সানায়ে তাকাইচি জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তাকাইচির নীতি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আবের প্রভাব স্পষ্ট, বিশেষত প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি ও জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারে তার অবস্থান। তার মেয়াদ শুরুর পর দেশজুড়ে ‘আবে যুগ’-এর স্মৃতি নতুন করে ফিরে এসেছে—জনপ্রিয়তার উত্থান ও শেয়ারবাজারে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে, যেমনটা ঘটেছিল ২০১২ সালে আবে ক্ষমতায় আসার সময়।
‘দণ্ড লঘু করার আবেদন’—ইয়ামাগামির আইনজীবীদের কৌশল
ইয়ামাগামির আইনজীবীরা তার অপরাধ স্বীকার করলেও শাস্তি হ্রাসের আবেদন করেছেন। তারা আদালতে যুক্তি দিয়েছেন যে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে গভীর ব্যক্তিগত ও সামাজিক ট্র্যাজেডি।
‘ইউনিফিকেশন চার্চ’-এর প্রতি ক্ষোভ থেকেই প্রতিশোধ
হত্যার পর তদন্তে বেরিয়ে আসে ইয়ামাগামির পরিবারের সঙ্গে জড়িত এক করুণ ইতিহাস। তার মা দক্ষিণ কোরিয়ার ধর্মীয় সংগঠন ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’-এ বিপুল অঙ্কের দান করেছিলেন। এতে পরিবার আর্থিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ইয়ামাগামি ও তার ভাইবোনেরা শৈশবে অভাবে দিন কাটাতেন; উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ভেঙে যায়। পরবর্তীতে তার ভাই ক্যানসারে ভুগে আত্মহত্যা করেন।
ইয়ামাগামি প্রথমে এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সান মায়ুং মুনের পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করার কথা ভাবলেও পরে সিদ্ধান্ত নেন আবেকে লক্ষ্যবস্তু করবেন। কারণ, ২০২১ সালে এক চার্চ-সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় আবে মুনের স্ত্রীকে প্রশংসা করেছিলেন—যা ইয়ামাগামির কাছে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ মনে হয়েছিল। হত্যার আগে তিনি এক চিঠিতে নিজের এই উদ্দেশ্য লিখেও যান।

দোষ স্বীকারে কোনো দ্বিমত নেই, বিতর্ক শুধু শাস্তি নিয়ে
বিচারে উভয় পক্ষই স্বীকার করেছে যে ইয়ামাগামি প্রতিশোধমূলক উদ্দেশ্যেই শিনজো আবেকে হত্যা করেছেন। তবে বিতর্কের বিষয় হচ্ছে, এই অপরাধের জন্য তার শাস্তি কতটা কঠোর হওয়া উচিত।
রায় জানুয়ারি মাসে ঘোষণা
নারা জেলা আদালত জানিয়েছে, মামলার রায় ও সাজা ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী জানুয়ারিতে।
# জাপান,# শিনজো_আবে,# টেটসুয়া_ইয়ামাগামি,# ইউনিফিকেশন_চার্চ,# আন্তর্জাতিক_বিচার,# সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















