গোপনীয়তা চুক্তি স্বাক্ষর: নজিরবিহীন পদক্ষেপ
ওয়াশিংটন, ২৭ অক্টোবর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে লাতিন আমেরিকায় সম্প্রসারিত সামরিক অভিযান নিয়ে নতুন এক গোপনীয়তার আবরণ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, এই মিশনে যুক্ত কর্মকর্তাদের এখন ‘নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট’ (এনডিএ) বা গোপনীয়তা চুক্তিতে সই করতে বলা হয়েছে। এই পদক্ষেপটিকে অত্যন্ত অস্বাভাবিক বলা হচ্ছে, কারণ সামরিক কর্মকর্তারা স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত তথ্য গোপন রাখার শপথে আবদ্ধ থাকেন।
এই ঘটনার ফলে কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য গোপন রাখা হচ্ছে এবং তারা মিশনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছেন।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের অস্বাভাবিক নীতি
প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পিট হেগসেথ তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার আগে পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি তিনি তথ্য ফাঁসের তদন্ত শুরু করেছেন এবং সাংবাদিকদের জন্য নতুন প্রেস নীতি প্রবর্তন করেছেন, যার অধীনে কিছু সাংবাদিকের অনুমতিপত্রও বাতিল করা হয়েছে।
তবে পেন্টাগনের তরফ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সামরিক উপস্থিতি বাড়ছে দ্রুত
সম্প্রতি পেন্টাগন লাতিন আমেরিকায় বিমানবাহী রণতরী “জেরাল্ড ফোর্ড” স্ট্রাইক গ্রুপ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মোতায়েনকৃত অস্ত্রশক্তি মাদকবিরোধী অভিযানের ঘোষিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন বাহিনী অন্তত ১৩টি হামলা চালিয়েছে তথাকথিত “ড্রাগ ভেসেল” এর ওপর, যার বেশিরভাগই ক্যারিবীয় অঞ্চলে। এসব অভিযানে প্রায় ৫৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরের নাগরিকও রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, “জেরাল্ড ফোর্ড” রণতরী গ্রুপে যুক্ত হয়েছে প্রায় ১০,০০০ অতিরিক্ত সৈন্য, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, পারমাণবিক সাবমেরিন এবং মিসাইল ডেস্ট্রয়ারসহ বিপুল সামরিক শক্তি। কিন্তু এই বিপুল অস্ত্রসম্ভার আসলেই মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য কিনা, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি পেন্টাগন।
ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়াকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর আশঙ্কা
ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলা এবং সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী কলম্বিয়াকে সরাসরি মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করার অভিযোগ করছে। উভয় দেশই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে এই দাবি নতুন আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো দুই দেশের ভেতরে সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে।
রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ট্রাম্প খুব শিগগির কংগ্রেসকে “ভবিষ্যৎ সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা” সম্পর্কে অবহিত করবেন।

ওয়াশিংটন গত আগস্টে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর গ্রেপ্তারের তথ্য দিলে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে, যদিও মাদুরো এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
কলম্বিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কলম্বিয়ার সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তীব্রভাবে খারাপ হয়েছে। ট্রাম্প প্রকাশ্যে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে “অবৈধ মাদক নেতা” ও “খারাপ মানুষ” বলে অভিহিত করেছেন, যা বোগোতা সরকার অপমানজনক হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। এরপরদিনই ওয়াশিংটন পেত্রোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত
লিন্ডসি গ্রাহাম বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে লাতিন আমেরিকায় অভিযান চালানোর পূর্ণ আইনি ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, “এই সামরিক শক্তি এগিয়ে যাচ্ছে এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাঠিয়ে আমেরিকানদের রক্ত ঝরাচ্ছে, বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়া।”
তিনি আরো যোগ করেন, “আমি আশা করি মাদুরো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়বেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তার সময় হয়তো খুব বেশি বাকি নেই।”
#লাতিন_আমেরিকা #মার্কিন_সামরিক_নীতি #ট্রাম্প #ভেনেজুয়েলা #কলম্বিয়া #পেন্টাগন #গোপনীয়তা_চুক্তি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















