সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) আজ নভেম্বরে কার্যকর হবে এমন জ্বালানির (পেট্রোল) মূল্য ঘোষণা করবে। অক্টোবরের দাম বৃদ্ধির পর চালকরা কিছুটা স্বস্তি আশা করছেন, তবে আন্তর্জাতিক তেলবাজারের ওঠানামা ও সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি দাম নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা রাখবে।
অক্টোবরের বাড়তি দাম
২০১৫ সালে জ্বালানি মূল্য মুক্ত করার পর থেকে ইউএই মাসিকভাবে তেলের দাম সমন্বয় করছে। ক্রুড তেলের আন্তর্জাতিক বাজার বেড়ালে দাম বাড়ে, কমলে নামে। অক্টোবর মাসে দাম বাড়ার ফলে স্পষ্ট লেনদেনের প্রতিফলন দেখা গেছে। তাই নভেম্বরে ঘোষণার দিকে সবাই সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন।
আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের অবস্থা
বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম বৃহস্পতিবার প্রতি ব্যারেল প্রায় ৮৫ ডলারের নিচে লেনদেন করছিল। সাম্প্রতিক আমেরিকা–চীন শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক বাতিল বা উন্নতির সংকেত পাওয়ায় বাজারে আশাবাদ বেড়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও তেলের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা দামের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এক পর্যায়ে এই গতি ব্রেন্টে বড়সড় সাপ্তাহিক লাভেরও ইঙ্গিত দিয়েছে।

ওপেকের সম্ভাব্য ভূমিকা
কুয়েতের তেলমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, চাহিদা বাড়লে ওপেক (OPEC) উৎপাদন বাড়াতে পারে। তবে তারা সতর্ক করেছেন, এটি তেলের দামের ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
পূর্বাভাস বদলের কারণ
আগে অনেক ব্যবসায়ী মনে করতেন, বৈশ্বিক তেল ক্লান্তির কারণে ভবিষ্যতে দাম কমতে পারে—এমন কথা বোঝাতে ‘কনট্যাঙ্গো’ (Contango) বা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চুক্তির ব্যবধান সংকীর্ণ হচ্ছিল। কিন্তু নতুন নিষেধাজ্ঞা (প্রতিবন্ধকতা) বাজারের চিত্র বদলে দিয়েছে। সরবরাহ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
এখন ‘ব্যাকওয়ার্ডেশন’ (Backwardation) দেখছেন—অর্থাৎ আজকের তেল ভবিষ্যতের চেয়ে বেশি মূল্যবান, যা স্বল্পমেয়াদে দামের শক্তি নির্দেশ করছে।
বিশ্লেষকদের মতামত
গ্লোবাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (Global Risk Management)-এর প্রধান বিশ্লেষক আর্নে লোহমান রাসমুসেন (Arne Lohmann Rasmussen) বলেন, “নিষেধাজ্ঞার আগে বাজার কম দামের দিকে ঝুঁকছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পরে প্রত্যাশা উল্টো বদলে গেছে—উচ্চ দামের দিকে।”
ক্যাপিটাল ইকনমিক্স (Capital Economics)-এর বিশ্লেষকরা যোগ করেছেন, নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকর থাকলে আগামী বছরে বাজার ঘাটতির দিকে ফিরে যেতে পারে।

চালক ও ভোক্তাদের ওপর প্রভাব
বহু বিশ্লেষক বলছেন, শিগগিরই জ্বালানির দাম তীব্রভাবে কমার সম্ভাবনা কম। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চালকরা পাম্পে স্থিতিশীল বা সামান্য বেশি মূল্যের মুখোমুখি হতে পারেন। তবে বিশ্ববাজার ঠান্ডা হলে ভবিষ্যতে খরচ কমতে পারে।
এক বিশ্লেষক বলেন, “নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কতদিন স্থায়ী হবে, সেটির ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে—কয়েক দিনের মধ্যেই পাম্পে এর প্রভাব দেখা যেতে পারে।”
বর্তমান মূল্যধারা ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
গত কয়েক বছরে তেলের দাম মাঝারি স্তরে ছিল; সাম্প্রতিককালে আমেরিকান ক্রুড তেল প্রায় ৫৭ ডলারের নিচে নেমে আসে—এটি ২০২১-এর শুরুর পর থেকে সর্বনিম্ন স্তর। তবে যদি সরবরাহ সংকীর্ণ থাকে, নভেম্বরে ইউএই-এর জ্বালানি মূল্য শক্তিশালী থেকে যেতে পারে এবং বড় ধরনের ছাড়ের সুযোগ সীমিত থাকবে।
নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি মূল্যের ঘোষণায় আন্তর্জাতিক তেলবাজারের রাজনৈতিক ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট পরিবর্তন সরাসরি প্রভাব ফেলবে। সাধারণ ভোক্তারা এখনো বড় ধরনের দাম পতনের আশা না করে সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ভবিষ্যতের আশা নির্ভর করছে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য কেমন থাকে তার ওপর।
#তেলবাজার #সংযুক্তআরবআমিরাত #পেট্রোলদাম #ওপেক #বিশ্বঅর্থনীতি #জ্বালানিমূল্য #গ্লোবালরিস্কম্যানেজমেন্ট #ক্যাপিটালইকনমিক্স #আর্নেলোহমানরাসমুসেন #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















