০৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ধর্মীয় নেতাদের প্রতিবাদের জোয়ার — মানবাধিকারের পক্ষে নতুন নৈতিক জাগরণ ওবামাকেয়ার স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন: খরচ বাড়ছে, সতর্কতার সঙ্গে বেছে নেওয়ার আহ্বান শেখ হাসিনা : ভারত কি অবশেষে তাকে ‘আনলক’ করছে? গাজায় সহিংসতা ও মানবিক সংকটের মাঝে ইসরায়েলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সুদানে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ বিস্তার আরও দুই অঞ্চলে – বিপর্যয়ের মুখে লাখো মানুষ আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২০ জন নিহত, ক্ষতিগ্রস্ত ঐতিহাসিক নীল মসজিদ মানবতার পরীক্ষায় বিশ্বব্যাপী আহ্বান ৯০ বছরের পুরানো জ্যাজ রেকর্ডের রাজত্ব ভিডিও গেমস এবং যুব সমাজ: আধুনিক প্রযুক্তি ও খেলাধুলার প্রভাব জাপানে বিমানযাত্রার খাবার: আকাশে এয়ারলাইন্সগুলো খাবারের মান উন্নত করেছে

দৈনন্দিন হাঁটা বাড়ালে আলঝেইমার ধীরগতির হতে পারে

দৈনন্দিন হাঁটা বাড়ালে মস্তিষ্কের অবনতি কমে

প্রতিদিনের হাঁটার পরিমাণ বাড়ানো বয়সী মানুষদের মধ্যে জ্ঞানীয় (cognitive) অবনতির গতি কমাতে পারে— বিশেষ করে তাদের ক্ষেত্রে যাদের শরীরে ইতিমধ্যেই আলঝেইমার রোগের প্রাথমিক জৈবিক লক্ষণ বিদ্যমান। এক নতুন পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আলঝেইমারের প্রধান চিহ্ন হলো মস্তিষ্কে বেটা অ্যামাইলয়েড ও টাউ প্রোটিন জমে যাওয়া। অ্যামাইলয়েড প্রোটিন ৩০ বছর বয়স থেকেই নিউরনের মাঝে জমতে শুরু করতে পারে, যা কোষগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। এই জমাট ক্রমে অস্বাভাবিক টাউ প্রোটিনের বিস্তার ঘটায়, যা কোষের ভেতরে গিঁট তৈরি করে এবং শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধ্বংস করে।


হাঁটা কীভাবে সাহায্য করে

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে নিউরোলজিস্ট ড. ওয়াই-ইয়িং ওয়েন্ডি ইয়াউ বলেন, “নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ টাউ প্রোটিনের জমা কমাতে এবং প্রাথমিক আলঝেইমারে আক্রান্তদের স্মৃতিভ্রংশের গতি ধীর করতে সহায়তা করতে পারে।”

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ পদক্ষেপ হাঁটতেন তাদের ক্ষেত্রে গড়পড়তা ৩ বছর, আর যারা ৫,০০০ থেকে ৭,৫০০ পদক্ষেপ হাঁটতেন তাদের ক্ষেত্রে ৭ বছর পর্যন্ত জ্ঞানীয় অবনতি বিলম্বিত হয়েছে।


হাঁটার সংখ্যায় নয়, গুরুত্ব ভারসাম্যে

ফ্লোরিডার ইনস্টিটিউট ফর নিউরোজেনারেটিভ ডিজিজের গবেষণা পরিচালক ড. রিচার্ড আইজাকসন বলেন, শুধু নির্দিষ্ট পদক্ষেপের সংখ্যা নির্ভর করে আলঝেইমার প্রতিরোধের আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। তার মতে, “শুধু ৫,০০০ বা ৭,০০০ পদক্ষেপের মতো সংখ্যা শুনে আত্মতুষ্ট হওয়া উচিত নয়। কারও যদি বাড়তি ওজন, প্রিডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, শুধু হাঁটলেই যথেষ্ট নয়। প্রত্যেকের উচিত নিজের শরীরের অবস্থার ভিত্তিতে আলাদা পরিকল্পনা করা।”


গবেষণার বিবরণ

গবেষণাটি ছোট আকারের হলেও ছিল ১৪ বছরব্যাপী এবং এতে অংশ নেয় ৫০ থেকে ৯০ বছর বয়সী ২৯৬ জন। অংশগ্রহণকারীদের পদক্ষেপের সংখ্যা পেডোমিটার দিয়ে মাপা হয়, এবং তাদের প্রতি বছর কগনিটিভ টেস্ট নেওয়া হয়। গবেষণার শুরুতে সবার পিইটি (PET) স্ক্যান করা হয় অ্যামাইলয়েড ও টাউ প্রোটিনের মাত্রা যাচাইয়ের জন্য, আর কিছু অংশগ্রহণকারীর শেষেও পুনরায় স্ক্যান করা হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাসুদ হুসেইন বলেন, “এই গবেষণার শক্তি হলো একাধিক সময় ধরে উন্নতমানের স্ক্যান ও কগনিটিভ পরীক্ষার সমন্বয়। এমন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ খুব বিরল।”


ফলাফল: হাঁটায় টাউ কমে, স্থিরদের অবনতি দ্রুত

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৭,৫০০ পদক্ষেপ পর্যন্ত হাঁটতেন, তাদের মস্তিষ্কে টাউ প্রোটিনের জমা ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত ধীরগতি হয়। অন্যদিকে যারা অধিকাংশ সময় স্থির থাকতেন, তাদের ক্ষেত্রে টাউ প্রোটিন দ্রুত জমে এবং জ্ঞানীয় সক্ষমতা ও দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়।

অদ্ভুতভাবে, শারীরিক কার্যকলাপ ও বেটা অ্যামাইলয়েড হ্রাসের মধ্যে তেমন সম্পর্ক দেখা যায়নি। ড. ইয়াউ বলেন, “যাদের মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েডের পরিমাণ বেশি ছিল, তাদের মধ্যে বেশি হাঁটা টাউ প্রোটিনের ধীর জমা ঘটিয়েছে, আর সেটাই মূলত স্মৃতিভ্রংশের ধীরগতির কারণ।”


গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও বিশেষজ্ঞ মত

গবেষণাটি পর্যবেক্ষণমূলক হওয়ায় সরাসরি কারণ-ফল সম্পর্ক প্রমাণ করা যায়নি। তবু বিশেষজ্ঞরা একমত— হৃদযন্ত্রের জন্য যা ভালো, তা মস্তিষ্কের জন্যও ভালো। নিয়মিত হাঁটা, মানসিক চাপ কমানো, পর্যাপ্ত ঘুম ও উদ্ভিদভিত্তিক খাবার গ্রহণ—সবই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ড. আইজাকসন বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে জানি, যে ইঁদুররা নিয়মিত চাকার ওপর দৌড়ায়, তাদের মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড প্রায় ৫০% কম থাকে। মানুষে এই প্রভাব আরও গবেষণার দাবি রাখে, তবে আমি নিশ্চিত যে নিয়মিত ব্যায়াম অ্যামাইলয়েড কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।”


গবেষণাটি স্পষ্টভাবে দেখায়— নিয়মিত হাঁটা শুধু শরীরের নয়, মস্তিষ্কেরও এক প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হতে পারে। যদিও নির্দিষ্ট সংখ্যার পদক্ষেপই সমাধান নয়, সক্রিয় জীবনযাপনই আলঝেইমারের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম অস্ত্র হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ধর্মীয় নেতাদের প্রতিবাদের জোয়ার — মানবাধিকারের পক্ষে নতুন নৈতিক জাগরণ

দৈনন্দিন হাঁটা বাড়ালে আলঝেইমার ধীরগতির হতে পারে

১২:৪৬:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

দৈনন্দিন হাঁটা বাড়ালে মস্তিষ্কের অবনতি কমে

প্রতিদিনের হাঁটার পরিমাণ বাড়ানো বয়সী মানুষদের মধ্যে জ্ঞানীয় (cognitive) অবনতির গতি কমাতে পারে— বিশেষ করে তাদের ক্ষেত্রে যাদের শরীরে ইতিমধ্যেই আলঝেইমার রোগের প্রাথমিক জৈবিক লক্ষণ বিদ্যমান। এক নতুন পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আলঝেইমারের প্রধান চিহ্ন হলো মস্তিষ্কে বেটা অ্যামাইলয়েড ও টাউ প্রোটিন জমে যাওয়া। অ্যামাইলয়েড প্রোটিন ৩০ বছর বয়স থেকেই নিউরনের মাঝে জমতে শুরু করতে পারে, যা কোষগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। এই জমাট ক্রমে অস্বাভাবিক টাউ প্রোটিনের বিস্তার ঘটায়, যা কোষের ভেতরে গিঁট তৈরি করে এবং শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধ্বংস করে।


হাঁটা কীভাবে সাহায্য করে

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে নিউরোলজিস্ট ড. ওয়াই-ইয়িং ওয়েন্ডি ইয়াউ বলেন, “নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ টাউ প্রোটিনের জমা কমাতে এবং প্রাথমিক আলঝেইমারে আক্রান্তদের স্মৃতিভ্রংশের গতি ধীর করতে সহায়তা করতে পারে।”

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ পদক্ষেপ হাঁটতেন তাদের ক্ষেত্রে গড়পড়তা ৩ বছর, আর যারা ৫,০০০ থেকে ৭,৫০০ পদক্ষেপ হাঁটতেন তাদের ক্ষেত্রে ৭ বছর পর্যন্ত জ্ঞানীয় অবনতি বিলম্বিত হয়েছে।


হাঁটার সংখ্যায় নয়, গুরুত্ব ভারসাম্যে

ফ্লোরিডার ইনস্টিটিউট ফর নিউরোজেনারেটিভ ডিজিজের গবেষণা পরিচালক ড. রিচার্ড আইজাকসন বলেন, শুধু নির্দিষ্ট পদক্ষেপের সংখ্যা নির্ভর করে আলঝেইমার প্রতিরোধের আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। তার মতে, “শুধু ৫,০০০ বা ৭,০০০ পদক্ষেপের মতো সংখ্যা শুনে আত্মতুষ্ট হওয়া উচিত নয়। কারও যদি বাড়তি ওজন, প্রিডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, শুধু হাঁটলেই যথেষ্ট নয়। প্রত্যেকের উচিত নিজের শরীরের অবস্থার ভিত্তিতে আলাদা পরিকল্পনা করা।”


গবেষণার বিবরণ

গবেষণাটি ছোট আকারের হলেও ছিল ১৪ বছরব্যাপী এবং এতে অংশ নেয় ৫০ থেকে ৯০ বছর বয়সী ২৯৬ জন। অংশগ্রহণকারীদের পদক্ষেপের সংখ্যা পেডোমিটার দিয়ে মাপা হয়, এবং তাদের প্রতি বছর কগনিটিভ টেস্ট নেওয়া হয়। গবেষণার শুরুতে সবার পিইটি (PET) স্ক্যান করা হয় অ্যামাইলয়েড ও টাউ প্রোটিনের মাত্রা যাচাইয়ের জন্য, আর কিছু অংশগ্রহণকারীর শেষেও পুনরায় স্ক্যান করা হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাসুদ হুসেইন বলেন, “এই গবেষণার শক্তি হলো একাধিক সময় ধরে উন্নতমানের স্ক্যান ও কগনিটিভ পরীক্ষার সমন্বয়। এমন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ খুব বিরল।”


ফলাফল: হাঁটায় টাউ কমে, স্থিরদের অবনতি দ্রুত

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৭,৫০০ পদক্ষেপ পর্যন্ত হাঁটতেন, তাদের মস্তিষ্কে টাউ প্রোটিনের জমা ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত ধীরগতি হয়। অন্যদিকে যারা অধিকাংশ সময় স্থির থাকতেন, তাদের ক্ষেত্রে টাউ প্রোটিন দ্রুত জমে এবং জ্ঞানীয় সক্ষমতা ও দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়।

অদ্ভুতভাবে, শারীরিক কার্যকলাপ ও বেটা অ্যামাইলয়েড হ্রাসের মধ্যে তেমন সম্পর্ক দেখা যায়নি। ড. ইয়াউ বলেন, “যাদের মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েডের পরিমাণ বেশি ছিল, তাদের মধ্যে বেশি হাঁটা টাউ প্রোটিনের ধীর জমা ঘটিয়েছে, আর সেটাই মূলত স্মৃতিভ্রংশের ধীরগতির কারণ।”


গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও বিশেষজ্ঞ মত

গবেষণাটি পর্যবেক্ষণমূলক হওয়ায় সরাসরি কারণ-ফল সম্পর্ক প্রমাণ করা যায়নি। তবু বিশেষজ্ঞরা একমত— হৃদযন্ত্রের জন্য যা ভালো, তা মস্তিষ্কের জন্যও ভালো। নিয়মিত হাঁটা, মানসিক চাপ কমানো, পর্যাপ্ত ঘুম ও উদ্ভিদভিত্তিক খাবার গ্রহণ—সবই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ড. আইজাকসন বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে জানি, যে ইঁদুররা নিয়মিত চাকার ওপর দৌড়ায়, তাদের মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড প্রায় ৫০% কম থাকে। মানুষে এই প্রভাব আরও গবেষণার দাবি রাখে, তবে আমি নিশ্চিত যে নিয়মিত ব্যায়াম অ্যামাইলয়েড কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।”


গবেষণাটি স্পষ্টভাবে দেখায়— নিয়মিত হাঁটা শুধু শরীরের নয়, মস্তিষ্কেরও এক প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হতে পারে। যদিও নির্দিষ্ট সংখ্যার পদক্ষেপই সমাধান নয়, সক্রিয় জীবনযাপনই আলঝেইমারের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম অস্ত্র হতে পারে।