০২:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও লাভে এগিয়ে টয়োটা, ট্রাম্পের শুল্কের মাঝেও বিক্রিতে রেকর্ড মার্থা ওয়াশিংটন থেকে মেলানিয়া ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডিদের পোশাকে ইতিহাস, রাজনীতি ও শক্তির প্রতিচ্ছবি চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলির ঘটনায় কী জানা যাচ্ছে; দলগুলো কেন ক্যাডার রাখে? ট্রাম্প যখন যুদ্ধ শেষের দম্ভ দেখাচ্ছেন, চীন তখন নীরবে শান্তির পথে কাজ করছে অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার সাত দশক পর ব্রিটিশ মিউজিক্যালে নতুন জীবন পেল প্রিয় ভালুক সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা

মার্থা ওয়াশিংটন থেকে মেলানিয়া ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডিদের পোশাকে ইতিহাস, রাজনীতি ও শক্তির প্রতিচ্ছবি

ফ্যাশনে প্রথম নারীদের শক্তি

মিশেল ওবামার নতুন বই দ্য লুক প্রকাশের পর, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডিদের পোশাক ও শৈলী আবারও আলোচনায় এসেছে। ইতিহাসজুড়ে এই নারীরা শুধু পোশাক পরেননি—তাদের স্টাইল ছিল সময়ের প্রতিফলন, রাজনৈতিক বার্তা ও ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি।

আফ্রিকান-আমেরিকান স্টাডিজের অধ্যাপক ফারাহ জেসমিন গ্রিফিন বইটির ভূমিকায় লিখেছেন, “এই লুক, এই নারী—সবকিছুই ছিল সাহসী, শক্তিশালী, ভবিষ্যতমুখী ও অনুপ্রেরণাদায়ক।” বইটিতে মিশেল ওবামার পোশাক নির্বাচনের পেছনের ভাবনা, তার স্টাইলিস্ট, মেকআপ আর্টিস্ট ও হেয়ার ডিজাইনারদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে।

ওবামা নিজেই বলেছেন, “আমি ভেবেচিন্তে পোশাক বেছে নিতাম। এতে আমি অন্তর্ভুক্তি, বৈচিত্র্য ও সুযোগ প্রসারের কথা বলতে চেয়েছি—ফ্যাশন ছিল তার একটি মাধ্যম।”


ফার্স্ট লেডির পোশাক: সৌন্দর্যের বাইরে রাজনৈতিক তাৎপর্য

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের স্ত্রীদের পোশাক সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। সংবিধানে তাদের ভূমিকা স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও, সময়ের সঙ্গে তা বিবর্তিত হয়েছে। ইতিহাসবিদ আইনাভ রবিনোভিচ-ফক্স বলেন, “প্রত্যেক ফার্স্ট লেডি পোশাককে ভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন। এটি কখনো কূটনীতির হাতিয়ার, কখনো জাতীয় বার্তা।”

২০শ শতাব্দীতে এলেনর রুজভেল্টের সময় থেকেই এই ভূমিকা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ওবামা যেমন বলেছিলেন, “ফার্স্ট লেডি হওয়া এক ধরনের ‘কাজবিহীন কাজ’। আপনাকে অনুপ্রেরণাদায়ক ও গ্রহণযোগ্য হতে হয়, নিজের মতো অথচ প্রতিনিধি হয়ে থাকতে হয়।”


মার্থা ওয়াশিংটন: মর্যাদা ও সরলতার প্রতীক

প্রথম ফার্স্ট লেডি হিসেবে মার্থা ওয়াশিংটনের কোনো পূর্বনির্দেশনা ছিল না। তিনি রাজকীয় আভিজাত্যের বদলে দেশীয় বস্ত্র ও সরল গাম্ভীর্য বেছে নিয়েছিলেন। তার পোশাক ছিল গাঢ় রঙের, অলংকার ছিল সংযত—‘জাতির মা’র মর্যাদার সঙ্গে মানানসই। তিনি দেশীয় কাপড়ে পোশাক তৈরি করতেন, যা ছিল তার দেশপ্রেমের প্রতীক।


ডলি ম্যাডিসন: প্রথম ফ্যাশন আইকন

জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রকৃত ফ্যাশনপ্রেমী ফার্স্ট লেডি। তিনি পাগড়ি ধাঁচের টুপি, খোলা গলার পোশাক, এমনকি রুজ ব্যবহারকে জনপ্রিয় করেছিলেন। তার সামাজিক আচার-আচরণ, খাবার পরিবেশন—সবই ফ্যাশনের অংশ হয়ে ওঠে। তার আভিজাত্যপূর্ণ পোশাক ও প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব তার স্বামীর রাজনৈতিক অবস্থানেও প্রভাব ফেলেছিল।


মেমি আইজেনহাওয়ার: সাধারণ নারীর প্রতিচ্ছবি

১৯৫০-এর দশকে মেমি আইজেনহাওয়ারের পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের গৃহিণীচিত্রের প্রতীক হয়ে ওঠে। তিনি ডিওরের “নিউ লুক” ধাঁচের ফ্যাশনে নারীত্বের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তার প্রিয় রং গোলাপি (“মেমি পিংক”) হয়ে ওঠে যুগের প্রতীক—গৃহকেন্দ্রিক নারীর প্রতিচ্ছবি হিসেবে। তার ছোট খড়ের টুপির জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, ইকুয়েডরের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।


জ্যাকি কেনেডি: ফ্যাশনের স্বর্ণযুগ

ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে জ্যাকি কেনেডিই সবচেয়ে প্রভাবশালী ফ্যাশন আইকন হিসেবে পরিচিত। ওলেগ কাসিনি তার জন্য বিশেষ পোশাক নকশা করতেন—সুন্দর কাট, পিলবক্স হ্যাট, ইউরোপীয় শৈলী—সবকিছু মিলে তিনি হয়ে ওঠেন অনন্য। ইউরোপীয় ফ্যাশনের প্রতি তার অনুরাগ কূটনৈতিক বার্তাও বহন করত, যদিও কেউ কেউ এটিকে ‘অতি ইউরোপীয়’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। এমনকি তিনি শ্যানেলের ডিজাইন আমেরিকায় নকল করিয়ে পরতেন, দেশীয় আনুগত্য বজায় রাখতে।


ন্যান্সি রিগ্যান: ঐশ্বর্য ও কনজারভেটিভ প্রতীক

১৯৮০-এর দশকের বিলাসিতার প্রতীক ছিলেন ন্যান্সি রিগ্যান। তিনি শ্যানেল, ভ্যালেন্টিনো, অস্কার দে লা রেন্টা প্রমুখের পোশাক পরতেন এবং তার ‘রিগ্যান রেড’ রঙটি বিশেষভাবে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তার ফ্যাশন সচেতনতা যেমন প্রশংসিত হয়েছিল, তেমনি সমালোচিতও হয়েছিল—বিশেষ করে অর্থনৈতিক মন্দার সময় তার বিলাসী পোশাকের জন্য। তবে তিনি মিডিয়া ও ক্যামেরার ভাষা বুঝতেন—হলিউডের অভিজ্ঞতা ছিল তার সবচেয়ে বড় শক্তি।


হিলারি ক্লিনটন: কর্মজীবী নারীর প্রতীক

১৯৯০-এর দশকে হিলারি ক্লিনটন প্যান্টসুট ও হেডব্যান্ডের মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। তার পোশাক বলত—তিনি শুধু স্ত্রী নন, একজন পেশাদার নারী। তার পোশাক নির্বাচনে ছিল বাস্তবতা ও দৃঢ়তা। যদিও তিনি ফ্যাশনের জন্য নয়, নীতিনির্ধারণে বেশি পরিচিত হন, পরে তিনি বুঝেছিলেন—ফ্যাশনও রাজনৈতিক বার্তা বহন করতে পারে।


মিশেল ওবামা: অন্তর্ভুক্তি ও আধুনিকতার প্রতীক

অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে মিশেল ওবামা জনপ্রিয় ব্র্যান্ড যেমন টার্গেট বা জে.ক্রুর পোশাক পরতেন—সাধারণ নারীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য। তিনি তরুণ আমেরিকান ডিজাইনারদের পোশাক পরতেন, যার ফলে তাদের ব্যবসায়িক সাফল্যও বাড়ে। তার পোশাক রাজনীতি, পরিচয় ও গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক হয়ে ওঠে।

তার চুলের ধরন নিয়েও বিতর্ক ছিল। তিনি বলেছেন, “আমি জানতাম দেশ হয়তো তখনও প্রস্তুত নয়।” প্রেসিডেন্সির পর তিনি আরও স্বাধীনভাবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন—“আমি তখন সত্যিই চুল খুলে ফেলেছিলাম,” তিনি রসিকতা করে বলেন। এমনকি তার খোলা বাহুর পোশাক নিয়েও সমালোচনা হয়েছিল, যার জবাবে তিনি বলেন, “জ্যাকি কেনেডিও তো sleeveless পোশাক পরতেন—তাহলে এটা শুধু রাজনীতি।”


মেলানিয়া ট্রাম্প: সৌন্দর্য না বার্তা?

মেলানিয়া ট্রাম্পের পোশাক ছিল নিখুঁতভাবে সাজানো, বিলাসবহুল ও প্রভাবশালী। তার ট্রেঞ্চকোট, টাক্সেডো, এমনকি সামরিক ছোঁয়াযুক্ত পোশাক তাকে আলাদা করে তুলেছিল। তবে তার কিছু পোশাক বিতর্কও সৃষ্টি করেছে—যেমন আফ্রিকা সফরে পরা পিথ হ্যাট বা শিশু অভিবাসী ক্যাম্পে পরা জ্যাকেট, যাতে লেখা ছিল “I really don’t care, do u?”।

রবিনোভিচ-ফক্স বলেন, “মেলানিয়া খুব কম কথা বলতেন, তাই তার পোশাকই হয়ে উঠেছিল তার ভাষা।” প্রাক্তন মডেল হিসেবে তিনি জানতেন, পোশাক কিভাবে শক্তিশালী বার্তা দিতে পারে।


 ফ্যাশনের রাজনৈতিক শক্তি

ইতিহাস দেখিয়েছে, ফার্স্ট লেডিদের পোশাক কখনোই নিছক রুচির প্রকাশ নয়—এটি কূটনীতি, নারীর অবস্থান, রাজনীতির বার্তা ও সমাজের পরিবর্তনের প্রতীক। এখন অপেক্ষা, যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম “ফার্স্ট জেন্টলম্যান” এলে এই ধারার রূপ কেমন হবে।


 


#ফ্যাশন #রাজনীতি#ফার্স্টলেডি

জনপ্রিয় সংবাদ

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও লাভে এগিয়ে টয়োটা, ট্রাম্পের শুল্কের মাঝেও বিক্রিতে রেকর্ড

মার্থা ওয়াশিংটন থেকে মেলানিয়া ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডিদের পোশাকে ইতিহাস, রাজনীতি ও শক্তির প্রতিচ্ছবি

১১:২৬:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫

ফ্যাশনে প্রথম নারীদের শক্তি

মিশেল ওবামার নতুন বই দ্য লুক প্রকাশের পর, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডিদের পোশাক ও শৈলী আবারও আলোচনায় এসেছে। ইতিহাসজুড়ে এই নারীরা শুধু পোশাক পরেননি—তাদের স্টাইল ছিল সময়ের প্রতিফলন, রাজনৈতিক বার্তা ও ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি।

আফ্রিকান-আমেরিকান স্টাডিজের অধ্যাপক ফারাহ জেসমিন গ্রিফিন বইটির ভূমিকায় লিখেছেন, “এই লুক, এই নারী—সবকিছুই ছিল সাহসী, শক্তিশালী, ভবিষ্যতমুখী ও অনুপ্রেরণাদায়ক।” বইটিতে মিশেল ওবামার পোশাক নির্বাচনের পেছনের ভাবনা, তার স্টাইলিস্ট, মেকআপ আর্টিস্ট ও হেয়ার ডিজাইনারদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে।

ওবামা নিজেই বলেছেন, “আমি ভেবেচিন্তে পোশাক বেছে নিতাম। এতে আমি অন্তর্ভুক্তি, বৈচিত্র্য ও সুযোগ প্রসারের কথা বলতে চেয়েছি—ফ্যাশন ছিল তার একটি মাধ্যম।”


ফার্স্ট লেডির পোশাক: সৌন্দর্যের বাইরে রাজনৈতিক তাৎপর্য

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের স্ত্রীদের পোশাক সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। সংবিধানে তাদের ভূমিকা স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও, সময়ের সঙ্গে তা বিবর্তিত হয়েছে। ইতিহাসবিদ আইনাভ রবিনোভিচ-ফক্স বলেন, “প্রত্যেক ফার্স্ট লেডি পোশাককে ভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন। এটি কখনো কূটনীতির হাতিয়ার, কখনো জাতীয় বার্তা।”

২০শ শতাব্দীতে এলেনর রুজভেল্টের সময় থেকেই এই ভূমিকা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ওবামা যেমন বলেছিলেন, “ফার্স্ট লেডি হওয়া এক ধরনের ‘কাজবিহীন কাজ’। আপনাকে অনুপ্রেরণাদায়ক ও গ্রহণযোগ্য হতে হয়, নিজের মতো অথচ প্রতিনিধি হয়ে থাকতে হয়।”


মার্থা ওয়াশিংটন: মর্যাদা ও সরলতার প্রতীক

প্রথম ফার্স্ট লেডি হিসেবে মার্থা ওয়াশিংটনের কোনো পূর্বনির্দেশনা ছিল না। তিনি রাজকীয় আভিজাত্যের বদলে দেশীয় বস্ত্র ও সরল গাম্ভীর্য বেছে নিয়েছিলেন। তার পোশাক ছিল গাঢ় রঙের, অলংকার ছিল সংযত—‘জাতির মা’র মর্যাদার সঙ্গে মানানসই। তিনি দেশীয় কাপড়ে পোশাক তৈরি করতেন, যা ছিল তার দেশপ্রেমের প্রতীক।


ডলি ম্যাডিসন: প্রথম ফ্যাশন আইকন

জেমস ম্যাডিসনের স্ত্রী ডলি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রকৃত ফ্যাশনপ্রেমী ফার্স্ট লেডি। তিনি পাগড়ি ধাঁচের টুপি, খোলা গলার পোশাক, এমনকি রুজ ব্যবহারকে জনপ্রিয় করেছিলেন। তার সামাজিক আচার-আচরণ, খাবার পরিবেশন—সবই ফ্যাশনের অংশ হয়ে ওঠে। তার আভিজাত্যপূর্ণ পোশাক ও প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব তার স্বামীর রাজনৈতিক অবস্থানেও প্রভাব ফেলেছিল।


মেমি আইজেনহাওয়ার: সাধারণ নারীর প্রতিচ্ছবি

১৯৫০-এর দশকে মেমি আইজেনহাওয়ারের পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের গৃহিণীচিত্রের প্রতীক হয়ে ওঠে। তিনি ডিওরের “নিউ লুক” ধাঁচের ফ্যাশনে নারীত্বের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তার প্রিয় রং গোলাপি (“মেমি পিংক”) হয়ে ওঠে যুগের প্রতীক—গৃহকেন্দ্রিক নারীর প্রতিচ্ছবি হিসেবে। তার ছোট খড়ের টুপির জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, ইকুয়েডরের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।


জ্যাকি কেনেডি: ফ্যাশনের স্বর্ণযুগ

ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে জ্যাকি কেনেডিই সবচেয়ে প্রভাবশালী ফ্যাশন আইকন হিসেবে পরিচিত। ওলেগ কাসিনি তার জন্য বিশেষ পোশাক নকশা করতেন—সুন্দর কাট, পিলবক্স হ্যাট, ইউরোপীয় শৈলী—সবকিছু মিলে তিনি হয়ে ওঠেন অনন্য। ইউরোপীয় ফ্যাশনের প্রতি তার অনুরাগ কূটনৈতিক বার্তাও বহন করত, যদিও কেউ কেউ এটিকে ‘অতি ইউরোপীয়’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। এমনকি তিনি শ্যানেলের ডিজাইন আমেরিকায় নকল করিয়ে পরতেন, দেশীয় আনুগত্য বজায় রাখতে।


ন্যান্সি রিগ্যান: ঐশ্বর্য ও কনজারভেটিভ প্রতীক

১৯৮০-এর দশকের বিলাসিতার প্রতীক ছিলেন ন্যান্সি রিগ্যান। তিনি শ্যানেল, ভ্যালেন্টিনো, অস্কার দে লা রেন্টা প্রমুখের পোশাক পরতেন এবং তার ‘রিগ্যান রেড’ রঙটি বিশেষভাবে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তার ফ্যাশন সচেতনতা যেমন প্রশংসিত হয়েছিল, তেমনি সমালোচিতও হয়েছিল—বিশেষ করে অর্থনৈতিক মন্দার সময় তার বিলাসী পোশাকের জন্য। তবে তিনি মিডিয়া ও ক্যামেরার ভাষা বুঝতেন—হলিউডের অভিজ্ঞতা ছিল তার সবচেয়ে বড় শক্তি।


হিলারি ক্লিনটন: কর্মজীবী নারীর প্রতীক

১৯৯০-এর দশকে হিলারি ক্লিনটন প্যান্টসুট ও হেডব্যান্ডের মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। তার পোশাক বলত—তিনি শুধু স্ত্রী নন, একজন পেশাদার নারী। তার পোশাক নির্বাচনে ছিল বাস্তবতা ও দৃঢ়তা। যদিও তিনি ফ্যাশনের জন্য নয়, নীতিনির্ধারণে বেশি পরিচিত হন, পরে তিনি বুঝেছিলেন—ফ্যাশনও রাজনৈতিক বার্তা বহন করতে পারে।


মিশেল ওবামা: অন্তর্ভুক্তি ও আধুনিকতার প্রতীক

অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে মিশেল ওবামা জনপ্রিয় ব্র্যান্ড যেমন টার্গেট বা জে.ক্রুর পোশাক পরতেন—সাধারণ নারীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য। তিনি তরুণ আমেরিকান ডিজাইনারদের পোশাক পরতেন, যার ফলে তাদের ব্যবসায়িক সাফল্যও বাড়ে। তার পোশাক রাজনীতি, পরিচয় ও গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক হয়ে ওঠে।

তার চুলের ধরন নিয়েও বিতর্ক ছিল। তিনি বলেছেন, “আমি জানতাম দেশ হয়তো তখনও প্রস্তুত নয়।” প্রেসিডেন্সির পর তিনি আরও স্বাধীনভাবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন—“আমি তখন সত্যিই চুল খুলে ফেলেছিলাম,” তিনি রসিকতা করে বলেন। এমনকি তার খোলা বাহুর পোশাক নিয়েও সমালোচনা হয়েছিল, যার জবাবে তিনি বলেন, “জ্যাকি কেনেডিও তো sleeveless পোশাক পরতেন—তাহলে এটা শুধু রাজনীতি।”


মেলানিয়া ট্রাম্প: সৌন্দর্য না বার্তা?

মেলানিয়া ট্রাম্পের পোশাক ছিল নিখুঁতভাবে সাজানো, বিলাসবহুল ও প্রভাবশালী। তার ট্রেঞ্চকোট, টাক্সেডো, এমনকি সামরিক ছোঁয়াযুক্ত পোশাক তাকে আলাদা করে তুলেছিল। তবে তার কিছু পোশাক বিতর্কও সৃষ্টি করেছে—যেমন আফ্রিকা সফরে পরা পিথ হ্যাট বা শিশু অভিবাসী ক্যাম্পে পরা জ্যাকেট, যাতে লেখা ছিল “I really don’t care, do u?”।

রবিনোভিচ-ফক্স বলেন, “মেলানিয়া খুব কম কথা বলতেন, তাই তার পোশাকই হয়ে উঠেছিল তার ভাষা।” প্রাক্তন মডেল হিসেবে তিনি জানতেন, পোশাক কিভাবে শক্তিশালী বার্তা দিতে পারে।


 ফ্যাশনের রাজনৈতিক শক্তি

ইতিহাস দেখিয়েছে, ফার্স্ট লেডিদের পোশাক কখনোই নিছক রুচির প্রকাশ নয়—এটি কূটনীতি, নারীর অবস্থান, রাজনীতির বার্তা ও সমাজের পরিবর্তনের প্রতীক। এখন অপেক্ষা, যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম “ফার্স্ট জেন্টলম্যান” এলে এই ধারার রূপ কেমন হবে।


 


#ফ্যাশন #রাজনীতি#ফার্স্টলেডি