০২:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

কোরিয়ার নতুন শ্রোতা–সংস্কৃতিতে স্পটিফাই এর বড় বাজি

কোরিয়ায় গান শোনা এখন শুধুই বিনোদন নয়, বরং জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠছে। কোরিয়ান পপ সংস্কৃতির বিশ্বময় প্রসার এবং জেন–জেড প্রজন্মের প্লেলিস্ট–ভিত্তিক স্ব–অভিব্যক্তি সংগীত–স্ট্রিমিং বাজারকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। এই পরিবর্তনের সুযোগ নিতে স্পটিফাই নিজেকে শুধু একটি অ্যাপ নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।

স্পটিফাই হাউস সিউল ছিল সেই প্রচেষ্টারই অংশ। ১৩–১৫ নভেম্বর সিউলের সঙসু–দোঙে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই পপ–আপ ইভেন্ট একটি সাধারণ ভবনকে রূপ দেয় আলো, সংগীত, প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার অভিজ্ঞতামূলক কেন্দ্রে। এতে ছিল ইন্টারঅ্যাকটিভ রুম, সাউন্ড জোন, শিল্পীদের সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণমূলক নানা অভিজ্ঞতা, যা স্পটিফাই এর কোরিয়ান সংগীত–সংস্কৃতির গভীরে প্রবেশের প্রচেষ্টা আরও স্পষ্ট করে।

কেন কোরিয়া গুরুত্বপূর্ণ—এর উত্তরে রয়েছে বৈশ্বিক কে–পপ বিস্তার এবং তরুণ শ্রোতাদের আন্তর্জাতিক সংগীতের দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা। স্ট্রিমিং–প্ল্যাটফর্মগুলো এখন ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন অভ্যাস এর সঙ্গে নিজেদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করার প্রতিযোগিতায় রয়েছে, আর স্পটিফাই এই বাজারে নতুন সুযোগ দেখছে।

তিনতলা স্পটিফাই হাউসে প্রযুক্তি, নকশা ও সংগীত–অভিজ্ঞতা মিলেমিশে ছিল উৎসবের আবহে। প্রথম তলায় ছিল ডে–লিস্ট ক্যাফে, যা দিনের মুড অনুযায়ী পরিবেশ ও মেনু বদলাত। উপরতলার লসলেস লিভিং রুমে সেনহাইজারের হেডফোনে শ্রোতারা উপভোগ করেছেন উচ্চ মানের অডিও। স্টিকার বম্ব স্টুডিওতে দর্শনার্থীরা প্লেলিস্ট মিক্স ও গান–ট্রানজিশন করে নিজেদের সাউন্ড–আর্ক তৈরি করেছেন, যা তরুণদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় ছিল। দ্য কিড লারাই, সেন্ট্রাল সি, জিকো, জে পার্ক, বিবি, কিস অব লাইফ ও জায়ন টি–সহ বহু শিল্পী এতে পারফর্ম করেছেন।

২০২১ সালে কোরিয়ায় প্রবেশের পর স্পটিফাই এর বড় পরিবর্তন আসে ফ্রি–টিয়ার চালুর মাধ্যমে। মোবাইল ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ৮ লাখ ২০ হাজার মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ লাখ ৮০ হাজারে। ফলে এটি ইউটিউব মিউজিক ও মেলনের পর কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে। অনেক তরুণ ব্যবহারকারী ফ্রি–টিয়ার থেকেই শুরু করে পরবর্তীতে মানসম্মত সুপারিশ ব্যবস্থার কারণে প্ল্যাটফর্মে স্থায়ী হয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে গত দশকে কে–পপ স্ট্রিম ৪৭০ গুণ বেড়েছে—স্পটিফাই এই তথ্যকে ভিত্তি করে কোরিয়াকে শুধু স্থানীয় বাজার নয়, বরং আন্তর্জাতিক ভক্ত–অংশগ্রহণের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছে। দেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলো এখনও স্থানীয় চার্টে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বৈশ্বিক বিস্তার, আন্তর্জাতিক শ্রোতা বৃদ্ধির মতো পরিমাপ স্পটিফাই এর শক্তি বেশি। ফলে কোরিয়ান শ্রোতারা এখন একাধিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন—কোরিয়ান চার্টের জন্য দেশীয় অ্যাপ, আর বিশ্বময় বিস্তারের জন্য স্পটিফাই।

স্পটিফাইয়ের কে–পপ অন, রাডার কোরিয়া–এর মতো প্লেলিস্ট নতুন শিল্পীদের আন্তর্জাতিক শ্রোতার কাছে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি করছে। তবে দেশীয় প্ল্যাটফর্ম যেমন মেলন গত এক বছরে প্রবৃদ্ধি দেখাতে পারেনি, আর ইউটিউব মিউজিক প্রিমিয়াম বান্ডেল সুবিধার কারণে শীর্ষে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরিয়ান পরিষেবাগুলি মূল্যনীতি ও প্রযুক্তিতে পরিবর্তন না আনলে তারা আরও পিছিয়ে পড়তে পারে।

বিশ্বব্যাপী স্ট্রিমিং শিল্প এখন এমন একটি সময়ে প্রবেশ করছে যেখানে শুধু সংগীতের পরিমাণ বা মূল্য নয়—ব্যবহারকারীর রুচি অনুযায়ী বৈশ্বিক সংগীতভ্রমণে প্ল্যাটফর্ম কতটা দক্ষতার সঙ্গে পথ দেখাতে পারে, সেটিই হয়ে উঠছে প্রকৃত প্রতিযোগিতা। কোরিয়া নতুন প্রযুক্তি ও পপ–সংস্কৃতির দ্রুত অভিযোজনের কারণে এই পরিবর্তনের জন্য আদর্শ পরীক্ষাগার। এখানে স্পটিফাই সফল হলে তাদের বৈশ্বিক অবস্থানও আরও শক্তিশালী হবে। আর সিউলের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতের সংগীত আবিষ্কারকে আরও বৈশ্বিক, ব্যক্তিগত ও অ্যালগরিদম–নির্ভর করে তুলবে।

#Spotify_Korea #Kpop_Global #Music_Streaming #Seoul_Event #Digital_Culture

জনপ্রিয় সংবাদ

কোরিয়ার নতুন শ্রোতা–সংস্কৃতিতে স্পটিফাই এর বড় বাজি

১২:৩৫:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

কোরিয়ায় গান শোনা এখন শুধুই বিনোদন নয়, বরং জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠছে। কোরিয়ান পপ সংস্কৃতির বিশ্বময় প্রসার এবং জেন–জেড প্রজন্মের প্লেলিস্ট–ভিত্তিক স্ব–অভিব্যক্তি সংগীত–স্ট্রিমিং বাজারকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। এই পরিবর্তনের সুযোগ নিতে স্পটিফাই নিজেকে শুধু একটি অ্যাপ নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।

স্পটিফাই হাউস সিউল ছিল সেই প্রচেষ্টারই অংশ। ১৩–১৫ নভেম্বর সিউলের সঙসু–দোঙে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই পপ–আপ ইভেন্ট একটি সাধারণ ভবনকে রূপ দেয় আলো, সংগীত, প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার অভিজ্ঞতামূলক কেন্দ্রে। এতে ছিল ইন্টারঅ্যাকটিভ রুম, সাউন্ড জোন, শিল্পীদের সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণমূলক নানা অভিজ্ঞতা, যা স্পটিফাই এর কোরিয়ান সংগীত–সংস্কৃতির গভীরে প্রবেশের প্রচেষ্টা আরও স্পষ্ট করে।

কেন কোরিয়া গুরুত্বপূর্ণ—এর উত্তরে রয়েছে বৈশ্বিক কে–পপ বিস্তার এবং তরুণ শ্রোতাদের আন্তর্জাতিক সংগীতের দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা। স্ট্রিমিং–প্ল্যাটফর্মগুলো এখন ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন অভ্যাস এর সঙ্গে নিজেদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করার প্রতিযোগিতায় রয়েছে, আর স্পটিফাই এই বাজারে নতুন সুযোগ দেখছে।

তিনতলা স্পটিফাই হাউসে প্রযুক্তি, নকশা ও সংগীত–অভিজ্ঞতা মিলেমিশে ছিল উৎসবের আবহে। প্রথম তলায় ছিল ডে–লিস্ট ক্যাফে, যা দিনের মুড অনুযায়ী পরিবেশ ও মেনু বদলাত। উপরতলার লসলেস লিভিং রুমে সেনহাইজারের হেডফোনে শ্রোতারা উপভোগ করেছেন উচ্চ মানের অডিও। স্টিকার বম্ব স্টুডিওতে দর্শনার্থীরা প্লেলিস্ট মিক্স ও গান–ট্রানজিশন করে নিজেদের সাউন্ড–আর্ক তৈরি করেছেন, যা তরুণদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় ছিল। দ্য কিড লারাই, সেন্ট্রাল সি, জিকো, জে পার্ক, বিবি, কিস অব লাইফ ও জায়ন টি–সহ বহু শিল্পী এতে পারফর্ম করেছেন।

২০২১ সালে কোরিয়ায় প্রবেশের পর স্পটিফাই এর বড় পরিবর্তন আসে ফ্রি–টিয়ার চালুর মাধ্যমে। মোবাইল ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ৮ লাখ ২০ হাজার মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ লাখ ৮০ হাজারে। ফলে এটি ইউটিউব মিউজিক ও মেলনের পর কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে। অনেক তরুণ ব্যবহারকারী ফ্রি–টিয়ার থেকেই শুরু করে পরবর্তীতে মানসম্মত সুপারিশ ব্যবস্থার কারণে প্ল্যাটফর্মে স্থায়ী হয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে গত দশকে কে–পপ স্ট্রিম ৪৭০ গুণ বেড়েছে—স্পটিফাই এই তথ্যকে ভিত্তি করে কোরিয়াকে শুধু স্থানীয় বাজার নয়, বরং আন্তর্জাতিক ভক্ত–অংশগ্রহণের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছে। দেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলো এখনও স্থানীয় চার্টে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বৈশ্বিক বিস্তার, আন্তর্জাতিক শ্রোতা বৃদ্ধির মতো পরিমাপ স্পটিফাই এর শক্তি বেশি। ফলে কোরিয়ান শ্রোতারা এখন একাধিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন—কোরিয়ান চার্টের জন্য দেশীয় অ্যাপ, আর বিশ্বময় বিস্তারের জন্য স্পটিফাই।

স্পটিফাইয়ের কে–পপ অন, রাডার কোরিয়া–এর মতো প্লেলিস্ট নতুন শিল্পীদের আন্তর্জাতিক শ্রোতার কাছে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি করছে। তবে দেশীয় প্ল্যাটফর্ম যেমন মেলন গত এক বছরে প্রবৃদ্ধি দেখাতে পারেনি, আর ইউটিউব মিউজিক প্রিমিয়াম বান্ডেল সুবিধার কারণে শীর্ষে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরিয়ান পরিষেবাগুলি মূল্যনীতি ও প্রযুক্তিতে পরিবর্তন না আনলে তারা আরও পিছিয়ে পড়তে পারে।

বিশ্বব্যাপী স্ট্রিমিং শিল্প এখন এমন একটি সময়ে প্রবেশ করছে যেখানে শুধু সংগীতের পরিমাণ বা মূল্য নয়—ব্যবহারকারীর রুচি অনুযায়ী বৈশ্বিক সংগীতভ্রমণে প্ল্যাটফর্ম কতটা দক্ষতার সঙ্গে পথ দেখাতে পারে, সেটিই হয়ে উঠছে প্রকৃত প্রতিযোগিতা। কোরিয়া নতুন প্রযুক্তি ও পপ–সংস্কৃতির দ্রুত অভিযোজনের কারণে এই পরিবর্তনের জন্য আদর্শ পরীক্ষাগার। এখানে স্পটিফাই সফল হলে তাদের বৈশ্বিক অবস্থানও আরও শক্তিশালী হবে। আর সিউলের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতের সংগীত আবিষ্কারকে আরও বৈশ্বিক, ব্যক্তিগত ও অ্যালগরিদম–নির্ভর করে তুলবে।

#Spotify_Korea #Kpop_Global #Music_Streaming #Seoul_Event #Digital_Culture