রোলিং স্টোনকে জানালেন ট্যুরের ক্লান্তি, আনন্দ আর ব্রিয়াইজদের গল্প
রাইজ (RIIZE) এই বছর তাদের ‘RIIZING LOUD’ বিশ্ব সফরের মাধ্যমে কেপপ জগতে নিজেদের নাম পাকাপোক্ত করেছে। রোলিং স্টোন ইউকে–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছয় সদস্যের এই গ্রুপ জানায়, ২২টি গানের সেটলিস্ট নিয়ে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার একের পর এক শহরে পারফর্ম করা যত ক্লান্তিকর, তার থেকেও বেশি পুরস্কার মিলেছে ভক্তদের প্রতিক্রিয়ায়। লন্ডনে SMTOWN–এর মঞ্চ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে—প্রতিটি শো তাদের কাছে আলাদা স্মৃতি। কোনো কোনো কনসার্টে পেছনের সারিতে পরিবার–সহ শিশুদের নাচতে দেখা, আবার কোথাও সোল্ড–আউট অ্যারেনা একসঙ্গে কোরাস ধরে গাওয়া—সবকিছু মিলিয়ে সদস্যরা বলছেন, “ব্রিয়াইজরা (ভক্তরা) আমাদের গানকে নিজের জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলেছে।”
দলের এক সদস্য মনে করে, ওয়াশিংটন ডিসির শোতে পেছনের সারিতে যখন পুরো একটি পরিবার নাচতে নাচতে হাততালি দিচ্ছিল, তখন স্টেজ হঠাৎ অনেক ছোট ও ব্যক্তিগত লাগছিল। আরেকজন বলছেন, নিউ ইয়র্কে আরেক কনসার্টে দর্শকরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গলা মিলিয়ে গাইতে থাকায় তিনি প্রায় কেঁদে ফেলেছিলেন, তবে শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নেন। ব্যস্ত সূচির মাঝেও শহরের রাস্তায় ছোট ছোট হাঁটা, ক্যাফে থেকে দ্রুত কফি নিয়ে নেওয়া, লোকজনের ভিড় লক্ষ্য করা—এসবই তাদের জন্য ভ্রমণ উপভোগ করার প্রধান উপায় হয়ে উঠেছে। তাদের ভাষায়, “হোটেল আর ভ্যানের মধ্যে যাতায়াতের ফাঁকে কয়েক মিনিটের হাঁটাই কখনো কখনো একমাত্র অবকাশ।”
লাইভ পারফরম্যান্সে কোন গানগুলো ভক্তদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংযোগ তৈরি করছে, সে কথাও উঠে এসেছে সাক্ষাৎকারে। গিটার–ড্রাইভেন গান ‘Siren’–কে এক সদস্য তার “তাৎক্ষণিক এনার্জি বুস্টার” বলে উল্লেখ করেছেন—দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্ত হলেও প্রথম লাইন শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে যেন সমস্ত ক্লান্তি উধাও হয়ে যায়। অন্যদিকে ‘Boom Boom Bass’ হয়ে উঠেছে নাচের মঞ্চের প্রিয় গান; রাইজের সদস্যরা নিজেই অবাক, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভক্তরা কীভাবে একেবারে নিখুঁতভাবে একই হাতের মুভ আর স্টেপ রিপিট করছে। তাদের মতে, কোরিওগ্রাফি এখন কেবল কোরিয়া নয়, বৈশ্বিক ভক্ত–সমাজের এক সাধারণ ভাষা।

মিউজিক ভিডিওর রোলারব্লেড–সিন থেকে ট্যুর বাসের দুষ্টুমি
রোলিং স্টোন ইউকে–এর ফিচারটিতে ভক্তদের জন্য আছে অনেক অনুজ্জ্বল কিন্তু প্রিয় মুহূর্তের গল্প। ‘Fame’ মিউজিক ভিডিওতে থাকা রোলারব্লেড–করা দৃশ্যের কথা বলতে গিয়ে এক সদস্য হেসেই ফেলেন—অনেক বছর পর স্কেটে উঠতে গিয়ে কেমন টলোমলো হয়ে গেছেন, বার বার টেক নিতে হয়েছে। আরেকজন বলেন, এসব “ছোট ভুল” আর সেগুলো নিয়ে পরস্পরকে মজা করা তাদের চাপ কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে ক্যামেরা বন্ধ থাকা অবস্থায়। তাদের বক্তব্য, ঝকঝকে আইডল ইমেজের পেছনে প্রকৃত বন্ধুত্ব ও হাসাহাসি না থাকলে দীর্ঘ ট্যুর মানসিকভাবে টিকে থাকা কঠিন।
সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে দলের ভিতরের “দুষ্টুমি–এনার্জি”–রও নানা দিক। কেউ কেউ স্বীকার করেছেন, কোনো কোনো দিন পুরো ট্যুর বাসে ক্লাউন মোডে থাকেন এক জন; অন্য দিন আবার আরেকজন রিহার্সালের মাঝে ছোট ছোট প্র্যাঙ্ক করে সবাইকে চমকে দেন। একজন মজা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গেলে নাকি তার কথা বলার ভলিউম নিজে থেকেই অনেক বেড়ে যায়—বাকি সদস্যরা এখন নিয়মিত এই নিয়ে টিজ করে। আরেক জনপ্রিয় ইনসাইড জোক হলো, দুই সদস্য পাশাপাশি দাঁড়ালে তারা যেন “বাবা–ছেলে”; পোশাক বদল করে দাঁড়ালে উচ্চতা আর সাইজের পার্থক্য দেখে ভক্তরা আরও বেশি হাসাহাসি করেন। এসব গল্প কেবল বিনোদন নয়, আইডল–জীবনের চাপ সামলে রাখার অস্ত্রও বটে।
রাইজের জন্য এই ফিচারটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন কোরিয়ান পপ ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নতুন গ্রুপ বাজারে প্রবেশ করছে এবং আন্তর্জাতিক মনোযোগের জন্য সবাই লড়াই করছে। বিস্তারিত ছবি, সফরের অন্তরালের মুহূর্ত আর ক্লান্তি–নার্ভাসনেস–সব মিলে নিজেদের ভঙ্গুর দিকটিও দেখাতে তারা যে প্রস্তুত, তা এই সাক্ষাৎকার স্পষ্ট করেছে। ‘Fame’ গানের খ্যাতি আর চাপ সামলানোর থিমও তাই এক বছরের বিশ্ব সফর শেষে নতুন অর্থ পাচ্ছে—স্টেজে আলো ঝলমল করলেও, পেছনে রয়েছে অসংখ্য প্র্যাকটিস, ভ্রমণ আর নিজেকে ধরে রাখার লড়াই। বছরের শেষ দিকে এসে রাইজ বলছে, তারা এখন ভাবছে কীভাবে নতুন সাউন্ড খুঁজবে, অথচ স্টেজে যে স্পন্টেনিয়াস মজা ব্রিয়াইজরা পছন্দ করে, তা হারাবে না।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















