০৯:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

এশিয়ার ইএসজি কোন পথে এগোচ্ছে

  • কিম সাং-উ
  • ০৮:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • 7

গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। আইনি বিষয়ক কমিটির প্রস্তাবিত ‘সিম্প্লিফিকেশন ওমনিবাস’ বিল—যার উদ্দেশ্য ছিল প্রশাসনিক জটিলতা কমানো এবং করপোরেট রিপোর্টিং বাধ্যবাধকতা সহজ করা—২২ অক্টোবর অপ্রত্যাশিতভাবে বাতিল হয়ে যায়।

ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত এই বিলটি ছিল একটি বিস্তৃত আইনগত প্যাকেজ, যার মাধ্যমে পরিবেশ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং করপোরেট প্রশাসন (ESG)-সংক্রান্ত রিপোর্টিং এবং ডিউ ডিলিজেন্সের চাপ কমানো লক্ষ্য করা হয়। এর অন্যতম প্রধান অংশ করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডিরেকটিভ (CSDDD), যা কোম্পানিগুলোকে তাদের বৈশ্বিক সরবরাহশৃঙ্খলে মানবাধিকার ও পরিবেশগত ঝুঁকি চিহ্নিত ও সমাধান করতে বাধ্য করে।

১৩ নভেম্বর পার্লামেন্টের আরেকটি প্লেনারি ভোটে বড় কোম্পানিগুলোর জন্য রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা কমানো হয়। অর্থাৎ, রিপোর্টিং কেবল বড় ব্যবসার জন্য সহজতর আকারে বাধ্যতামূলক করা হয়। বৈশ্বিক মান নির্ধারণকারী ইউরোপের এই পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে: বৈশ্বিক সরবরাহশৃঙ্খলের কেন্দ্র এশিয়ায় ইএসজি এখন কোন পথে?

এদিকে, ১৩-১৪ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হয় কেমব্রিজ ফোরাম অন ইন্টারন্যাশনাল ইএসজি ইন এশিয়া-প্যাসিফিক। এটি ছিল একটি বিশেষায়িত ফোরাম, যেখানে প্রায় ৩০ জন ইএসজি বিশেষজ্ঞ—মূলত আইনজীবী—বিশ্বখ্যাত কোম্পানি ও শীর্ষস্থানীয় আইন সংস্থা থেকে অংশ নেন।

চীন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, তাইওয়ান, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীরা সরকারি নীতি ও করপোরেট কৌশল নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা ভাগ করেন এবং বাস্তব উদাহরণের ভিত্তিতে খোলামেলা আলোচনায় যুক্ত হন।

এই প্রথম ধরনের ফোরামে অংশ নিয়ে আমি এশিয়ার ইএসজি গতিপথে তিনটি স্পষ্ট দিক লক্ষ্য করেছি—বাধ্যতামূলককরণ, বাস্তবধর্মিতা ও মূল্য সৃষ্টি।

এশিয়ার ইএসজির তিন দিক

প্রথম প্রবণতা হলো, এশিয়ায় ইএসজি নীতি ধীরে ধীরে স্বেচ্ছামূলক থেকে বাধ্যতামূলক রূপ নিচ্ছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও জাপানের মতো দেশগুলো আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধাপে ধাপে বাধ্যতামূলক ইএসজি প্রকাশ কাঠামো চালু করছে।

প্রাথমিক ধাপে বড় ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য জলবায়ু-সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলক করা হবে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া ২০২৮ সাল থেকে, আর জাপান ২০২৭ সাল থেকে এ নিয়ম কার্যকর করবে। তবে এই পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে—যখন যুক্তরাষ্ট্র অ্যান্টি-ইএসজি নীতি নিয়েছে এবং ইউরোপ নিয়ম শিথিল করছে, তখন এশিয়া আরও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। কিন্তু এই উদ্বেগ প্রশমিত করছে দ্বিতীয় প্রবণতা: বাস্তবধর্মিতা।

এশীয় নিয়ন্ত্রকেরা বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে খুব ধীর ও বাস্তবসম্মতভাবে নিয়ম প্রয়োগ করছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতার কারণে তারা সময়সীমা সমন্বয় করছে এবং সমর্থন ব্যবস্থাও জোরদার করছে।

উদাহরণ হিসেবে সিঙ্গাপুরকে ধরা যায়। সেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য এই বছর থেকেই নিঃসরণ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আগস্টে তারা ছোট ব্যবসাগুলোর প্রস্তুতি এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়সীমা পিছিয়ে দেয়।

এশিয়ার এই বাস্তবধর্মিতা পশ্চিমা বিশ্বের নিয়ন্ত্রক শিথিলতার সঙ্গে মিল রয়েছে। এশীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউরোপের সরলীকরণ কোনো পশ্চাদপসরণ নয়—বরং প্রতিযোগিতামূলক শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য বাস্তবসম্মত সামঞ্জস্য। এর একটি উদাহরণ হলো ইউরোপের কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম। ছোট আমদানিকারকদের ছাড় দেওয়া হলেও মোট নিঃসরণের ৯৯ শতাংশের জন্য দায়ী বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এই নীতি বহাল রয়েছে—এটি নিখুঁত বাস্তবধর্মী পদ্ধতি।

ইএসজি এখন করপোরেট মূল্য সৃষ্টির উপায় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে—অথবা কমপক্ষে বিদ্যমান মূল্য রক্ষার মাধ্যম হিসেবে। ইএসজির প্রাথমিক ‘বুদবুদ’ ভেঙে যাওয়ার পর, সবুজ প্রলেপ দেওয়া (গ্রীনওয়াশিং) কর্মকাণ্ডের শাস্তি বেড়েছে, ফলে কোম্পানিগুলো ব্যয়ের বিষয়ে আরও সতর্ক হয়েছে। এর ফলে এমন উদ্যোগের চাহিদা বেড়েছে, যেগুলো বিনিয়োগের বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য লাভ এনে দেয়—এবং এর কিছু সফল উদাহরণও রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে ভারতের একটি ইলেকট্রিক গাড়ি (EV) নির্মাতা কোম্পানির কথা বলা যায়। জ্বালানি পরিবর্তনের এই সময়ে তারা সময়োপযোগীভাবে প্রিমিয়াম ইভি সিরিজ তৈরি করে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা ভারতের যাত্রীবাহী ইভি বাজারের ৪০ শতাংশ দখল করেছে।

সরাসরি আয়ের পাশাপাশি এই উদ্যোগ বহুস্তরীয় সুফল দিয়েছে—ব্র্যান্ডের সুনাম বৃদ্ধি, পুঁজি সংগ্রহ সহজ হওয়া, বীমা সুবিধা পাওয়া (কারণ দুর্বল ইএসজি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক বীমাকর্তা কভার দিতে চায় না), এবং সরকারি ভর্তুকি ও কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া।

সরবরাহশৃঙ্খল: প্রধান চালিকাশক্তি

এই তিন প্রবণতার অন্যতম প্রধান চালক হলো বৈশ্বিক সরবরাহশৃঙ্খলের ভেতরকার চাহিদা। উন্নত দেশের ইএসজি শর্ত এশিয়া জুড়ে তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে, যার ফলে দেশগুলো সক্রিয়, স্থানীয়কৃত প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। ইউরোপের সিএসডিডিডি-র মতো নিয়ম মোকাবিলায় তাইওয়ান ও চীন নিজেদের সরবরাহশৃঙ্খল স্বচ্ছতা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত আইনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাপানে বড় শিল্পসংঘের জটিল বিদেশি সরবরাহশৃঙ্খল নিয়ম মানার বিষয়ে পরামর্শ চাওয়ার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।

তাইওয়ান ও চীনের এই সক্রিয়তা শুধু মান্যতার জন্য নয়; তাদের লক্ষ্য বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখা, যাতে তাদের রপ্তানিকারকরা ইউরোপের মতো মূল বাজার থেকে বাদ না পড়ে।

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাবের মধ্যে অনেকেই বলতে পারেন, ইএসজি কেবল একটি সাময়িক প্রবণতা—এখন এমন “বিলাসী” আলোচনার সময় নয়।

কিন্তু অঞ্চলজুড়ে নেতাদের কাছ থেকে আমি যে স্পষ্ট দিকটি দেখেছি তা হলো—এশিয়া এগিয়ে চলেছে। তারা ইএসজিকে বাধ্যতামূলক করছে, বাস্তববাদীভাবে প্রয়োগ করছে এবং কৌশলগতভাবে করপোরেট মূল্যের সঙ্গে যুক্ত করছে। এই দিকনির্দেশনা অব্যাহত থাকলে ইএসজি বোঝা নয়—বরং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

লেখক পরিচিতি: কিম সাং-উ, কিম অ্যান্ড চ্যাং-এর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান এবং ন্যাশনাল ক্লাইমেট ফান্ড ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য।

জনপ্রিয় সংবাদ

এশিয়ার ইএসজি কোন পথে এগোচ্ছে

০৮:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। আইনি বিষয়ক কমিটির প্রস্তাবিত ‘সিম্প্লিফিকেশন ওমনিবাস’ বিল—যার উদ্দেশ্য ছিল প্রশাসনিক জটিলতা কমানো এবং করপোরেট রিপোর্টিং বাধ্যবাধকতা সহজ করা—২২ অক্টোবর অপ্রত্যাশিতভাবে বাতিল হয়ে যায়।

ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত এই বিলটি ছিল একটি বিস্তৃত আইনগত প্যাকেজ, যার মাধ্যমে পরিবেশ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং করপোরেট প্রশাসন (ESG)-সংক্রান্ত রিপোর্টিং এবং ডিউ ডিলিজেন্সের চাপ কমানো লক্ষ্য করা হয়। এর অন্যতম প্রধান অংশ করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডিরেকটিভ (CSDDD), যা কোম্পানিগুলোকে তাদের বৈশ্বিক সরবরাহশৃঙ্খলে মানবাধিকার ও পরিবেশগত ঝুঁকি চিহ্নিত ও সমাধান করতে বাধ্য করে।

১৩ নভেম্বর পার্লামেন্টের আরেকটি প্লেনারি ভোটে বড় কোম্পানিগুলোর জন্য রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা কমানো হয়। অর্থাৎ, রিপোর্টিং কেবল বড় ব্যবসার জন্য সহজতর আকারে বাধ্যতামূলক করা হয়। বৈশ্বিক মান নির্ধারণকারী ইউরোপের এই পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে: বৈশ্বিক সরবরাহশৃঙ্খলের কেন্দ্র এশিয়ায় ইএসজি এখন কোন পথে?

এদিকে, ১৩-১৪ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হয় কেমব্রিজ ফোরাম অন ইন্টারন্যাশনাল ইএসজি ইন এশিয়া-প্যাসিফিক। এটি ছিল একটি বিশেষায়িত ফোরাম, যেখানে প্রায় ৩০ জন ইএসজি বিশেষজ্ঞ—মূলত আইনজীবী—বিশ্বখ্যাত কোম্পানি ও শীর্ষস্থানীয় আইন সংস্থা থেকে অংশ নেন।

চীন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, তাইওয়ান, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীরা সরকারি নীতি ও করপোরেট কৌশল নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা ভাগ করেন এবং বাস্তব উদাহরণের ভিত্তিতে খোলামেলা আলোচনায় যুক্ত হন।

এই প্রথম ধরনের ফোরামে অংশ নিয়ে আমি এশিয়ার ইএসজি গতিপথে তিনটি স্পষ্ট দিক লক্ষ্য করেছি—বাধ্যতামূলককরণ, বাস্তবধর্মিতা ও মূল্য সৃষ্টি।

এশিয়ার ইএসজির তিন দিক

প্রথম প্রবণতা হলো, এশিয়ায় ইএসজি নীতি ধীরে ধীরে স্বেচ্ছামূলক থেকে বাধ্যতামূলক রূপ নিচ্ছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও জাপানের মতো দেশগুলো আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধাপে ধাপে বাধ্যতামূলক ইএসজি প্রকাশ কাঠামো চালু করছে।

প্রাথমিক ধাপে বড় ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য জলবায়ু-সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলক করা হবে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া ২০২৮ সাল থেকে, আর জাপান ২০২৭ সাল থেকে এ নিয়ম কার্যকর করবে। তবে এই পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে—যখন যুক্তরাষ্ট্র অ্যান্টি-ইএসজি নীতি নিয়েছে এবং ইউরোপ নিয়ম শিথিল করছে, তখন এশিয়া আরও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। কিন্তু এই উদ্বেগ প্রশমিত করছে দ্বিতীয় প্রবণতা: বাস্তবধর্মিতা।

এশীয় নিয়ন্ত্রকেরা বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে খুব ধীর ও বাস্তবসম্মতভাবে নিয়ম প্রয়োগ করছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতার কারণে তারা সময়সীমা সমন্বয় করছে এবং সমর্থন ব্যবস্থাও জোরদার করছে।

উদাহরণ হিসেবে সিঙ্গাপুরকে ধরা যায়। সেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য এই বছর থেকেই নিঃসরণ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আগস্টে তারা ছোট ব্যবসাগুলোর প্রস্তুতি এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়সীমা পিছিয়ে দেয়।

এশিয়ার এই বাস্তবধর্মিতা পশ্চিমা বিশ্বের নিয়ন্ত্রক শিথিলতার সঙ্গে মিল রয়েছে। এশীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউরোপের সরলীকরণ কোনো পশ্চাদপসরণ নয়—বরং প্রতিযোগিতামূলক শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য বাস্তবসম্মত সামঞ্জস্য। এর একটি উদাহরণ হলো ইউরোপের কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম। ছোট আমদানিকারকদের ছাড় দেওয়া হলেও মোট নিঃসরণের ৯৯ শতাংশের জন্য দায়ী বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এই নীতি বহাল রয়েছে—এটি নিখুঁত বাস্তবধর্মী পদ্ধতি।

ইএসজি এখন করপোরেট মূল্য সৃষ্টির উপায় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে—অথবা কমপক্ষে বিদ্যমান মূল্য রক্ষার মাধ্যম হিসেবে। ইএসজির প্রাথমিক ‘বুদবুদ’ ভেঙে যাওয়ার পর, সবুজ প্রলেপ দেওয়া (গ্রীনওয়াশিং) কর্মকাণ্ডের শাস্তি বেড়েছে, ফলে কোম্পানিগুলো ব্যয়ের বিষয়ে আরও সতর্ক হয়েছে। এর ফলে এমন উদ্যোগের চাহিদা বেড়েছে, যেগুলো বিনিয়োগের বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য লাভ এনে দেয়—এবং এর কিছু সফল উদাহরণও রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে ভারতের একটি ইলেকট্রিক গাড়ি (EV) নির্মাতা কোম্পানির কথা বলা যায়। জ্বালানি পরিবর্তনের এই সময়ে তারা সময়োপযোগীভাবে প্রিমিয়াম ইভি সিরিজ তৈরি করে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা ভারতের যাত্রীবাহী ইভি বাজারের ৪০ শতাংশ দখল করেছে।

সরাসরি আয়ের পাশাপাশি এই উদ্যোগ বহুস্তরীয় সুফল দিয়েছে—ব্র্যান্ডের সুনাম বৃদ্ধি, পুঁজি সংগ্রহ সহজ হওয়া, বীমা সুবিধা পাওয়া (কারণ দুর্বল ইএসজি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক বীমাকর্তা কভার দিতে চায় না), এবং সরকারি ভর্তুকি ও কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া।

সরবরাহশৃঙ্খল: প্রধান চালিকাশক্তি

এই তিন প্রবণতার অন্যতম প্রধান চালক হলো বৈশ্বিক সরবরাহশৃঙ্খলের ভেতরকার চাহিদা। উন্নত দেশের ইএসজি শর্ত এশিয়া জুড়ে তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে, যার ফলে দেশগুলো সক্রিয়, স্থানীয়কৃত প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। ইউরোপের সিএসডিডিডি-র মতো নিয়ম মোকাবিলায় তাইওয়ান ও চীন নিজেদের সরবরাহশৃঙ্খল স্বচ্ছতা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত আইনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাপানে বড় শিল্পসংঘের জটিল বিদেশি সরবরাহশৃঙ্খল নিয়ম মানার বিষয়ে পরামর্শ চাওয়ার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।

তাইওয়ান ও চীনের এই সক্রিয়তা শুধু মান্যতার জন্য নয়; তাদের লক্ষ্য বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখা, যাতে তাদের রপ্তানিকারকরা ইউরোপের মতো মূল বাজার থেকে বাদ না পড়ে।

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাবের মধ্যে অনেকেই বলতে পারেন, ইএসজি কেবল একটি সাময়িক প্রবণতা—এখন এমন “বিলাসী” আলোচনার সময় নয়।

কিন্তু অঞ্চলজুড়ে নেতাদের কাছ থেকে আমি যে স্পষ্ট দিকটি দেখেছি তা হলো—এশিয়া এগিয়ে চলেছে। তারা ইএসজিকে বাধ্যতামূলক করছে, বাস্তববাদীভাবে প্রয়োগ করছে এবং কৌশলগতভাবে করপোরেট মূল্যের সঙ্গে যুক্ত করছে। এই দিকনির্দেশনা অব্যাহত থাকলে ইএসজি বোঝা নয়—বরং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

লেখক পরিচিতি: কিম সাং-উ, কিম অ্যান্ড চ্যাং-এর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান এবং ন্যাশনাল ক্লাইমেট ফান্ড ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য।