০৮:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
কাম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, আধা মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: প্রতিটি উপজেলা-থানায় ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের  বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি ভাতার দাবিতে আন্দোলন: সচিবালয় থেকে ৪ জন পুলিশি হেফাজতে পদত্যাগী আসিফ–মাহফুজের সম্পদ–ঘোষণা প্রকাশের চাপ বাড়ছে রাজশাহীর গভীর নলকূপে পড়ে নিখোঁজ দুই বছরের সাজিদ: উদ্ধার অভিযান জুড়ে টানটান উৎকণ্ঠা ৪৬তম বিসিএসের ভাইভা ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ পাঁচ দিনের রিমান্ডে খুলনায় বাসায় সৌদি ফেরত নারীর রহস্যজনক মৃত্যু প্রার্থীদের প্রচারণা সামগ্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ ইসির

ট্রাম্পের বারো বিলিয়ন ডলারের সহায়তা কৃষকদের ক্ষতি পোষাতে পারবে না

আমেরিকার কৃষকরা এ বছর ভয়াবহ লোকসান টানছেন। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন বারো বিলিয়ন ডলারের নতুন কৃষি সহায়তা। কৃষক সমাজ বলছে, এই সহায়তা স্বস্তি দিলেও বিপুল ক্ষতির সামনে এটি কেবল এক বছরের জন্য শ্বাস নেওয়ার সুযোগ, কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

কৃষকদের লোকসান আকাশছোঁয়া

এ বছর ভুট্টা, সয়াবিন, গম, চিনাবাদামসহ নয়টি প্রধান ফসল থেকে মোট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় পঁয়ত্রিশ থেকে চুয়াল্লিশ বিলিয়ন ডলার। দাম কম, উৎপাদন খরচ বেশি এবং রপ্তানি আটকে যাওয়ায় কৃষকদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়েছে। শ্রমিক খরচ থেকে শুরু করে সার–বীজ—সব কিছুর দাম বেড়েছে। তার ওপর ট্রাম্পের বাণিজ্য বিরোধে সয়াবিনসহ গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজার ধসে পড়ে।

ন্যাশনাল ফারমার্স ইউনিয়ন জানিয়েছে, সরকার ঘোষিত সহায়তা জীবনরক্ষাকারী হলেও এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। তাদের মতে, এটি কেবল কৃষকদের পরের মৌসুম পর্যন্ত টেনে নেওয়ার সাময়িক সহায়তা।

সরকারের লক্ষ্য ও বাস্তবতা

ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, কর ও ব্যয় সংক্রান্ত নতুন আইন কৃষকদের ভবিষ্যতে আরও বেশি সরকারি পেমেন্ট দেবে। তাদের দাবি, নতুন আইন অনুযায়ী ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে রেফারেন্স মূল্য ১০ থেকে ২১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে, যা নিরাপত্তা জালের পেমেন্টকে আরও শক্তিশালী করবে। কিন্তু কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাড়তি সুবিধাও ঋণের পাহাড় ও ব্যয়স্ফীতি কাটিয়ে কৃষকদের টেকসই নিরাপত্তা দিতে পারবে না।

অ্যামেরিকান ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফার্মার ম্যাক-এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, কৃষি ঋণদাতাদের অর্ধেকেরও বেশি মনে করছেন, ২০২৬ সালে তাদের ঋণগ্রহীতা কৃষকদের লাভে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।

বারো বিলিয়নের সহায়তা কেবলই ‘একটি সেতু’

ক্যানসাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ জেনিফার ইফট বলেছেন, এই সহায়তা রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে যাবে, কিন্তু যারা আর্থিকভাবে ভয়াবহ চাপে আছেন, তাঁদের জন্য এটি কেবলই একটি সেতুবন্ধন। পারড্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে দেখা গেছে, কৃষকদের অর্ধেকেরও বেশি এই অর্থ ব্যয় করবেন ঋণ শোধে, নতুন যন্ত্র কেনা বা পুঁজি বিনিয়োগে নয়।

সয়াবিনের ধাক্কা সামলানো কঠিন

চীন মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আমেরিকার সমস্ত সয়াবিন আমদানি বন্ধ রাখে। এর ফলে কৃষকরা পিক সিজনের শুরুতেই কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাজার হারান। বিশ্লেষকদের মতে, এই চাহিদা আর ফিরে আসবে না। সহায়তা প্যাকেজ সয়াবিন ক্ষতির মাত্র এক-চতুর্থাংশ পূরণ করতে পারবে।

সয়াবিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যালেব র‍্যাগল্যান্ড বলেন, অর্থ সহায়তা প্রয়োজনীয় হলেও এটি শুধু “রক্তক্ষরণ ধীরে করা” ছাড়া আর কিছুই নয়।

সবচেয়ে পিছিয়ে সবজি ও ফলের কৃষকরা

বারো বিলিয়নের মধ্যে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ আছে ফল ও সবজি উৎপাদনকারীদের জন্য। আলুর কৃষকদের ক্ষতি শুধু রাশেট আলুতেই প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার। জাতীয় পটেটো কাউন্সিলের প্রধান কাম কোয়ার্লস বলছেন, এই বিভাগে সহায়তা মোটেও যথেষ্ট নয়। তাঁর ভাষায়, “প্রয়োজন আরও অনেক বেশি।”

ট্রাম্পের আগের মেয়াদে দুই বছরে তেইশ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। কিছু অঞ্চলে বেশি অর্থ পাওয়ার সমালোচনাও ওঠে। তবে নতুন সহায়তা বণ্টন হবে জমির পরিমাণ, উৎপাদন খরচ এবং অন্যান্য নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী।

#আমেরিকা #কৃষি #ট্রাম্প #সহায়তা #সয়াবিন #ফসলসংকট #যুক্তরাষ্ট্রঅর্থনীতি #কৃষকসংকট #রপ্তানিবিরোধ #ফার্মঅর্থনীতি

জনপ্রিয় সংবাদ

কাম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, আধা মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত

ট্রাম্পের বারো বিলিয়ন ডলারের সহায়তা কৃষকদের ক্ষতি পোষাতে পারবে না

০৪:৪৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

আমেরিকার কৃষকরা এ বছর ভয়াবহ লোকসান টানছেন। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন বারো বিলিয়ন ডলারের নতুন কৃষি সহায়তা। কৃষক সমাজ বলছে, এই সহায়তা স্বস্তি দিলেও বিপুল ক্ষতির সামনে এটি কেবল এক বছরের জন্য শ্বাস নেওয়ার সুযোগ, কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

কৃষকদের লোকসান আকাশছোঁয়া

এ বছর ভুট্টা, সয়াবিন, গম, চিনাবাদামসহ নয়টি প্রধান ফসল থেকে মোট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় পঁয়ত্রিশ থেকে চুয়াল্লিশ বিলিয়ন ডলার। দাম কম, উৎপাদন খরচ বেশি এবং রপ্তানি আটকে যাওয়ায় কৃষকদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়েছে। শ্রমিক খরচ থেকে শুরু করে সার–বীজ—সব কিছুর দাম বেড়েছে। তার ওপর ট্রাম্পের বাণিজ্য বিরোধে সয়াবিনসহ গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজার ধসে পড়ে।

ন্যাশনাল ফারমার্স ইউনিয়ন জানিয়েছে, সরকার ঘোষিত সহায়তা জীবনরক্ষাকারী হলেও এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। তাদের মতে, এটি কেবল কৃষকদের পরের মৌসুম পর্যন্ত টেনে নেওয়ার সাময়িক সহায়তা।

সরকারের লক্ষ্য ও বাস্তবতা

ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, কর ও ব্যয় সংক্রান্ত নতুন আইন কৃষকদের ভবিষ্যতে আরও বেশি সরকারি পেমেন্ট দেবে। তাদের দাবি, নতুন আইন অনুযায়ী ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে রেফারেন্স মূল্য ১০ থেকে ২১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে, যা নিরাপত্তা জালের পেমেন্টকে আরও শক্তিশালী করবে। কিন্তু কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাড়তি সুবিধাও ঋণের পাহাড় ও ব্যয়স্ফীতি কাটিয়ে কৃষকদের টেকসই নিরাপত্তা দিতে পারবে না।

অ্যামেরিকান ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফার্মার ম্যাক-এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, কৃষি ঋণদাতাদের অর্ধেকেরও বেশি মনে করছেন, ২০২৬ সালে তাদের ঋণগ্রহীতা কৃষকদের লাভে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।

বারো বিলিয়নের সহায়তা কেবলই ‘একটি সেতু’

ক্যানসাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ জেনিফার ইফট বলেছেন, এই সহায়তা রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে যাবে, কিন্তু যারা আর্থিকভাবে ভয়াবহ চাপে আছেন, তাঁদের জন্য এটি কেবলই একটি সেতুবন্ধন। পারড্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে দেখা গেছে, কৃষকদের অর্ধেকেরও বেশি এই অর্থ ব্যয় করবেন ঋণ শোধে, নতুন যন্ত্র কেনা বা পুঁজি বিনিয়োগে নয়।

সয়াবিনের ধাক্কা সামলানো কঠিন

চীন মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আমেরিকার সমস্ত সয়াবিন আমদানি বন্ধ রাখে। এর ফলে কৃষকরা পিক সিজনের শুরুতেই কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাজার হারান। বিশ্লেষকদের মতে, এই চাহিদা আর ফিরে আসবে না। সহায়তা প্যাকেজ সয়াবিন ক্ষতির মাত্র এক-চতুর্থাংশ পূরণ করতে পারবে।

সয়াবিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যালেব র‍্যাগল্যান্ড বলেন, অর্থ সহায়তা প্রয়োজনীয় হলেও এটি শুধু “রক্তক্ষরণ ধীরে করা” ছাড়া আর কিছুই নয়।

সবচেয়ে পিছিয়ে সবজি ও ফলের কৃষকরা

বারো বিলিয়নের মধ্যে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ আছে ফল ও সবজি উৎপাদনকারীদের জন্য। আলুর কৃষকদের ক্ষতি শুধু রাশেট আলুতেই প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার। জাতীয় পটেটো কাউন্সিলের প্রধান কাম কোয়ার্লস বলছেন, এই বিভাগে সহায়তা মোটেও যথেষ্ট নয়। তাঁর ভাষায়, “প্রয়োজন আরও অনেক বেশি।”

ট্রাম্পের আগের মেয়াদে দুই বছরে তেইশ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। কিছু অঞ্চলে বেশি অর্থ পাওয়ার সমালোচনাও ওঠে। তবে নতুন সহায়তা বণ্টন হবে জমির পরিমাণ, উৎপাদন খরচ এবং অন্যান্য নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী।

#আমেরিকা #কৃষি #ট্রাম্প #সহায়তা #সয়াবিন #ফসলসংকট #যুক্তরাষ্ট্রঅর্থনীতি #কৃষকসংকট #রপ্তানিবিরোধ #ফার্মঅর্থনীতি