০৮:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
নোবেলজয়ী সাকাগুচির লক্ষ্য ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগান্তকারী আবিষ্কারের ব্যবহার কাম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, আধা মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: প্রতিটি উপজেলা-থানায় ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের  বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি ভাতার দাবিতে আন্দোলন: সচিবালয় থেকে ৪ জন পুলিশি হেফাজতে পদত্যাগী আসিফ–মাহফুজের সম্পদ–ঘোষণা প্রকাশের চাপ বাড়ছে রাজশাহীর গভীর নলকূপে পড়ে নিখোঁজ দুই বছরের সাজিদ: উদ্ধার অভিযান জুড়ে টানটান উৎকণ্ঠা ৪৬তম বিসিএসের ভাইভা ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ পাঁচ দিনের রিমান্ডে খুলনায় বাসায় সৌদি ফেরত নারীর রহস্যজনক মৃত্যু

দাতার শুক্রাণুতে ক্যান্সারের জিন, ঝুঁকিতে প্রায় ২০০ শিশু

এই দাতার শুক্রাণু ইউরোপের বিভিন্ন ক্লিনিকে ব্যবহার করা হয়েছিল (প্রতীকী ছবি)

একজন শুক্রাণু দাতা নিজেও জানতেন না যে তার দেহে এমন একটি জিনগত পরিবর্তন (মিউটেশন) আছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়— তার শুক্রাণু ব্যবহার করে ইউরোপজুড়ে অন্তত ১৯৭টি সন্তানের জন্ম হয়েছে। বড় ধরনের এক অনুসন্ধানে এই তথ্য জানা গেছে।

কিছু শিশু ইতোমধ্যেই মারা গেছে এবং যারা এই জিনগত পরিবর্তন (মিউটেশন) উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ক্যান্সার এড়াতে পারবে।

এই শুক্রাণু যুক্তরাজ্যের কোনো ক্লিনিকে বিক্রি করা হয়নি। তবে বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে যে খুব অল্পসংখ্যক ব্রিটিশ পরিবার (যাদের ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে) ডেনমার্কে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার সময় ওই দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করেছিলেন।

শুক্রাণুটি বিক্রি করেছিল ডেনমার্কের যেই ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক, সেটি জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি তাদের ‘গভীর সহানুভূতি’ রয়েছে এবং স্বীকার করেছে যে কিছু দেশে ওই দাতার শুক্রাণু দিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে।

প্রজনন ক্লিনিকের পরীক্ষাগারে ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখছেন এবং ডিম্বাণুতে শুক্রাণু যোগ করছেন

দাতার শুক্রাণুর প্রায় ২০ শতাংশ অংশে এমন একটি মিউটেশন আছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, প্রতীকী ছবি

ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে বিবিসিসহ ১৪টি পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টার এই অনুসন্ধান যৌথভাবে পরিচালনা করেছে।

অজ্ঞাত পরিচয়ের একজনের কাছ থেকে শুক্রাণুটি নেওয়া হয়েছিলো। যিনি ২০০৫ সালে ছাত্র থাকা অবস্থায় অর্থের বিনিময়ে শুক্রাণু দান শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রায় ১৭ বছর ধরে বিভিন্ন নারী তার শুক্রাণু ব্যবহার করেছেন।

তিনি সুস্থ ছিলেন এবং দাতা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব স্ক্রিনিং পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। তবে জন্মের আগেই তার কিছু কোষের ডিএনএ-তে পরিবর্তন (মিউটেশন) ঘটেছিল।

এই পরিবর্তন টিপি-ফাইভ থ্রি জিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে—যে জিনের মূল কাজ হলো দেহের কোষগুলোকে ক্যান্সারে রূপ নেওয়া থেকে রক্ষা করা।

দাতার শরীরের বেশিরভাগ অংশে বিপজ্জনক টিপি-ফাইভ থ্রি জিন নেই, কিন্তু তার প্রায় ২০ শতাংশ শুক্রাণুতে এটি রয়েছে।

তবে, এই আক্রান্ত শুক্রাণু দিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর প্রতিটি কোষেই এই জিনগত পরিবর্তন থাকবে।

দাতার শুক্রাণু থেকে ঝুঁকির কারণ

এ অবস্থাকে লি-ফ্রমেনি সিনড্রোম বলা হয়, এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত থাকে—বিশেষ করে শিশুকালে এবং পরে জীবনের কোনো সময়ে স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে।

লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চের ক্যান্সার জেনেটিসিস্ট প্রফেসর ক্লেয়ার টার্নবুল বিবিসিকে বলেছেন, “এটি একটি ভয়ঙ্কর তথ্য। এটি যেকোনো পরিবারের জন্য একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং সেই ঝুঁকির সঙ্গে সারা জীবন বাঁচা। এটি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ।”

টিউমার শনাক্ত করার জন্য প্রতি বছর দেহ এবং মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান এবং পেটের আল্ট্রাসাউন্ড করতে হয়। অনেক নারী ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্তন অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন।

ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক জানিয়েছে, “দাতা নিজে বা তার পরিবারের কেউ অসুস্থ নন” এবং এই ধরনের মিউটেশন “জেনেটিক স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে আগে থেকে ধরা যায় না।”

তারা জানিয়েছে যে সমস্যা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাতাকে “অবিলম্বে ব্লক করা হয়েছে”।

মৃত্যু হয়েছে শিশুদের

যেই ডাক্তাররা শুক্রাণু দানের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের দেখছিলেন, তারা এই বছর ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান জেনেটিক্সে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, সেই সময় পর্যন্ত তাদের জানা ৬৭ শিশুর মধ্যে ২৩ জনের দেহে এই জিনগত পরিবর্তন পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১০ জন ইতোমধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইনের অনুরোধ এবং ডাক্তার ও রোগীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে দাতার মাধ্যমে আরো অনেক শিশু জন্ম নিয়েছে।

এই সংখ্যা অন্তত ১৯৭ জন, তবে এটি চূড়ান্ত নয়। কারণ সব দেশের তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, এই শিশুদের মধ্যে কতজন বিপজ্জনক জিনগত পরিবর্তন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে তা এখনো অজানা।

ফ্রান্সের হুঁও ইউনিভার্সিটি হসপিটালের (Rouen University Hospital) ক্যান্সার জেনেটিসিস্ট ডাক্তার এডউইজ ক্যাসপার, যিনি প্রাথমিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন, তিনি এই অনুসন্ধানে বলেছেন, “আমাদের কাছে অনেক শিশু আছে যারা ইতোমধ্যেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।”

“কিছু শিশুর দেহে ইতোমধ্যেই দুটি ভিন্ন ধরনের ক্যান্সার দেখা দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে কিছু শিশু খুব অল্প বয়সে মারা গেছে।”

সেলিন (এটি আসল নাম নয়) ফ্রান্সের এক সিঙ্গেল মা, যার শিশু ১৪ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছে ওই দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে, যার দেহে জিনগত পরিবর্তন আছে।

তিনি বেলজিয়ামে যে ফার্টিলিটি ক্লিনিকটি ব্যবহার করেছিলেন, সেই ক্লিনিক থেকে ফোন পেয়েছেন। ফোন কলে তার কন্যাকে স্ক্রিনিং করানোর জন্য বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, দাতার প্রতি ‘মোটেই কোনো কষ্ট বা রাগ নেই’ তার। তবে বলেছেন, এটি গ্রহণযোগ্য নয় যে তাকে এমন শুক্রাণু দেওয়া হয়েছিলো যেটি “সুস্থ ছিল না, নিরাপদ ছিল না এবং ঝুঁকি বহন করছিল”।

তিনি জানেন, ক্যান্সার তাদের জীবনের ওপর সারাজীবন ছায়া ফেলবে।

“আমরা জানি না কখন, কোন ক্যান্সার হবে এবং কতবার ঘটবে” তিনি বলেন।

“আমি বুঝতে পারি, এটি ঘটার আশঙ্কা অনেক বেশি এবং যখন ঘটবে আমরা লড়ব; যদি একাধিকবার আসে, আমরা একাধিকবার লড়ব।”

এই দাতার শুক্রাণু ১৪টি দেশে ৬৭টি ফার্টিলিটি ক্লিনিকে ব্যবহার করা হয়েছে। এই শুক্রাণু যুক্তরাজ্যের কোনো ক্লিনিকে বিক্রি করা হয়নি।

তবে এই তদন্তের ফলস্বরূপ, ডেনমার্কের কর্তৃপক্ষ গত সোমবার যুক্তরাজ্যের হিউম্যান ফার্টিলাইজেশন অ্যান্ড এমব্রিওলজি অথোরিটিকে (এইচএফইএ) জানায়, কয়েকজন ব্রিটিশ নারী ওই দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে ফার্টিলিটি চিকিৎসা নিতে ডেনমার্কে গিয়েছিলেন।

সেই নারীদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এইচএফইএ’র প্রধান নির্বাহী পিটার থম্পসন বলেছেন, ‘খুব অল্পসংখ্যক’ নারী এতে সংকটে পড়েছেন এবং “তাদেরকে ওই দাতার বিষয়ে জানানো হয়েছে সেই ড্যানিশ ক্লিনিকের মাধ্যমে যেখানে তারা চিকিৎসা নিয়েছিলেন”।

আমরা জানি না কোনো ব্রিটিশ নারী অন্য দেশে চিকিৎসা নিয়েছিলেন কিনা, যেখানে ওই দাতার শুক্রাণু বিতরণ করা হয়েছিল।

উদ্বিগ্ন পিতামাতারা যে ক্লিনিকে সেবা নিতে গিয়েছিলেন সেখানে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ফার্টিলিটি অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি দাতার পরিচয় নম্বর প্রকাশ করছে না, কারণ তিনি সৎ মনোভাব নিয়ে দান করেছিলেন এবং এ সংক্রান্ত যুক্তরাজ্যের পরিচিত সব গ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

কোন কোন দেশে ওই শুক্রাণু পাঠানো হয়েছে

একজন দাতার শুক্রাণু বিশ্বব্যাপী কতবার ব্যবহার করা যেতে পারে তা নিয়ে কোনো আইন নেই। তবে, প্রত্যেক দেশ নিজস্ব সীমা নির্ধারণ করে।

ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক স্বীকার করেছে যে কিছু দেশে এই সীমা “দুর্ভাগ্যবশত” অমান্য হয়েছে এবং তারা “ডেনমার্ক ও বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংলাপে” আছে।

বেলজিয়ামে একজন শুক্রাণুদাতার শুক্রাণু শুধুমাত্র ছয়টি পরিবারে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। তবে ৩৮ জন ভিন্ন নারী ওই দাতার ৫৩টি শিশু জন্ম দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে এই সীমা নির্ধারিত, একজন দাতার জন্য ১০টি পরিবার।

‘সবকিছুর জন্য স্ক্রিনিং করা সম্ভব নয়’

প্রফেসর অ্যালান পেসি শেফিল্ড স্পার্ম ব্যাংক পরিচালনা করতেন এবং বর্তমানে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব বায়োলজি, মেডিসিন অ্যান্ড হেলথের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেছেন, দেশগুলো বড় আন্তর্জাতিক স্পার্ম ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং এখন যুক্তরাজ্যের অর্ধেক শুক্রাণু আমদানি করা হচ্ছে।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “আমরা বড় আন্তর্জাতিক স্পার্ম ব্যাংক থেকে আমদানি করতে বাধ্য, যারা অন্যান্য দেশে বিক্রি করে। কারণ এভাবেই তারা অর্থ উপার্জন করে এবং এভাবেই সমস্যার সূচনা হয়। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে কোনো আইন নেই যে শুক্রাণু কতবার ব্যবহার করা যাবে”।

তিনি বলেছেন, এই ঘটনা সবার জন্য ‘ভয়ঙ্কর’, তবে শুক্রাণুকে সম্পূর্ণ নিরাপদ করা অসম্ভব।

“সবকিছুর জন্য স্ক্রিনিং করা সম্ভব নয়। বর্তমান স্ক্রিনিং ব্যবস্থায় আমরা মাত্র ১% থেকে ২% আবেদনকারী পুরুষকে দাতা হিসেবে গ্রহণ করি। যদি আরও কঠোর হই, তাহলে কোনো দাতা থাকত না—এটাই সেই সীমা যেখানে ভারসাম্য রক্ষা হয়”।

এই ঘটনা এবং এর পাশাপাশি সেই মানুষের ঘটনা (যিনি ৫৫০টি শিশু জন্মদানে অংশ নিয়েছিলেন) আবার প্রশ্ন তুলেছে যে শুক্রাণু দানের সীমা আরও কঠোর হওয়া উচিত কি না।

ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান রেপ্রোডাকশন অ্যান্ড এমব্রিওলজি সম্প্রতি প্রস্তাব করেছে, প্রতি দাতার জন্য ৫০টি পরিবারের সীমা নির্ধারণের।

তবে এতে বিরল জিনগত রোগ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার ঝুঁকি কমবে না।

বরং, এটি সেই শিশুদের কল্যাণের জন্য ভালো হবে যারা জানতে পারবে যে তারা অর্ধ শতাধিক ভাই-বোনের মধ্যে একজন।

“একই দাতার থেকে বিশ্বে জন্ম নেওয়া পরিবারগুলোর সংখ্যা কমানোর জন্য আরও পদক্ষেপ প্রয়োজন”, বলেছেন প্রগ্রেস এডুকেশনাল ট্রাস্টের (একটি স্বতন্ত্র চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান যেটি প্রজনন অক্ষমতা এবং জিনগত সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের জন্য কাজ করে) পরিচালক সারাহ নরক্রস।

“আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারি না যে এই অর্ধ- শতাধিক ভাই-বোন থাকার সামাজিক ও মানসিক প্রভাব কী হবে। এটি সম্ভাব্যভাবে মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক হতে পারে”, বিবিসি নিউজকে তিনি বলেন।

ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক বলেছে, “বিশেষত এই কেসের আলোকে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, হাজার হাজার নারী ও দম্পতি দাতা শুক্রাণুর সাহায্য ছাড়া সন্তান লাভের সুযোগ পান না। যদি শুক্রাণু দাতাদের চিকিৎসা নির্দেশিকা অনুযায়ী স্ক্রিনিং করা হয়, তবে দাতা শুক্রাণুর মাধ্যমে সন্তান নেওয়া সাধারণভাবে আরও নিরাপদ হবে”।

ডাক্তার ক্যাসপার ডাক্তারের পোশাক পরা অবস্থায় তার ডেস্কে বসে আছেন

ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারের সহায়তা করছেন ডাক্তার ক্যাসপার

আপনি কোনো দাতার ব্যবহারের কথা ভেবে থাকলে কী করবেন?

সারা নরক্রস বলেছেন, যখন আপনি একজন দাতার থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের সংখ্যা বিবেচনা করবেন, তখন এই ধরনের ঘটনা ‘অত্যন্ত বিরল’।

আমাদের সঙ্গে কথা বলা সমস্ত বিশেষজ্ঞই বলেছেন, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিক ব্যবহার করলে শুক্রাণু এমন সব রোগের জন্যও স্ক্রিন করা হয়, যা সাধারণভাবে পিতৃত্বের অপেক্ষায় থাকা অধিকাংশ পুরুষের ক্ষেত্রে করা হয় না।

প্রফেসর পেসি বলেছেন যে তিনি জিজ্ঞেস করবেন, “এটি কি যুক্তরাজ্যের দাতা, নাকি অন্য কোথাও থেকে এসেছে?”

“যদি এটি অন্য কোথাও থেকে আসে, তবে জিজ্ঞেস করা বৈধ যে, এই দাতাকে আগে ব্যবহার করা হয়েছে কি না? অথবা এই দাতাকে কতবার ব্যবহার করা হবে?”

 

বিবিসি নিউজ বাংলা

 

জনপ্রিয় সংবাদ

নোবেলজয়ী সাকাগুচির লক্ষ্য ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগান্তকারী আবিষ্কারের ব্যবহার

দাতার শুক্রাণুতে ক্যান্সারের জিন, ঝুঁকিতে প্রায় ২০০ শিশু

০৫:০৭:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

একজন শুক্রাণু দাতা নিজেও জানতেন না যে তার দেহে এমন একটি জিনগত পরিবর্তন (মিউটেশন) আছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়— তার শুক্রাণু ব্যবহার করে ইউরোপজুড়ে অন্তত ১৯৭টি সন্তানের জন্ম হয়েছে। বড় ধরনের এক অনুসন্ধানে এই তথ্য জানা গেছে।

কিছু শিশু ইতোমধ্যেই মারা গেছে এবং যারা এই জিনগত পরিবর্তন (মিউটেশন) উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ক্যান্সার এড়াতে পারবে।

এই শুক্রাণু যুক্তরাজ্যের কোনো ক্লিনিকে বিক্রি করা হয়নি। তবে বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে যে খুব অল্পসংখ্যক ব্রিটিশ পরিবার (যাদের ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে) ডেনমার্কে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার সময় ওই দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করেছিলেন।

শুক্রাণুটি বিক্রি করেছিল ডেনমার্কের যেই ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক, সেটি জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি তাদের ‘গভীর সহানুভূতি’ রয়েছে এবং স্বীকার করেছে যে কিছু দেশে ওই দাতার শুক্রাণু দিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে।

প্রজনন ক্লিনিকের পরীক্ষাগারে ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখছেন এবং ডিম্বাণুতে শুক্রাণু যোগ করছেন

দাতার শুক্রাণুর প্রায় ২০ শতাংশ অংশে এমন একটি মিউটেশন আছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, প্রতীকী ছবি

ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে বিবিসিসহ ১৪টি পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টার এই অনুসন্ধান যৌথভাবে পরিচালনা করেছে।

অজ্ঞাত পরিচয়ের একজনের কাছ থেকে শুক্রাণুটি নেওয়া হয়েছিলো। যিনি ২০০৫ সালে ছাত্র থাকা অবস্থায় অর্থের বিনিময়ে শুক্রাণু দান শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রায় ১৭ বছর ধরে বিভিন্ন নারী তার শুক্রাণু ব্যবহার করেছেন।

তিনি সুস্থ ছিলেন এবং দাতা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব স্ক্রিনিং পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। তবে জন্মের আগেই তার কিছু কোষের ডিএনএ-তে পরিবর্তন (মিউটেশন) ঘটেছিল।

এই পরিবর্তন টিপি-ফাইভ থ্রি জিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে—যে জিনের মূল কাজ হলো দেহের কোষগুলোকে ক্যান্সারে রূপ নেওয়া থেকে রক্ষা করা।

দাতার শরীরের বেশিরভাগ অংশে বিপজ্জনক টিপি-ফাইভ থ্রি জিন নেই, কিন্তু তার প্রায় ২০ শতাংশ শুক্রাণুতে এটি রয়েছে।

তবে, এই আক্রান্ত শুক্রাণু দিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর প্রতিটি কোষেই এই জিনগত পরিবর্তন থাকবে।

দাতার শুক্রাণু থেকে ঝুঁকির কারণ

এ অবস্থাকে লি-ফ্রমেনি সিনড্রোম বলা হয়, এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত থাকে—বিশেষ করে শিশুকালে এবং পরে জীবনের কোনো সময়ে স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে।

লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চের ক্যান্সার জেনেটিসিস্ট প্রফেসর ক্লেয়ার টার্নবুল বিবিসিকে বলেছেন, “এটি একটি ভয়ঙ্কর তথ্য। এটি যেকোনো পরিবারের জন্য একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং সেই ঝুঁকির সঙ্গে সারা জীবন বাঁচা। এটি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ।”

টিউমার শনাক্ত করার জন্য প্রতি বছর দেহ এবং মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান এবং পেটের আল্ট্রাসাউন্ড করতে হয়। অনেক নারী ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্তন অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন।

ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক জানিয়েছে, “দাতা নিজে বা তার পরিবারের কেউ অসুস্থ নন” এবং এই ধরনের মিউটেশন “জেনেটিক স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে আগে থেকে ধরা যায় না।”

তারা জানিয়েছে যে সমস্যা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাতাকে “অবিলম্বে ব্লক করা হয়েছে”।

মৃত্যু হয়েছে শিশুদের

যেই ডাক্তাররা শুক্রাণু দানের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের দেখছিলেন, তারা এই বছর ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান জেনেটিক্সে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, সেই সময় পর্যন্ত তাদের জানা ৬৭ শিশুর মধ্যে ২৩ জনের দেহে এই জিনগত পরিবর্তন পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১০ জন ইতোমধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইনের অনুরোধ এবং ডাক্তার ও রোগীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে দাতার মাধ্যমে আরো অনেক শিশু জন্ম নিয়েছে।

এই সংখ্যা অন্তত ১৯৭ জন, তবে এটি চূড়ান্ত নয়। কারণ সব দেশের তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, এই শিশুদের মধ্যে কতজন বিপজ্জনক জিনগত পরিবর্তন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে তা এখনো অজানা।

ফ্রান্সের হুঁও ইউনিভার্সিটি হসপিটালের (Rouen University Hospital) ক্যান্সার জেনেটিসিস্ট ডাক্তার এডউইজ ক্যাসপার, যিনি প্রাথমিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন, তিনি এই অনুসন্ধানে বলেছেন, “আমাদের কাছে অনেক শিশু আছে যারা ইতোমধ্যেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।”

“কিছু শিশুর দেহে ইতোমধ্যেই দুটি ভিন্ন ধরনের ক্যান্সার দেখা দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে কিছু শিশু খুব অল্প বয়সে মারা গেছে।”

সেলিন (এটি আসল নাম নয়) ফ্রান্সের এক সিঙ্গেল মা, যার শিশু ১৪ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছে ওই দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে, যার দেহে জিনগত পরিবর্তন আছে।

তিনি বেলজিয়ামে যে ফার্টিলিটি ক্লিনিকটি ব্যবহার করেছিলেন, সেই ক্লিনিক থেকে ফোন পেয়েছেন। ফোন কলে তার কন্যাকে স্ক্রিনিং করানোর জন্য বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, দাতার প্রতি ‘মোটেই কোনো কষ্ট বা রাগ নেই’ তার। তবে বলেছেন, এটি গ্রহণযোগ্য নয় যে তাকে এমন শুক্রাণু দেওয়া হয়েছিলো যেটি “সুস্থ ছিল না, নিরাপদ ছিল না এবং ঝুঁকি বহন করছিল”।

তিনি জানেন, ক্যান্সার তাদের জীবনের ওপর সারাজীবন ছায়া ফেলবে।

“আমরা জানি না কখন, কোন ক্যান্সার হবে এবং কতবার ঘটবে” তিনি বলেন।

“আমি বুঝতে পারি, এটি ঘটার আশঙ্কা অনেক বেশি এবং যখন ঘটবে আমরা লড়ব; যদি একাধিকবার আসে, আমরা একাধিকবার লড়ব।”

এই দাতার শুক্রাণু ১৪টি দেশে ৬৭টি ফার্টিলিটি ক্লিনিকে ব্যবহার করা হয়েছে। এই শুক্রাণু যুক্তরাজ্যের কোনো ক্লিনিকে বিক্রি করা হয়নি।

তবে এই তদন্তের ফলস্বরূপ, ডেনমার্কের কর্তৃপক্ষ গত সোমবার যুক্তরাজ্যের হিউম্যান ফার্টিলাইজেশন অ্যান্ড এমব্রিওলজি অথোরিটিকে (এইচএফইএ) জানায়, কয়েকজন ব্রিটিশ নারী ওই দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে ফার্টিলিটি চিকিৎসা নিতে ডেনমার্কে গিয়েছিলেন।

সেই নারীদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এইচএফইএ’র প্রধান নির্বাহী পিটার থম্পসন বলেছেন, ‘খুব অল্পসংখ্যক’ নারী এতে সংকটে পড়েছেন এবং “তাদেরকে ওই দাতার বিষয়ে জানানো হয়েছে সেই ড্যানিশ ক্লিনিকের মাধ্যমে যেখানে তারা চিকিৎসা নিয়েছিলেন”।

আমরা জানি না কোনো ব্রিটিশ নারী অন্য দেশে চিকিৎসা নিয়েছিলেন কিনা, যেখানে ওই দাতার শুক্রাণু বিতরণ করা হয়েছিল।

উদ্বিগ্ন পিতামাতারা যে ক্লিনিকে সেবা নিতে গিয়েছিলেন সেখানে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ফার্টিলিটি অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি দাতার পরিচয় নম্বর প্রকাশ করছে না, কারণ তিনি সৎ মনোভাব নিয়ে দান করেছিলেন এবং এ সংক্রান্ত যুক্তরাজ্যের পরিচিত সব গ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

কোন কোন দেশে ওই শুক্রাণু পাঠানো হয়েছে

একজন দাতার শুক্রাণু বিশ্বব্যাপী কতবার ব্যবহার করা যেতে পারে তা নিয়ে কোনো আইন নেই। তবে, প্রত্যেক দেশ নিজস্ব সীমা নির্ধারণ করে।

ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক স্বীকার করেছে যে কিছু দেশে এই সীমা “দুর্ভাগ্যবশত” অমান্য হয়েছে এবং তারা “ডেনমার্ক ও বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংলাপে” আছে।

বেলজিয়ামে একজন শুক্রাণুদাতার শুক্রাণু শুধুমাত্র ছয়টি পরিবারে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। তবে ৩৮ জন ভিন্ন নারী ওই দাতার ৫৩টি শিশু জন্ম দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে এই সীমা নির্ধারিত, একজন দাতার জন্য ১০টি পরিবার।

‘সবকিছুর জন্য স্ক্রিনিং করা সম্ভব নয়’

প্রফেসর অ্যালান পেসি শেফিল্ড স্পার্ম ব্যাংক পরিচালনা করতেন এবং বর্তমানে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব বায়োলজি, মেডিসিন অ্যান্ড হেলথের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেছেন, দেশগুলো বড় আন্তর্জাতিক স্পার্ম ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং এখন যুক্তরাজ্যের অর্ধেক শুক্রাণু আমদানি করা হচ্ছে।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “আমরা বড় আন্তর্জাতিক স্পার্ম ব্যাংক থেকে আমদানি করতে বাধ্য, যারা অন্যান্য দেশে বিক্রি করে। কারণ এভাবেই তারা অর্থ উপার্জন করে এবং এভাবেই সমস্যার সূচনা হয়। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে কোনো আইন নেই যে শুক্রাণু কতবার ব্যবহার করা যাবে”।

তিনি বলেছেন, এই ঘটনা সবার জন্য ‘ভয়ঙ্কর’, তবে শুক্রাণুকে সম্পূর্ণ নিরাপদ করা অসম্ভব।

“সবকিছুর জন্য স্ক্রিনিং করা সম্ভব নয়। বর্তমান স্ক্রিনিং ব্যবস্থায় আমরা মাত্র ১% থেকে ২% আবেদনকারী পুরুষকে দাতা হিসেবে গ্রহণ করি। যদি আরও কঠোর হই, তাহলে কোনো দাতা থাকত না—এটাই সেই সীমা যেখানে ভারসাম্য রক্ষা হয়”।

এই ঘটনা এবং এর পাশাপাশি সেই মানুষের ঘটনা (যিনি ৫৫০টি শিশু জন্মদানে অংশ নিয়েছিলেন) আবার প্রশ্ন তুলেছে যে শুক্রাণু দানের সীমা আরও কঠোর হওয়া উচিত কি না।

ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান রেপ্রোডাকশন অ্যান্ড এমব্রিওলজি সম্প্রতি প্রস্তাব করেছে, প্রতি দাতার জন্য ৫০টি পরিবারের সীমা নির্ধারণের।

তবে এতে বিরল জিনগত রোগ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার ঝুঁকি কমবে না।

বরং, এটি সেই শিশুদের কল্যাণের জন্য ভালো হবে যারা জানতে পারবে যে তারা অর্ধ শতাধিক ভাই-বোনের মধ্যে একজন।

“একই দাতার থেকে বিশ্বে জন্ম নেওয়া পরিবারগুলোর সংখ্যা কমানোর জন্য আরও পদক্ষেপ প্রয়োজন”, বলেছেন প্রগ্রেস এডুকেশনাল ট্রাস্টের (একটি স্বতন্ত্র চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান যেটি প্রজনন অক্ষমতা এবং জিনগত সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের জন্য কাজ করে) পরিচালক সারাহ নরক্রস।

“আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারি না যে এই অর্ধ- শতাধিক ভাই-বোন থাকার সামাজিক ও মানসিক প্রভাব কী হবে। এটি সম্ভাব্যভাবে মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক হতে পারে”, বিবিসি নিউজকে তিনি বলেন।

ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক বলেছে, “বিশেষত এই কেসের আলোকে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, হাজার হাজার নারী ও দম্পতি দাতা শুক্রাণুর সাহায্য ছাড়া সন্তান লাভের সুযোগ পান না। যদি শুক্রাণু দাতাদের চিকিৎসা নির্দেশিকা অনুযায়ী স্ক্রিনিং করা হয়, তবে দাতা শুক্রাণুর মাধ্যমে সন্তান নেওয়া সাধারণভাবে আরও নিরাপদ হবে”।

ডাক্তার ক্যাসপার ডাক্তারের পোশাক পরা অবস্থায় তার ডেস্কে বসে আছেন

ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারের সহায়তা করছেন ডাক্তার ক্যাসপার

আপনি কোনো দাতার ব্যবহারের কথা ভেবে থাকলে কী করবেন?

সারা নরক্রস বলেছেন, যখন আপনি একজন দাতার থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের সংখ্যা বিবেচনা করবেন, তখন এই ধরনের ঘটনা ‘অত্যন্ত বিরল’।

আমাদের সঙ্গে কথা বলা সমস্ত বিশেষজ্ঞই বলেছেন, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিক ব্যবহার করলে শুক্রাণু এমন সব রোগের জন্যও স্ক্রিন করা হয়, যা সাধারণভাবে পিতৃত্বের অপেক্ষায় থাকা অধিকাংশ পুরুষের ক্ষেত্রে করা হয় না।

প্রফেসর পেসি বলেছেন যে তিনি জিজ্ঞেস করবেন, “এটি কি যুক্তরাজ্যের দাতা, নাকি অন্য কোথাও থেকে এসেছে?”

“যদি এটি অন্য কোথাও থেকে আসে, তবে জিজ্ঞেস করা বৈধ যে, এই দাতাকে আগে ব্যবহার করা হয়েছে কি না? অথবা এই দাতাকে কতবার ব্যবহার করা হবে?”

 

বিবিসি নিউজ বাংলা