০২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
৩ প্রশ্নের মুখে লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্প – কী আছে লালদিয়ার নন-ডিসক্লোজর থলেতে? ট্রাম্পের অর্থনীতি নিয়ে বিভক্ত পেনসিলভানিয়া: বেড়েই চলেছে ‘সহনশীলতার পরীক্ষা’ রাশিয়ার আকাশঘাঁটিতে গোপন ড্রোন হামলা: কিয়েভের দুঃসাহসী ‘মাকড়সার জাল’ অভিযান উন্মোচিত জাপানের ‘গ্রিন মাস্টার প্ল্যান’ মধ্য এশিয়ার শক্তি ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে অস্ট্রেলিয়ায় কড়াকড়ি শুরু: সোশ্যাল মিডিয়ায় ষোলো বছরের নিচে নিষেধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭২) আমেরিকায় এইচ–১বি ভিসায় বাড়ছে নজরদারি, ভারতীয়দের সময় পরিবর্তন শুরু প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৩৯) ডি’অ্যাঞ্জেলো: নিও-সোলের শেষ শুদ্ধ বাতিঘর ও কুয়েস্টলাভের হৃদয়ে রেখে যাওয়া গভীর ধ্বনি ইমরান খানকে আদিয়ালা কারাগার থেকে সরানোর ভাবনা

জাপানের ‘গ্রিন মাস্টার প্ল্যান’ মধ্য এশিয়ার শক্তি ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে

মধ্য এশিয়ার পরিষ্কার জ্বালানি রূপান্তরে নেতৃত্ব দেওয়ার এক যুগান্তকারী সুযোগ তৈরি হয়েছে জাপানের সামনে। এই মাসে প্রথমবারের মতো জাপান-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে টোকিও যদি একীভূত ও শক্তিশালী সবুজ রূপরেখা ঘোষণা করে, তবে অঞ্চলটির জ্বালানি নিরাপত্তা, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব—সব ক্ষেত্রেই নতুন মাত্রা যোগ হবে।

মধ্য এশিয়ায় নতুন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা

চীন, রাশিয়া এবং সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র—তিন শক্তিই দীর্ঘদিন ধরে মধ্য এশিয়ার বিপুল খনিজ, জ্বালানি ও বিরল ধাতু সম্পদে নজর রেখে এসেছে। কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান—এই পাঁচ দেশ পূর্ব-পশ্চিমের সেতুবন্ধন হওয়ার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি, সবুজ শক্তি ও সামরিক সরঞ্জামে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর বড় উৎস।

জাপান ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগের আকারে চীন-রাশিয়ার সমকক্ষ নয়। তাই একক কৌশলগত অগ্রাধিকার হিসেবে টেকসই উন্নয়নকে সামনে আনা জাপানের জন্য বড় কৌশলগত জয় হতে পারে।

উজবেকিস্তানে ১.৪৫ বিলিয়ন ডলারের সৌর প্রকল্পসহ সক্রিয় ভূমিকা

জাপান ইতোমধ্যে অঞ্চলটির সবুজ রূপান্তরে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। উজবেকিস্তানে বৃহৎ সৌর শক্তি প্রকল্প, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে যৌথ জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা, সুমিতোমোর মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবেশ সহযোগিতা—সব মিলিয়ে জাপান দীর্ঘদিন ধরে সবুজ উদ্যোগে একটি স্থিতিশীল সহযোগী।

২০০৪ সালের ‘সেন্ট্রাল এশিয়া প্লাস জাপান ডায়ালগ’ ছিল এ অঞ্চলে জাপানের প্রথম বড় কৌশলগত পদক্ষেপ।

তবে এসব উদ্যোগ বিচ্ছিন্ন, একীভূত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সময় এসেছে একটি সমন্বিত গ্রিন মাস্টার প্ল্যান ঘোষণা করার।

কেন এখনই সময়

মধ্য এশিয়া দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির তথ্য বলছে, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস আরও উদ্বেগজনক—বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে মধ্য এশিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ গলে যেতে পারে। এ ঝুঁকি সরাসরি পানি, কৃষি ও জ্বালানি নিরাপত্তায় আঘাত করবে।

উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য আরও উচ্চাভিলাষী করেছে, যা তাদের পরিবর্তনশীল বাস্তবতা উপলব্ধির প্রমাণ।

জাপানের জন্য এটি এমন এক সময়, যখন সহযোগিতা কেবল কূটনৈতিক লাভই নয়, বরং টেকসই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা গঠনে বড় ভূমিকা রাখবে।

‘গ্রিন মাস্টার প্ল্যান’-এর মূল ভিত্তি

প্রস্তাবিত পরিকল্পনা তিনটি অগ্রাধিকারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে।
প্রথমত, নবায়নযোগ্য শক্তি ও পানি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ও দক্ষতা হস্তান্তরের বাস্তব পথনির্দেশ।
দ্বিতীয়ত, সবুজ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিনিয়োগ সহায়তা, যার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তি খাত ও স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়বে।
তৃতীয়ত, এমন বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা, যা ফসিল জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সবুজ রূপান্তরকে এগিয়ে নেবে।

সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে অঞ্চলটির জলবায়ু সহনশীলতা বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।

জাপানের জন্য কূটনৈতিক অগ্রগতি

চীনের বিপুল বিনিয়োগ বা রাশিয়ার ঐতিহাসিক প্রভাবের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার প্রয়োজন নেই। বরং জাপান তার উন্নত সবুজ প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে মধ্য এশিয়ার ভবিষ্যৎ রূপান্তরে মূল সহযোগী হয়ে উঠতে পারে।

যদিও স্বচ্ছতা, পরিবেশ নীতির অস্পষ্টতা এবং প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বৈষম্য—কিছু দেশের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়ে গেছে। COP৩০–এ কাজাখস্তানই ছিল একমাত্র দেশ, যারা জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে কমানোর ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে।

এর পরও COP৩০–এ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক সহায়তা ও অর্থায়ন বাড়ানোর দাবি তুলেছে। তারা দ্রুত নিম্ন-কার্বন প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি করতে চায়, যা প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কমাবে না বরং ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়ন গড়ে তুলবে।

এই মুহূর্তটি জাপানের জন্য কৌশলগত নেতৃত্ব দেখানোর উপযুক্ত সময়। সবুজ উন্নয়ন নীতিকে সামনে এনে জাপান মধ্য এশিয়ায় নিজের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ ভূমিকা উভয়ই শক্তিশালী করতে পারে।

#জাপান #মধ্যএশিয়া #গ্রিনমাস্টারপ্ল্যান #সবুজজ্বালানি #নবায়নযোগ্যশক্তি #জলবায়ুপদক্ষেপ #কাজাখস্তান #উজবেকিস্তান #টেকসইউন্নয়ন #সারাক্ষণ

জনপ্রিয় সংবাদ

৩ প্রশ্নের মুখে লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্প – কী আছে লালদিয়ার নন-ডিসক্লোজর থলেতে?

জাপানের ‘গ্রিন মাস্টার প্ল্যান’ মধ্য এশিয়ার শক্তি ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে

১২:০২:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

মধ্য এশিয়ার পরিষ্কার জ্বালানি রূপান্তরে নেতৃত্ব দেওয়ার এক যুগান্তকারী সুযোগ তৈরি হয়েছে জাপানের সামনে। এই মাসে প্রথমবারের মতো জাপান-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে টোকিও যদি একীভূত ও শক্তিশালী সবুজ রূপরেখা ঘোষণা করে, তবে অঞ্চলটির জ্বালানি নিরাপত্তা, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব—সব ক্ষেত্রেই নতুন মাত্রা যোগ হবে।

মধ্য এশিয়ায় নতুন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা

চীন, রাশিয়া এবং সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র—তিন শক্তিই দীর্ঘদিন ধরে মধ্য এশিয়ার বিপুল খনিজ, জ্বালানি ও বিরল ধাতু সম্পদে নজর রেখে এসেছে। কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান—এই পাঁচ দেশ পূর্ব-পশ্চিমের সেতুবন্ধন হওয়ার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি, সবুজ শক্তি ও সামরিক সরঞ্জামে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর বড় উৎস।

জাপান ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগের আকারে চীন-রাশিয়ার সমকক্ষ নয়। তাই একক কৌশলগত অগ্রাধিকার হিসেবে টেকসই উন্নয়নকে সামনে আনা জাপানের জন্য বড় কৌশলগত জয় হতে পারে।

উজবেকিস্তানে ১.৪৫ বিলিয়ন ডলারের সৌর প্রকল্পসহ সক্রিয় ভূমিকা

জাপান ইতোমধ্যে অঞ্চলটির সবুজ রূপান্তরে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। উজবেকিস্তানে বৃহৎ সৌর শক্তি প্রকল্প, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে যৌথ জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা, সুমিতোমোর মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবেশ সহযোগিতা—সব মিলিয়ে জাপান দীর্ঘদিন ধরে সবুজ উদ্যোগে একটি স্থিতিশীল সহযোগী।

২০০৪ সালের ‘সেন্ট্রাল এশিয়া প্লাস জাপান ডায়ালগ’ ছিল এ অঞ্চলে জাপানের প্রথম বড় কৌশলগত পদক্ষেপ।

তবে এসব উদ্যোগ বিচ্ছিন্ন, একীভূত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সময় এসেছে একটি সমন্বিত গ্রিন মাস্টার প্ল্যান ঘোষণা করার।

কেন এখনই সময়

মধ্য এশিয়া দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির তথ্য বলছে, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস আরও উদ্বেগজনক—বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে মধ্য এশিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ গলে যেতে পারে। এ ঝুঁকি সরাসরি পানি, কৃষি ও জ্বালানি নিরাপত্তায় আঘাত করবে।

উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য আরও উচ্চাভিলাষী করেছে, যা তাদের পরিবর্তনশীল বাস্তবতা উপলব্ধির প্রমাণ।

জাপানের জন্য এটি এমন এক সময়, যখন সহযোগিতা কেবল কূটনৈতিক লাভই নয়, বরং টেকসই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা গঠনে বড় ভূমিকা রাখবে।

‘গ্রিন মাস্টার প্ল্যান’-এর মূল ভিত্তি

প্রস্তাবিত পরিকল্পনা তিনটি অগ্রাধিকারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে।
প্রথমত, নবায়নযোগ্য শক্তি ও পানি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ও দক্ষতা হস্তান্তরের বাস্তব পথনির্দেশ।
দ্বিতীয়ত, সবুজ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিনিয়োগ সহায়তা, যার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তি খাত ও স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়বে।
তৃতীয়ত, এমন বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা, যা ফসিল জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সবুজ রূপান্তরকে এগিয়ে নেবে।

সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে অঞ্চলটির জলবায়ু সহনশীলতা বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।

জাপানের জন্য কূটনৈতিক অগ্রগতি

চীনের বিপুল বিনিয়োগ বা রাশিয়ার ঐতিহাসিক প্রভাবের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার প্রয়োজন নেই। বরং জাপান তার উন্নত সবুজ প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে মধ্য এশিয়ার ভবিষ্যৎ রূপান্তরে মূল সহযোগী হয়ে উঠতে পারে।

যদিও স্বচ্ছতা, পরিবেশ নীতির অস্পষ্টতা এবং প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বৈষম্য—কিছু দেশের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়ে গেছে। COP৩০–এ কাজাখস্তানই ছিল একমাত্র দেশ, যারা জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে কমানোর ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে।

এর পরও COP৩০–এ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক সহায়তা ও অর্থায়ন বাড়ানোর দাবি তুলেছে। তারা দ্রুত নিম্ন-কার্বন প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি করতে চায়, যা প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কমাবে না বরং ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়ন গড়ে তুলবে।

এই মুহূর্তটি জাপানের জন্য কৌশলগত নেতৃত্ব দেখানোর উপযুক্ত সময়। সবুজ উন্নয়ন নীতিকে সামনে এনে জাপান মধ্য এশিয়ায় নিজের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ ভূমিকা উভয়ই শক্তিশালী করতে পারে।

#জাপান #মধ্যএশিয়া #গ্রিনমাস্টারপ্ল্যান #সবুজজ্বালানি #নবায়নযোগ্যশক্তি #জলবায়ুপদক্ষেপ #কাজাখস্তান #উজবেকিস্তান #টেকসইউন্নয়ন #সারাক্ষণ