কিয়েভের গোপন পরিকল্পনায় রাশিয়ার বোম্বার বহরকে লক্ষ্য করে পরিচালিত এক বিস্ময়কর ড্রোন অভিযান ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে। মাসব্যাপী প্রস্তুতি, নিখুঁত ছদ্মবেশ, বিপজ্জনক সীমান্ত পাড়ি আর মুহূর্তে পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই সফল হয় এই অভিযান, যার নাম দেওয়া হয়েছিল মাকড়সার জাল।
উদ্বেগের সেই মুহূর্ত
রাশিয়ার ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে করে আনা প্রিফ্যাব ঘরের ছাদের নিচে লুকানো ছিল শতাধিক ড্রোন। কিন্তু যাত্রাপথে হঠাৎ এক চালক ছাদ সরে গিয়ে ভেতরের গোপন মালামাল দেখে আতঙ্কে কল করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্তেম তিমোফেইয়েভকে। চালকের ভীত কণ্ঠে উঠে আসে প্রশ্ন—এগুলো শিকার ট্র্যাকিংয়ের যন্ত্র, নাকি অন্য কিছু। আড়াল রক্ষায় দ্রুত গল্প দাঁড় করান তিমোফেইয়েভ। চালক শেষ পর্যন্ত ছাদ ঠিক করে জানিয়ে দেন কাজ শেষ, সব বন্ধ।
অভিযানের জন্ম
দীর্ঘ আঠারো মাস ধরে পরিকল্পনা চলে এই মিশনের। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন রাশিয়ার বোম্বারগুলোকে রানওয়েতেই নিস্ক্রিয় করতে। তাই নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি করে বিশেষ কাঠামোর ঘর, যেগুলো ট্রাকবাহী হয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দূরনিয়ন্ত্রিত সংকেতে ছাদ খুলে ড্রোন উড়াতে পারে। প্রতিটি ড্রোনে ছিল প্রস্তুতকৃত বিস্ফোরণ উপাদান, যা সরাসরি জ্বালানি ট্যাংক ভেদ করে আগুন ধরাতে সক্ষম।
মাঠের দমবন্ধ প্রস্তুতি
রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কে ভাড়া করা গুদামে বসেই দম্পতি তিমোফেইয়েভ এবং ক্যাটেরিনা জোড়া লাগান দেড়শ ড্রোন ও আটটি ক্যাবিন। গোপন চ্যানেলে কিয়েভ থেকে নির্দেশনা পেয়ে প্রতিটি অংশ নিখুঁতভাবে সাজাতে হয়েছে তাদের। সীমান্ত অতিক্রম, জিজ্ঞাসাবাদ, মদ্যপানজনিত কারণে ড্রাইভার সংকট—সব বাধা পেরিয়ে মে মাসের শেষ সপ্তাহে রওনা দেয় পাঁচটি ট্রাক।

অভিযানের ভোরে
জুনের প্রথম দিনের ভোরে ট্রাকগুলো গন্তব্যের কাছাকাছি অবস্থান নেয়। কিয়েভে ছড়িয়ে বসেন ড্রোন চালকরা। লক্ষ্য দেখিয়ে দেওয়া হয় বোম্বারগুলোর দুর্বল অংশ। নির্দেশ পেয়ে চারটি ট্রাকের ছাদ খুলে যায়। আকাশে ওড়ে একশতের বেশি ড্রোন। চালকদের সামনে দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যায় স্থানীয় মানুষ ও রুশ সামরিক সদস্যরা।
আগুনে পুড়ে যায় রানওয়ে
ইউক্রেন জানিয়েছে, হামলায় কমপক্ষে একচল্লিশটি রুশ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার কয়েকটি আর উড়তে পারার মতো অবস্থায় নেই। যদিও উপগ্রহ ছবির ভিত্তিতে কিছু বিশ্লেষক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক তুলেছেন। তবু এই মিশন ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন মর্যাদা এনে দিয়েছে।
শেষ মুহূর্তের পলায়ন
হামলার পরদিনই রাশিয়া তিমোফেইয়েভকে সন্দেহভাজন ঘোষণা করে। কিন্তু পাঁচ দিন আগেই ভোরবেলায় দম্পতি সীমান্ত পেরিয়ে কাজাখস্তানে পৌঁছে যান ছুটির ভান করে। অভিযান শেষ, কিন্তু কিয়েভে এর সাহসিকতার গল্প এখনো আলোচনার কেন্দ্র।
#ইউক্রেনরাশিয়াসংঘাত #ড্রোনঅভিযান #কিয়েভঅপারেশন #রাশিয়াআকাশঘাঁটি #গোপনমিশন #মাকড়সারজাল #সারাক্ষণরিপোর্ট #আন্তর্জাতিকযুদ্ধসংবাদ #সুরক্ষাবাহিনী #ড্রোনহামলা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















