চীন ও ফিলিপাইনের সম্পর্ক নিয়ে নতুন বার্তা দিয়েছেন দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মারকোস জুনিয়র বলেছেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য যেন ব্যতিক্রম হয়, নিয়ম নয়। অন্যদিকে ম্যানিলায় নতুন নিয়োগ পাওয়া চীনা রাষ্ট্রদূত জিং চুয়ান আশা প্রকাশ করেছেন, দুই দেশ যেন দ্রুত সম্পর্ককে ‘স্বাস্থ্যকর’ পথে ফিরিয়ে আনতে পারে।
সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা
রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ অনুষ্ঠানে জিং চুয়ান বলেন, চীন ও ফিলিপাইনের উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য একটি স্থিতিশীল ও স্বাস্থ্যকর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ফিলিপাইন যেন দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করে, যাতে দ্রুত সম্পর্ককে স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরানো যায়।
ফিলিপাইনের দৃষ্টিভঙ্গি
মারকোস রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, চীন ফিলিপাইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ও সহযোগী।

তিনি আশা করেন, দুই দেশ ভবিষ্যতে আরও গভীর, শক্তিশালী ও কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে।
মারকোস বলেন, দুই দেশের মতপার্থক্য যেন স্বাভাবিক পরিস্থিতি হয়ে না দাঁড়ায়; বরং সেগুলো ব্যতিক্রম হিসেবে থেকেই নিয়ন্ত্রিত হোক।
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে উত্তেজনা
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোতে চীন ও ফিলিপাইনের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র এবং ‘ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইন’-এর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থান করায় দেশটির কৌশলগত গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ফিলিপাইনের সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতায় চীন উদ্বিগ্ন।
রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি
ম্যানিলায় পৌঁছে জিং চুয়ান বলেন, তিনি সম্পর্ককে স্থিতিশীল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যদিও এটি একটি কঠিন কাজ।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি চীনের জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষা করবেন এবং একই সঙ্গে দুই দেশের জনগণের মধ্যে দূরত্ব বাড়ার বদলে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবেন।

জিং দীর্ঘ দুই দশক যুক্তরাষ্ট্র-সংক্রান্ত কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন এবং ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন হিসেবেও কাজ করেছেন।
দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ বজায় রেখে ভারসাম্য খোঁজা
ফিলিপাইন একদিকে দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের সার্বভৌম দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরতে চায়, অন্যদিকে চীনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখতেও আগ্রহী।
দুই মাস আগে আসিয়ান সম্মেলনে মারকোস জানান, তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ফিলিপাইন সফরে আমন্ত্রণ জানাতে চান—তবে শর্ত হলো দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে ‘আচরণবিধি’ আলোচনায় দৃশ্যমান অগ্রগতি থাকতে হবে।
আচরণবিধি আলোচনা ও আসিয়ানের ভূমিকা
দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে চীন ও আসিয়ান বহু বছর ধরে আচরণবিধি প্রণয়নের জন্য আলোচনা চালাচ্ছে, যেখানকার বিশাল সম্পদসমৃদ্ধ জলসীমায় চীনের দাবি একাধিক দেশের দাবির সঙ্গে ওভারল্যাপ করে।
![]()
২০২৩ সালে উভয় পক্ষ আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আচরণবিধি চূড়ান্ত করার বিষয়ে সম্মত হয়।
ফিলিপাইন আগামী বছর আসিয়ানের চেয়ার হবে, এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেসা লাজারো সম্প্রতি বলেছেন, প্রয়োজন হলে সাপ্তাহিক বৈঠক করেও আচরণবিধি চূড়ান্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হবে।
হ্যাশট্যাগ: চীন–ফিলিপাইন সম্পর্ক দক্ষিণ_চীন_সাগর কূটনীতি আসিয়ান মারকোস
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















