সুদানের উত্তর দারফুরের এল ফাশেরে বেসামরিক মানুষের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, পরিকল্পিত যৌন সহিংসতা ও ভীতির মাধ্যমে এলাকা দখলের অভিযোগে দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। শুক্রবার ঘোষিত এই নিষেধাজ্ঞায় সম্পদ জব্দ ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় যাঁরা
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানায়, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনীর উপপ্রধান আবদুল রহিম হামদান দাগালো। তিনি বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি হেমেদতি নামে পরিচিত, তাঁর ভাই। এ ছাড়া আরও তিনজন কমান্ডার রয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে এল ফাশেরে সহিংসতায় জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
বেসামরিকদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ কৌশল
যুক্তরাজ্যের ভাষ্য অনুযায়ী, এল ফাশেরে দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনীর হামলা ছিল পরিকল্পিত। লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। স্যাটেলাইট চিত্রে গণকবর, পোড়া মরদেহ এবং ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।
জবাবদিহির বার্তা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হলো—নৃশংসতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। তাঁর ভাষায়, গণহত্যা, অনাহারে ঠেলে দেওয়া এবং যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের পরিকল্পিত ব্যবহার—এসব অপরাধ কোনোভাবেই শাস্তির বাইরে থাকবে না।

মানবিক সহায়তা বাড়াল ব্রিটেন
নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সুদানের জন্য অতিরিক্ত জরুরি মানবিক সহায়তা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। নতুন করে সহায়তার পরিমাণ একুশ মিলিয়ন পাউন্ড, যা এ বছরে ব্রিটিশ সহায়তার মোট অঙ্ককে একশ ছেচল্লিশ মিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত করেছে। এই অর্থ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা, নারী ও শিশুদের সুরক্ষা, হাসপাতাল সহায়তা এবং বিচ্ছিন্ন পরিবার পুনর্মিলনে ব্যয় হবে। ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মতে, এতে প্রায় এক লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষ উপকৃত হবে।
আরও পদক্ষেপের ইঙ্গিত
যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধে সব পক্ষের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে এবং মানবিক কর্মীদের নির্বিঘ্ন প্রবেশ নিশ্চিত করতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনে আরও নিষেধাজ্ঞা বিবেচনায় আছে বলেও সতর্ক করেছে লন্ডন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিবদ্ধকরণ ও আন্তর্জাতিক জবাবদিহি ব্যবস্থায় কারিগরি সহায়তাও দিচ্ছে ব্রিটেন।
বিশ্বের ভয়াবহ মানবিক সংকট
দুই হাজার তেইশ সালের এপ্রিলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনী ও সুদানি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর দেশটি ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। যুক্তরাজ্যের হিসাবে, সহায়তার প্রয়োজন প্রায় তিন কোটি মানুষের, বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক কোটির বেশি মানুষ, আর প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে লাখো শরণার্থী।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















