উত্তর-পশ্চিম কানাডার বিশাল তুন্দ্রায় একসময় যে হীরাখনি বুম উন্নয়ন আর কর্মসংস্থানের নতুন ইতিহাস লিখেছিল, সেই যুগ শেষের পথে। একের পর এক খনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আদিবাসী শ্রমিকদের জীবনে নেমে এসেছে গভীর অনিশ্চয়তা, আর পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি দাঁড়িয়েছে রূপান্তরের দোরগোড়ায়।
হীরাবুমের উত্থান ও পতন
বিশ শতকের শুরুতে সোনার খনি ঘিরে ইয়েলোনাইফ শহরের উত্থান হয়েছিল। একশ বছর পর নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিল হীরা আবিষ্কার। কানাডার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল দ্রুত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হীরা রপ্তানিকারক হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রাকৃতিক হীরার চাহিদা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ল্যাব-তৈরি হীরার সস্তা ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প পুরো বাজারকে বদলে দিয়েছে। তার ওপর ভারতের ওপর আরোপিত মার্কিন শুল্ক প্রক্রিয়াজাত হীরার দাম বাড়িয়ে পুরো শিল্পকে আরও দুর্বল করেছে।
ধস নামছে চাকরির বাজারে
রিও টিন্টোর মালিকানাধীন ডায়াভিক খনি আগামী মার্চেই বন্ধ হচ্ছে। এর পর একে একে তিনটি বড় খনি দশকের শেষ নাগাদ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। আদিবাসী শ্রমিকেরা, যারা এই শিল্পের মেরুদণ্ড ছিল, হঠাৎ ছাঁটাইয়ের শিকার হচ্ছেন। একাটি খনিতে কাজ করা জর্জ বেটসিনা জানান, বিশ বছরের বেশি সময় কাটানোর পর একদিনই তাকে জানানো হয় যে তার চাকরি শেষ। একসময় যেখানে এক হাজারের বেশি শ্রমিক ছিল, সেখানে এখন কয়েকশ’ মানুষ কাজ করছেন।
টারিফের ধাক্কায় টালমাটাল কোম্পানি
ভারতকে লক্ষ্য করে আরোপিত পঞ্চাশ শতাংশ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া হীরা অনেক বেশি দামি হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি বার্গান্ডি ডায়মন্ড মাইনস ক্ষতির মুখে পড়ে লেনদেন স্থগিত করেছে এবং কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। এসব সংকট পুরো অঞ্চলে হীরাখনির ভবিষ্যৎকে আরও ত্বরান্বিতভাবে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের দুশ্চিন্তা
হীরাখনি তিনটি একসময় তিন হাজারের বেশি আদিবাসীকে সরাসরি কর্মসংস্থান দিয়েছিল। এখন খনি বন্ধের পর নতুন পথ খোঁজাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় নেতারা বলছেন, নতুন বড় প্রকল্প না এলে বহু মানুষ কাজ হারিয়ে বসে থাকবে, আর তা পুরো সম্প্রদায়ের জন্য ভয়াবহ হবে।
বিকল্প খনিজ অনুসন্ধান ও নতুন আশা
সমালোচনার মুখে হলেও বিরল ধাতু ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজের অনুসন্ধানে কানাডা নতুনভাবে বিনিয়োগ করছে। এসব খনিজ আধুনিক প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রতিরক্ষা শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রও সাপ্লাই নিরাপদ করতে কানাডায় একটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। তবে পরিবেশগত ঝুঁকি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির কারণে এগুলো দ্রুত হীরাশিল্পের শূন্যতা পূরণ করতে পারবে না।
ডায়াভিক খনির কর্মীরা পুনঃপ্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছেন। মেলানি রাবেস্কা জানান, খনি তাকে শুধু চাকরি নয়, জীবনও বদলে দিয়েছিল। খনিতে কাজ করেই তিনি নেশা ছাড়তে পেরেছিলেন, খুঁজে পেয়েছিলেন পরিবার। এখন তিনি বড় যানবাহন চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করার স্বপ্ন দেখছেন। তবু খনির বৈচিত্র্যময় ও পরিবারসুলভ কর্মপরিবেশকে ছেড়ে যেতে তার কষ্ট হচ্ছে।
হীরার ঝিলিক কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম কানাডা এক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। নতুন খনিজ অনুসন্ধান, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আর্কটিক প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলো হয়তো ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। তবে হীরাখনির যুগ শেষ হওয়ায় যে বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ সহজ নয়।
#হীরাখনি_সংকট #কানাডা_উত্তরপশ্চিম #আদিবাসী_শ্রমিক #খনিশিল্প_ধস #ল্যাবতৈরি_হীরা #অর্থনীতি_সংকট #নতুন_খনিজ #উত্তর_কানাডা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















