নয়াদিল্লি থেকে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উষ্ণ করার স্পষ্ট বার্তা এসেছে ভিসা নীতির সাম্প্রতিক পরিবর্তনে। দীর্ঘদিনের জটিলতা কাটিয়ে চীনা পেশাজীবীদের জন্য ব্যবসায়িক ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে ভারত সরকার। লক্ষ্য একদিকে শিল্প উৎপাদনে গতি আনা, অন্যদিকে ভারত–চীন সম্পর্কের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ভাঙা। নীতিনির্ধারকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ভারত–চীন ভিসা নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
ভিসা জট কাটায় শিল্পখাতে স্বস্তি
২০২০ সালে সীমান্ত সংঘাতের পর চীনা নাগরিকদের সফরের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছিল ভারত। বিশেষ করে ব্যবসায়িক ভিসায় বাড়তি প্রশাসনিক যাচাইয়ের কারণে দক্ষ প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীরা ভারতে আসতে পারছিলেন না। এর প্রভাব পড়ে ইলেকট্রনিকস শিল্প ও সৌরশিল্পে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন, কারখানা সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন পরিকল্পনা বারবার পিছিয়ে যায়। শিল্পসংশ্লিষ্টদের ভাষায়, এই ভিসা জটের কারণে গত কয়েক বছরে বড় ধরনের উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ে ভারতীয় শিল্পখাত।

ভারত–চীন সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন বার্তা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক চীন সফরের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত মিলছিল। দীর্ঘ বিরতির পর সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়। তার ধারাবাহিকতায় এবার ভিসা নীতিতেও শিথিলতা আনা হলো। সরকারের ভেতরে গঠিত উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করা এবং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। সেই সুপারিশের বাস্তব প্রতিফলন হিসেবেই এই সিদ্ধান্তকে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
শিল্পমহলের প্রত্যাশা বাড়ছে
মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিকস ও সৌরশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, দক্ষ চীনা পেশাজীবীরা সহজে এলে উৎপাদন বাড়ানো সহজ হবে। নতুন কারখানা চালু, যন্ত্রপাতি ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের গতি বাড়বে। শিল্পমহলের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু ভারত–চীন বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে নয়, ভারতের সামগ্রিক উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে ভারতের কৌশল
বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতিতে ভারত তার কূটনৈতিক হিসাব নতুন করে সাজাচ্ছে। একদিকে বড় অর্থনীতির সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে চীনের মতো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা জোরদার করা—এই দ্বিমুখী কৌশলের অংশ হিসেবেই ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের ধারণা, এতে বিদেশি বিনিয়োগ পরিবেশ আরও ইতিবাচক হবে এবং অর্থনীতিতে গতি ফিরবে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















